জীববৈচিত্র্য নেই পঞ্চগড়ের নদীগুলোতে

প্রকাশ : 2024-05-06 13:05:46১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

জীববৈচিত্র্য নেই পঞ্চগড়ের নদীগুলোতে

করতোয়ায় পানি নেই, চাওয়াই এ পানি নেই, ভেরসায় পানি নেই, করুন এ পানি নেই, নাগর এ পানি নেই, তালমায় পানি নেই, বেরং এ পানি নেই, তীরনই এ পানি নেই, পাথরাজ নদীতে পানি নেই। সেই নব্বই দশকের আগেই এসব নদীতে পানি শূণ্যতা হয়ে পড়ে। এসব নদীর জলহীন কান্না সবাই ভুলে গেছে।

পঞ্চগড়ের এসব নদীতে স্বাধীনতার পরবর্তীতে থৈ থৈ পানি ছিল। মানুষ সাতাঁরে পার হতো। শুষ্ক মৌসুমেও ছিল হাটু গলা পর্যন্ত পানির স্তর। পঞ্চগড়ের সব নদী ভারত থেকে উৎপত্তি। কিন্তু এখন উজান শূণ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় চার দশক ধরে নদীগুলো পানি শূণ্যতার কারণে নব্যতা হারিয়ে এখন বালুময় মরুভূমি হয়ে চোখ রাঙাচ্ছে প্রকৃতিতে। বিপন্ন হয়ে গেছে জীব বৈচিত্র্য। ধূসর হয়ে গেছে চারিদিক। প্রাণহীন মরুতায় রুপ নিয়েছে পরিবেশ। ভারতের নানা এলাকা থেকে বয়ে এসেছে এসব নদী।

নদীর রুপ বিরুপে পরিনত হয়েছে। উপড়ন্ত এসকল নদীতে চাষাবাদ হচ্ছে। জলীয় বাস্প ধরে রাখতে নদী খননে নানা কর্মসূচি গ্রহন করলেও তা এখনো চাহিদা পূরণে সর্ম্পূন ব্যার্থ।আটোয়ারী উপজেলার নাগর ,সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের করুম, অমরখানা ইউনিয়নের করুম ,চাকলাহাট ইউনিয়নের পাংঘা ও যমুনা দেবীগঞ্জ উপজেলার বুড়ি তিস্তা নদী গুলো সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় পানি নাই নাই। এসব সীমান্ত নদী পাশে ভারত ভূখন্ড।

তেতুঁলিয়া উপজেলার ডাকবাংলো ও থানার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীরটির ও একই অবস্থা। সারা বছর ধরেই শ্রমিকরা পাথর উত্তোলন করেন। বর্ষায় কিছু সময় পানির স্রোত থাকলেও এরপর পানি শূণ্য হয়ে পড়ে। সবনদীর একই চরিত্র বহন করে আসছে। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন র্বোড সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩৯ টি নদী রয়েছে। যার সবকটি পানি শূণ্য হয়ে আছে। এ সব নদীর অধিকাংশ নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু উজানের পানি না আসায় সব নদীর তীর রক্ষা বাঁধ তেমন একটা কাজে আসছে না। কিছু কিছু এলাকায় পার রক্ষায় জিও ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার সহ আরো ৭টি নদী খনন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খননের পরিমান ১৭৭ কিলোমিটার। তবে নদীর পারে রাখা বালু প্রকৃতির নিয়মে সেই খনন করা উত্তোলিত বালু আবার নদীর গর্ভে চলে যায়। ফলে সুফল থেকে বঞ্চিত প্রকৃতি ও মানুষ।

বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ঘাটের পাশে করতোয়া নদীতে চাষ হয়ে আসছে বোরো ধান। ওই এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা জানান, এখানে তো প্রতি বছর বোরো ধানচাষ হয়ে আসছে। পানির উচ্চ সর্বোচ্চ তিন চার ফিট। তবে সব জায়গায় নয়। তার পশ্চিম-দক্ষিণে রয়েছে বারুণি বাঘডোকরা ঘাট। কালিয়াগঞ্জ বাজারের ওপারে রয়েছে আউলিয়া ঘাট। এসব ঘাটের আশপাশে বোরো চাষ করা হয়।

এদিকে সড়ক ও জনপথ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়ক ও মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ঘর-বাড়ি হাট বাজার সহ নানা অবকাঠামো। ফলে সড়কের আশপাশে নয়নজলি-জলাশয় ও পুকুর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক আগেই।নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে সবাই এসব জায়ঘা ভরাট করে ফেলেছে। নেই চলাচলের জন্য কালভার্ট-ব্রীজ। নদী ,জলাশয়, পুকুর ও জলাধারগুলি হারিয়ে যাওয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে গেছে। জলীয় বাষ্প ও আকাশের সংষ্পর্শ তৈরি না হওয়ায় জলবায়ূতে মারাতœক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। একদিকে বনায়ন উজার অন্যদিকে পুকুর-ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনজীবনে তার বিরুপপ্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশ্লেষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড পঞ্চগড় সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে করেতায়া নদী খনন করা হয়েছে। যার ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে করতোয়া ৭৮ কিলোমিটার।

তবে আরো নদী খনন করা হয়েছে যেমন: ভেরসা ১০ কিলোমিটার, চাওয়াই ৩০ কিলোমিটার বুড়ি তিস্তা ২০ কিলোমিটার পাথরাজ ৩০ কিলোমিটার রসেয়া প্রায় ৭ কিলোমিটার তীরনই ৭ দশমিক ৬০০ মিটার ও বড়সিঙ্গিয়িা ৬ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে।জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী,খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় প্রথম নদী নখনন করা হয়।তবে এসব নদীর মোট ব্যয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। তথ্য জানায় করতোয়া সহ এসব নদী খননে ব্যয় হয়েছে
প্রায় ১২০ কোটি টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড পঞ্চগড় এর উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম মনে করেন ‘অন্যান্য এলাকায় যে ভাবে নদী খনন করে বালু অন্যাত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ‘ঠিক সেভাবেই বালু সরিয়ে নিতে হবে। তবে এর বাজেট বিশাল। বালু সরাতে না পারলে এই প্রকল্প কাজে আসছে না। তবে জানা যায় পঞ্চগড় জেলায় খনন করা যায়নি ৩১টি নদী।

 

সান