জনগণের অধিকার ফেরাতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই: বিএনপি
প্রকাশ : 2022-02-26 19:21:08১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দেশে গণতন্ত্র চর্চা ফিরিয়ে এনে সাধারণ মানুষের অধিকার ফেরাতে রাজপথে আন্দোলনের ‘কোনো বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেতাদের দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট দায়ী। দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলায় জনমানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে এই সমাবেশটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পুলিশের অনুরোধে স্থান পরিবর্তন করে বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশে ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরীব আরও গরীব হচ্ছে। দুর্নীতি, সরকারের সিন্ডিকেটের জন্য দাম বাড়ছে। এরা দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল। ২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ে তখন মোটা চাল ১৬ টাকা ছিল আর এখন ৫০ টাকা। কোথায় ১০ টাকার চাল? জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার কুইক রেন্টালে নিজেদের লোককে লুটপাট করতে দেওয়ার জন্য। ব্যাংকগুলোর নাজুক অবস্থা। সরকারের সিন্ডিকেট ব্যাংক লুট করে বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু সরকারের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশকে রক্ষা করতে হলে গায়ের জোরে বসে থাকা সরকারকে বিদায় করতে হবে। এদের বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আন্দোলন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাইকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নিজেদের পকেট ভারি করতে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে সরকার।সরকার কানাডায় বেগম পাড়া বানাচ্ছে। পকেট কেটে টাকা পাচার করছেন। এর বিচার হবে একদিন।’
বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চলমান সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করলেন এটা কার টাকা? জনগণের টাকা দিয়ে এসব করা যাবে না। আপনাদের অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। অবশ্যই তক্তপোষ ছেড়ে যেতে হবে।’
নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটা কথা বলে দেই ভুয়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি৷ করতেও দেবে না। এটা আমার না, দেশের জনগণের কথা।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যারা হালাল ইনকাম করে তারা আর চলতে পারে না। জীবন বিপর্যস্ত। আর সরকারের জ্ঞানবান মন্ত্রীরা বলেন, আকাশ থেকে দেখলে ঢাকাকে লস অ্যাঞ্জেলস মনে হয়। নিচে নেমে টয়লেটে গেলে নাকি মনে হয় সিঙ্গাপুর। আমি জানতে চাই সিঙ্গাপুরে কি টিসিবির গাড়ির পেছনে লম্বা লাইন আছে? সেখানে বউ বাজার, ফকিন্নি বাজার আছে কি না.. যেখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ওঠতে বসতে বিএনপির কথা বলে। সবকিছুতে তারা বিএনপিকে দোষ দেয়। কথায় কথায় বিএনপি, বিএনপি করে। এরা যদি যতবার বিএনপি আর তারেক রহমানের নাম নিচ্ছে ততবার আল্লাহর নাম নিলে হয়তো আওয়ামী লীগের লোকজন বেহেশতেও যেতে পারতেন।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘পথ এখন একটাই অবৈধ, জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে থাকা সরকারকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। বিএনপিই পারবে এটা করতে। যেখানে নিশ্চিত বিজয় সেখানে ভয়ের কিছু নেই। বিএনপি ভয় করে না। আমাদের যেসব ভাই গুম, খুন হয়েছে তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলেও রাজপথে থাকতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সঙ্গে ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। দুর্নীতির সঙ্গে ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। মেগা প্রকল্পের সঙ্গেও ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। কারণ টাকা পাচার করা হচ্ছে। এখনভোট চোরদের ধরতে হবে। তাদের সহযোগীদের ধরতে হবে। যারা আজকে ভোট চোর করছে তাদের ধরতে হবে। কারণ এরা লুটপাট করতে থাকবে৷ দেশের টাকা পাচার করবে।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন। ভোট চোরদের ধরে চুরির মেশিন বাজেয়াপ্ত করতে হবে। শেখ হাসিনার বদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার দিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘২০০৮ সালে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে ক্ষমতায় আসে। পরে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য ভোট ছাড়া ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে জনগণের ট্যাক্সের চাপ বাড়াচ্ছে।’
টুকু বলেন, ‘আমরা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশকে রক্ষা করব। বিএনপি নেতৃত্ব দেবে। রাজপথ ছাড়া পথ নেই। ভোট আর হবে না। আমরা ভোটে নাই। রাজপথ রঞ্জিত করে জনগণের সরকার গঠন করব।’