চিকিৎসায়, সমবেদনায় কোন ফারাক রাখা যাবে না 

প্রকাশ : 2022-02-06 10:11:17১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

চিকিৎসায়, সমবেদনায় কোন ফারাক রাখা যাবে না 

ডা. স্বপন কুমার মন্ডল
----------------------------


বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিপালিত দিবস। প্রতি বৎসর ৪ ফেব্রুযারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনা দিবস পালন করা হয়। এই দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেনষ্ট ক্যান্সার (International Union Against Cancer)-কে সহায়তা করে থাকে । পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। 

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন (BAMOS) এর উদ্যোগে  ৫ম বারের মত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হল—Close the care gap.
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে সাড়ে ১০ লক্ষ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যান্সার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ২২ হাজার (প্রতিদিন ৩৩৪) মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, মারা যান ৯১ হাজার (প্রতিদিন ২৫০)। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার নির্ণয়ের এক বছরের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ রোগী মারা যায়, না হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়।

সারা পৃথিবীতে দেহের যত ক্যান্সার হয় তার ৩-৫% হল মুখের ক্যান্সার, আর ভারত,বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের প্রায় ২৫-৩০ ভাগই হল মুখের ক্যান্সার। 

আমাদের দেশে ১৫০ থেকে ১৬০ টি ক্যান্সার সেন্টার আর প্রতিটি সেন্টারে ২ টি করে রেডিয়েশন মেশিন থাকা দরকার। কিন্তু রয়েছে মাত্র ২০টি সেন্টার,আর রেডিয়েশন মেশিনও আছে ২০টি। 

চিকিৎসা জগতে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম ক্যান্সার। এ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। 

জানুয়ারির ২৬ তারিখে `ব্রিটিশ জার্নাল অব জেনারেল প্র্যাকটিস`-এ ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন এর এক গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে ক্যান্সারের লক্ষণ বুঝতে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। যদিও বলা হয়, এসবের অর্থ ক্যান্সার যে হয়েছে তা নয়। আবার ক্যান্সার হলে এসব নমুনা লক্ষণ আকারে প্রকাশ পেতে থাকে।

 জেনে নিন ক্যান্সারের সম্ভাব্য কিছু লক্ষণের কথা
 ১.অনাকাঙ্ক্ষিত স্থূলতা : হঠাৎ করেই দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া ভালো নয়। ক্যান্সার দেহের সুষ্ঠু বিপাকক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। আবার ডায়াবেটিসের সঙ্গে ওজন হারানোর বিষয়টিও ক্যান্সারের লক্ষণ বলে বিবেচিত হয়। 

২.ত্বকের মোলের আকার পরিবর্তন ঃ ত্বকে ফুসকুরি বা তিল বা ব্রনের মতো নানা জিনিস দেখা দেয়। গাঢ় বাদামি বা কালো কিছুটা বড় আকারের তিলেরসদৃশ্য জিনিসকে বলা হয় মোল। হঠাৎ করেই মোলের আকার বৃদ্ধি পাওয়া বা রং আরো গাঢ় হওয়া বা যেকোনো পরিবর্তনে দ্রুত চিকিৎসক দেখান। এগুলো ত্বকের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তা ছাড়া হলদেটে ত্বক ও চোখ এবং ত্বকের যেকোনো বড় পরিবর্তনে ক্যান্সার ধরা পড়তে পারে।

 ৩.গলায় ব্যথা ঃকিছু খেতে গেলে দেখবেন গলা দিয়ে খাবার নামার সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। সাধারণ গলা ব্যথায় এমন হতেই পারে। কিন্তু এ অবস্থা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে, তবে চিকিৎসকের কাছে যান। এসব গলা, জিহ্বা বা মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে । দীর্ঘকাল হজমে সমস্যা : মাঝে মধ্যে হজমে সমস্যা হয়। কিন্তু বহু দিন ধরে হজমে সমস্যা হলে তা চিন্তার বিষয়। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও বমি ক্যান্সারের লক্ষণের মধ্যে পড়ে। এমনকি সামান্য খাদ্য গ্রহণের পর পেট ভরে গেলেও তা পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ বলে গণ্য হতে পারে। 

৪.তিনদিন বা তার বেশি সময় ধরে কাশি ঃ ঠাণ্ডা-জ্বর ও কাশি সবারই হয়। তবে বহু দিন এসব থাকা এবং কোনো চিকিৎসাতে ভালো না হওয়া ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ বলে গণ্য হতে পারে। কাজেই চিকিৎসককে দেখিয়ে আসুন। প্রতি বছর ১২ কোটির বেশী মানুষের দেহে ক্যান্সার সনাক্ত হয় এবং ৭ কোটির বেশী মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। এর মধ্যে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং তিন ভাগের ১ ভাগ ক্যান্সার প্রথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা সম্ভব। 

প্রতিরোধের উপায় 

• তামাকের ব্যবহার – প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মৃত্যুর ভেতর ১ জনের মৃত্যুর কারন তামাক। তামাকের ব্যাবহার বাদ দেবার মাধ্যমে ( ধুমপান, জর্দা, গুল, খৈনী) আপনি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারেন। 
• স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপন- The World Cancer Research Fund/American Institute for Cancer Research (WCRF/AICR) অনুসারে নিচের পদক্ষেপ গুলি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। ১. শরীরের ওজন কম রাখুন কিন্তু অপুষ্টিতে ভুগবেন না। ২. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। ৩. অতিরিক্ত চিনি, চর্বি অথবা প্রসেস করা খাবার খাবেন না (কোক, পেপসি, এনার্জী ড্রিন্ক, টিনের খাবার)। ৪. বেশী পরিমানে তাজা ফল, সবজি, আশ যুক্ত খাবার খান। ৫. লাল মাংশ ( গরু, খাশি ইত্যাদি) কম খান। ৬. মদ পান করবেন না। ৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে কোন ধরনের ভেষজ ওষুধ বা সম্পূরক খাবার খাবেন না। 
• মদ পান – এটি পৃথিবী ব্যাপি সমস্যার একটি কারন। সম্ভব হলে পরিহার করুন।
• সূর্যের আলো – (প্রধানত শ্বেতাঙ্গদের জন্য) সূর্যের আলোর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ক্যান্সার, চোখের ছানি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে। সম্ভব হলে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যাবহার করুন। 
• ব্যায়াম বা শরীরিক পরিশ্রম করুন – অতিরিক্ত ওজন কিছু ক্যান্সারের ( স্তন, মলাশয়, কিডনী এবং পিত্তথলীর ) সাথে সম্পর্কিত বলে ধারনা করা হয়। ব্যায়াম করুন এবং শরীরের ওজন কম রাখুন। 
• পরিবেশ – আমাদের পরিবেশের কিছু উপাদান ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন অশুদ্ধ পানি, দুষিত বাতাস, রাসায়নিক বর্জ্য , রাসায়নিক খাদ্য উপাদান, রেডিয়েশন। এগুলি থেকে বাচার চেষ্টা করুন।
 • কিছু রোগ ( যেমন হেপাটাইটিস বি, সি ) ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা বা চিকিৎসার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করুন।