জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করতে ৩৯ বিশিষ্টজনের আহ্বান

প্রকাশ : 2022-09-06 20:16:44১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করতে ৩৯ বিশিষ্টজনের আহ্বান

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৩৯ বিশিষ্টজন। মঙ্গলবার ৬ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান। তারা ‘সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যা দেন বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে করি যে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। আমরা আবারও একটি ব্যর্থ নির্বাচনের কবলে পড়বো, যা জাতি হিসেবে আমাদের চরম সংকটের দিকে ধাবিত করবে।

‘প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে ‘ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল’ [ভিভিপিএটি] নেই, ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে, তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনর্গণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশনের গঠন করা কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে সই করেননি’— বলা হয় বিবৃতিতে।

প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বায়োমেট্রিকভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তাদের আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেওয়ার তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। যে কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়।

এছাড়া নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারে। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত দুবার ফলাফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যা কেবল ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই সম্ভব। এছাড়া অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ইভিএম ব্যবহার করার কারণে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

৩৯ বিশিষ্টজন বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি কমিশনের ডাকা সংলাপে যে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছে, তার মধ্যে ১৪টি দল এটি নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। এর মধ্যে ৯টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ যে ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপের সময়ে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। তাই ইভিএমের ওপর অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের এ অবিশ্বাস আগামী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার পথে একটি বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

‘১৫০টি ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নতুন মেশিন কেনায় অন্তত অর্ধ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি’—যুক্ত করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে সই করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান ও আকবর আলি খান, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, আইনজীবী শাহদীন মালিক, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক কামাল আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সাইফুর রহমান, আর্টিকেল নাইন্টিনের আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল প্রমুখ।