টাকা দিলেই মেলে মাদক
প্রকাশ : 2023-01-17 11:29:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে ৬-৮ বছরের শিশুরা। উদ্দেশ্য মাদকসেবিদের কাছে মাদক এনে দেওয়া। যে বয়সে শিশুদের হাতে থাকার কথা বই, খাতা, কলম, পড়াশুনায় মনোযোগী এবং খেলায় মেতে উঠবে সহপাঠীদের সাথে। ঠিক তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মাদকসেবিদের কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়ার নেশায়। টাকা দিতে চাইলেই এসব শিশুরা এনে দেয় গাঁজা, মদ, হেরোইন সহ নানা ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য। এমন চিত্র দেখা যায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সান্তাহার জংশন স্টেশনের প্লাটফর্ম এলাকায়। স্টেশনের প্লাটফর্ম বা রেলসীমানায় বিভিন্ন ধরনের মাদকের হাতবদল বেড়ে গেছে বলে অনেকের অভিযোগ। এছাড়া রেলসীমানা প্রাচীর সংলগ্ন হরহামেশাই চলছে মাদকসেবন। জানা যায়, স্টেশনের ১ও ২নং প্লাটফর্মের শেষ সীমানায় ও ওভার ব্রীজের উপরে নিমিষেই মাদকের হাতবদল হচ্ছে। এছাড়া সীমানা প্রাচীরের পিছনেও মাদক সেবন তো নিত্য দিনের সঙ্গী। কয়েকজনের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে ২নং প্লাটফর্মে গিয়ে পাওয়া যায় এক শিশুকে। মাদক কোথায় পাওয়া যায় তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠলো টাকা দেন, এনে দিচ্ছি। ১০০ টাকা বের করে দিয়ে অনেক কিছু জানা যায় তার কাছ থেকে। তার ভাষ্য টাকা দিলেই সে এনে দিতে পারবে মাদক। পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো কিছু বের করে প্রমাণ করতে চাচ্ছিলো এতে মাদক আছে। এভাবে এনে দিলে তার কোন লাভ থাকবে কিনা জিজ্ঞেস করলেও কৌশলে সে এড়িয়ে যায়। পরে এনে দিতে বললে দেখা যায় আরেক কাহিনী। কোথায় থেকে আনতে যাচ্ছে দেখতে গেলেই তার মা সহ সে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য রেলওয়ে থানার পুলিশ গত কয়েকদিন আগে প্লাটফর্ম এলাকা থেকে কয়েকজন মাদকব্যবসায়ী ও মাদকসেবিকে ধরেছে। তারপরও থেমে নেই তাদের কর্মকান্ড। সচেতনরা বলছেন, এটা মাদক ব্যবসায়ীদের একটি অভিনব কৌশল। কোন কোন মাদক ব্যবসায়ীরা শিশুদের ব্যবহার করছে আবার কখনও মাদক ব্যবসায়ী অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের ব্যবহার করছে। এছাড়া মাদকব্যবসায়ীরাও থেমে নেই তাদের কর্মকান্ড থেকে। তাদের দাবি, পুলিশের কঠোর নজরদারির অভাবে এসব শিশুরা স্টেশন এলাকায় অনায়াসে মাদক এনে দিচ্ছে সেবনকারীদের হাতে। পাশাপাশি সচেতনতার অভাব তো আছেই। তাই এখনই যদি এসব শিশুদের থামানো না যায়, তাহলে এলাকায় দিন দিন এর বিস্তার লাভ করতে সময় বেশি লাগবে না।
স্টেশন এলাকায় মাদক বেচাকেনা ও শিশুদের দিয়ে মাদক সরবরাহ হয় বিষয়টি জানতে চাইলে সান্তাহার আহ্ধসঢ়;সানুল হক ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই খারাপ খবর। এর জন্য প্রথমত দায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের নজরদারি। তারপর অভিভাবকদের মাদক বেচাকেনার পেশা। পাশাপাশি সমাজ ব্যবস্থা। পথ শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পুলিশকে পথ শিশুদের দিয়ে যারা মাদক সরবরাহ করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্লাটফর্ম থেকে গত কয়েক সপ্তাহে কতোজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মুঠোফোনে বলেন, কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরেছি এবং কয়েকজন মাদকসেবনকারীদের ধরে ভ্রাম্যমান দেওয়া হয়েছে। তাহলে মাদকব্যবসায়ীরা প্লাটফর্মে মাদক দিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,যাদেরকে ধরেছি তারা ট্রেন থেকে নামার পর। তিনি বলেন, প্লাটফর্মে কেউ মাদক ব্যবসা করছে না। তবে দু একটি জায়গায় মাদক সেবন করছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর শিশুরা মাদক দিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মাত্র দুমাস হলো এখানে এসেছি। এ ধরনের কোন ঘটনা থাকলে আমাকে জানাবেন। আমি কঠোর পদক্ষেপ নিবো। মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।