জাতির পিতা সোনার মানুষ চেয়েছিলেন, এখন সেই সোনার মানুষ তৈরি হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : 2022-02-24 14:15:49১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। সেই সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার টার্গেট ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসা। এর পরে আমরা দিয়েছি ২০৪১ সাল, নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধাপে ধাপে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হবো। সেটা করা খুব কঠিন কাজ না, আমরা করতে পারবো। জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে। সেটাই সব থেকে বড় কথা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর প্রকাশ উৎসব, বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের চূড়ান্ত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি জানি না পৃথিবীতে আর কোনো নেতা আছে কি না যার নামে এত গান, এত কবিতা, এত রচনা হয়েছে। এসব রচনা লোকসাহিত্য থেকে শুরু করে বিজ্ঞান—সর্বক্ষেত্রে বিস্তৃত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদানটাকে মানুষ এত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে, আমি মনে করি, শুধু গ্রহণ করলেই হবে না, আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই আদর্শে আদর্শবান হয়ে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি। সামনের দিনে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি, ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ সরকার গঠন করে এই ২০২২—এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। একদিকে যেমন দারিদ্র্যের হার আমরা কমাতে পেরেছি, স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, সেই সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সেখানেও আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি।
আজ মানুষ যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বটা মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বিশ্বকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর অন্ধকারে পড়ে থাকছে না। বাংলাদেশের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে পারছে, তাদের জ্ঞানের আলো উদ্ভাসিত হচ্ছে, বলেন তিনি।
৭৫-এর পর জাতির পিতার নামটা মুছেই ফেলা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলন বা স্বাধীনতার সংগ্রামে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের যে ইতিহাস, সবই কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল প্রায় ২১ বছর। আমাদের কয়েকটি প্রজন্ম আছে যারা হয়তো কিছু জানেই না। আজ এই প্রকাশনার মাধ্যমে অনেক কিছু আজকের প্রজন্ম জানতে পারবে। এটাই হলো সব থেকে বড় কথা। বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি দেওয়া হলো, আমাদের দেশে শিক্ষা-গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটা আমাদের শিখিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি শিক্ষাকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনী ইশতেহার যখন ঘোষণা দেন এবং নির্বাচনে প্রাক্কালে যে ভাষণ দেন। সে ভাষণেও তিনি বলেছেন, শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ। দেশের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশ গড়ার কাজে নিবেদিত হয় এবং দেশে অবদান রাখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমরা একটি ট্রাস্ট গঠন করেছি। ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটিসহ যা অর্থ পেয়েছিলাম সে সব দিয়ে আমরা একটি ট্রাস্ট গঠন করি। এই ট্রাস্ট ফান্ডের সবচেয়ে বড় কাজ ছিল আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য মানুষকেও আমরা সহযোগিতা করে থাকি।
তিনি বলেন, আমি যখন সরকার গঠন করলাম। আমরা বাজেটের থেকে টাকা দিয়ে বৃত্তি দিচ্ছি এ কথা সত্য। তার বাইরেও আমি সব সময় মনে করেছি উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আমাদের নেওয়া উচিত। উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সরকার গঠন করেন তখনো সবাইকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে এবং মানুষকে আলাদাভাবে টাকা দিতেন এবং বিদেশেও পাঠাতেন। সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পরবর্তীতে। বঙ্গবন্ধুর নামে যে স্কলারশিপ চালু ছিল সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা। আমি চিন্তা করলাম শুধু সরকারি পয়সা না, আমাদের একটা আলাদা ফান্ড করতে হবে যে ফান্ডের মাধ্যমে আমরা মেধাবী এবং উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় বা গবেষণা করতে চায় তাদের আমরা বিশেষভাবে সহযোগিতা করবো। তাদের মেধা যেন বিকাশের সুযোগ পায়, আমাদের দেশ গড়ার কাজে ভবিষ্যতে লাগবে, মানুষের কল্যাণে আসবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড আমরা গঠন করি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনটা যত বেশি জানতে পারবে ততই সবাই এটা উপলব্ধি করতে পারবে—একটি মানুষ তার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন, এই বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য। আজকে বাংলাদেশের মানুষের যে অবস্থা এই অবস্থা কিন্তু ১৩-১৪ বছর আগেও এমন ছিল না। এটা হলো বাস্তবতা। আমরা সেই পরিবর্তনটা আনতে পেরেছি। এটা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের দেশ, যে দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। ২৪টা বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কষ্ট করেছেন। তার সঙ্গে অনেক সাথী অনেক জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, জীবন দিয়ে গেছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। একটাই আদর্শ-লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। শিক্ষায়-জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে, বলেন তিনি।