জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল
প্রকাশ : 2024-03-03 13:58:35১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বহুদিন পর জায়েদ খান মুক্তি দিচ্ছেন সিনেমা ‘সোনার চর’। এমন সুসময়ের ভেতরে অনেকটা আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। কারণ, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে নাম কাটা পড়েছে আলোচিত এই নেতার। সমিতির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, জায়েদ খান হারালেন ভোটাধিকারও।
আগেই গুঞ্জন ছিলো, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সদস্যপদ হারাচ্ছেন জায়েদ খান। তবে সেটি যে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য, নির্মাতা-প্রযোজক-সাংবাদিকদের বনভোজনে ডেকে নিয়ে ঘটা করে ঘোষণা দেওয়া হবে, এমনটা আশা করেননি সম্ভবত কেউ।
শনিবার (২ মার্চ) ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার একটি শুটিং হাউজে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বার্ষিক বনভোজন থেকে খবরটি নিশ্চিত হয়। সেখানে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিলের খবরটি জানিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিষদ নেতা খোরশেদ আলম খসরু (শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে এবার তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন)।
খসরু জানান, ‘আজকের বনভোজনের শুরুতে শিল্পী সমিতির দ্বি-সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক নিপুণের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জায়েদ খানের সদস্যপদ খারিজ করার বিষয়টি জানানো হলো।’
সবার উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জানান, সমিতির খাতা থেকে জায়েদ খানের ভোটাধিকার ও সদস্যপদ বাতিল করা হলো। নিপুণের ঘোষণাপত্রে জানানো হয়, জায়েদ খান ব্যক্তিগত আক্রোশে ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ সাধারণ সম্পাদকের নামে মিথ্যা, মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ কল্পকাহিনি সাংবাদিক সম্মেলন, ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় গত ০২/০৪/২০২৩ তারিখের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে বনভোজনে তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হয়েও দাওয়াত না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন,‘আমি তিন তিনবার এই সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অথচ পিকনিকে আমাকে কোনও কার্ড পাঠানো হয়নি। কেউ ফোন দিয়েও এই বিষয়ে বলেনি। বিষয়টি সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে বর্তমান কমিটি।’ তবে তিনি তার সদস্যপদ বাতিল বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
এরমধ্যেই শিল্পী সমিতির নির্বাচনী প্যানেল নিয়ে ঢালিউডে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এমন পরিস্থিতিতে, নির্বাচনমুখি নেতা জায়েদ খানের বিপক্ষে সাংগঠনিক এই সিদ্ধান্তটি বিস্ময়কর না হলেও বিব্রতকর বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, গত নির্বাচনের পর টানা প্রায় এক বছর নিপুণ-জায়েদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়েই পার করেছে সমিতি। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। অবশেষে গেল এক বছর অনেকটাই থিতু হয়েছে সমিতি। যদিও সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ছিলেন অনেকটাই নির্বিকার।
নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কেন এসেছে সেটা তো শিশুও বলতে পারবে। একজন অবৈধ দখলদার যা চাইবে তাই করতে পারে। কারণ, তার তো ভোটারদের কাছে জবাবদিহি নেই। ভোটে তো আমিই জয়লাভ করেছিলাম। অথচ দখল করলো আরেকজন (নিপুণ)। গত এক বছর তো এটা নিয়ে আমি ভাবিইনি। ব্যস্ত আছি নিজের শুটিং নিয়ে। ঈদে সিনেমা আসছে। সেদিকে এখন আমার মূল নজর। অথচ এরমধ্যে আবারও অবৈধ ব্যক্তি তার অবৈধ ক্ষমতা দেখালো। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এই সমিতির। এটা আমার প্রাণের সংগঠন। এই সংগঠন ও সংবিধানের প্রতিটি লাইন আমার মুখস্ত। আমি একজন সাংগঠনিক ছেলে। আমি জানি, কোনটা সংগঠন বিরোধী আর কোনটা ব্যক্তি বিরোধী। শুরু থেকেই আমার অভিযোগ একজন ব্যক্তি ও তার অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে। কোনও ব্যক্তি যদি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে কি কেউ কথা বলতে পারবে না? ব্যক্তির দায় তো সংগঠনের নয়। আমি তো সংগঠনের বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলিনি। তাহলে কেন সংগঠনবিরোধী বক্তব্যের দায় তুলে আমার সদস্যপদ বাতিল ঘোষণা করলো? আর কাউকে বাতিল করতে হলে তো তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে অন্তত তিনবার। আমি একটি চিঠি পেয়েছি। সেটার জবাবও দিয়েছি। আর কোনও চিঠি আসেনি। আসলে এরা (নিপুণ আক্তার) তো সংগঠনের সংবিধানই পড়েনি। জানে না, সংগঠনের বিধি-বিধান। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বনভোজনে গিয়ে এজিএম ডেকে আমাকে বাতিল করছে! অবৈধদের আসলে বৈধ বোধ থাকে না। আবারও প্রমাণ হলো।’
জায়েদ খান জানান, আসন্ন নির্বাচনে যেন তিনি না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিপুণ আক্তার। তবে তিনি এর জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
সা/ই