চলে গেলেন একাত্তরের কূটনৈতিক যোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ
প্রকাশ : 2022-06-24 10:58:29১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রথম যোগদানকারী কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ গত ২০ জুন ৭৯ বছর বয়সে উত্তরার বাসায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি………রাজিউন)। ১৯৪৪ সালের ১৯ জুন ফেনির নূরপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে পড়া-শোনা করে ফেনী কলেজ থেকে আই এ পাস করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে বিএ অনার্সে ভর্তি হয়। বিএ,এম এ পাশ করে কিছুদিন ফেনী কলেজে অধ্যাপনার করেন । পরে সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস যোগ দেন।
কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট লন্ডনের ট্রাফলগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ইউরোপে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করা বাংলাদেশী কূটনীতিক। সেই সময়ে তাঁর স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিলেন। তাঁর পাকিস্তান হতো উত্তহতোপদত্যাগের ২২ দিন পর ২৩ আগস্ট তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।
১৯৭১ সালে লন্ডনে আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মহিউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়তে এবং লন্ডনে বাসকারী বাঙ্গালীদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনতে জীবনবাজী রেখে বেল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন যান। পতাকা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তখন মহিউদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুর সংবাদ সম্মেলন সফল করতে ভূমিকা রাখেন।
আমরা সিরাপ তিনি রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি জামায়াত জোট সরকার বহু মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের চাকুরিচ্যুত করে। মহিউদ্দিন আহমদও চাকুরিচ্যুত হন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাঁকে চাকুরিতে পূর্ণবহাল সহ পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তিনি অবসর গ্রহন করেন।অবসরে যাওয়ার পরে তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন।
তাঁর সাথে প্রতি বছর বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারন সভায় দেখা হতো।তখন কুশল বিনিময় ও আলাপ হতো। তাঁর উত্তরার বাসায় একদিন শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও শ্রীনগরের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নাসিরুল আমাকে নিয়ে যায়। খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি তাঁকে কূটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখতে অনুরোধ করি।
সর্বশেষ তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশার সুযোগ হয় ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি । নাসিরুল হকের আমন্ত্রণে মহিউদ্দিন আহমদ গাদীঘাট যাবেন- আড়িয়ল বিল দেখবেন। আমার দায়িত্ব পড়ে জীপে করে উত্তরা থেকে গাদীঘাট নিয়ে যাওয়ার। আমি ব্যাংকের ট্রান্সপোর্ট অফিসারকে বলে ল্যান্ডক্রজার প্যারাডো জিপের ব্যবস্থা করি। ড্রাইভার শেখ সাদী তাঁদের উত্তরা থেকে নেয়। সামনের সিটে বসে মহিউদ্দিন বিক্রমপুর ,আডিয়ল বিল ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনেক কিছু জান চান। আমি ও নাসির ভাই সাধ্যমত উত্তর দিতে চেস্টা করি। গাদীঘাট গিয়ে আমরা বিশ্রাম ও ছিট রুটি, হাঁসের মাংস, নানা রকম পিঠা দিয়ে নাস্তা করে আডিয়ল বিলে যাই। বিল দেখে তিনি জানচান বিলে মাছ ছাড়া কী কী ফসল হয়।আমরা সব তথ্য জানাই। বিলের মিস্টি কুমড়ার স্তুপ দেখে তিনি বড় কুমড়া উঠাতে চেস্টা করেন।কুমড়ার স্তুপের সাথে দাঁডিয়ে আমরা ছবি তুলি।বিলের জমিতে কাজ করে ফিরছিল এক কৃষক ।তাঁর সাথে অনেকক্ষন কথা বললেন মহিউদ্দিন সাহেব।তখন আমার বারবার ডাঃ এমএন নন্দীর কথা মনে হচ্ছিল।১৯৯৩ সালে জলপাইগুড়ি থেকে লেখা চিঠিতে ডাঃ নন্দী আমাকে লিখেন” বিক্রমপুরের একজন নৌকার মাঝির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।”
বিল থেকে নাসির ভাইর বাড়ি ফিরার সময় তিনি জানতে চান তাঁর শিক্ষক ফেনী কলেজের অধ্যক্ষ জিএমএ মান্নানের বাড়ি কতদূর। আমি জানাই ৪/৫ কিলোমিটার হবে।তিনি স্যারের বাড়ি দেখতে চান।ছুটলাম বাড়ৈগাও। পিচঢালা পথ। এত উন্নত হয়েছে রাস্তা ঘাট না দেখলে বিশ্বাস হতো না।মান্নান স্যারের বাড়িতে গিয়ে মহিউদ্দিন আহমদের মুখ মন্ডলে আনন্দের ঝিলিক দেখে মনে হলো তিনি কোন তীর্থ কেন্দ্রে পৌঁছেছেন ।ঐ সময়ে জিএমএ মান্নান স্যারের মেঝপুত্র সাজিদ মামুন বাড়িতে ছিলেন।মহিউদ্দিন আহমদকে পেয়ে মামুন এত খুশি হয় যে তা লিখে প্রকাশ করা যায় না।মহিউদ্দিন আহমদ সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে তাঁর শিক্ষকের বাড়ি ঘর দেখেন। মানুম তাঁকে নিয়ে ঢাকার বাসায় বেড়াতে যেতে অনুরোধ করে। যাব যাব করে আর যাওয়া হয়নি।
আমার সর্বশেষ বই বঙ্গবন্ধুঃনেতা ও শাসক বই তাঁকে উপহার দেয়ার জন্য গত ১৯ জুন দেওয়ার জন্য উত্তরা যাই। নাসিরুল হক ভাইকে দুটি বই দিয়ে আসি।একটি বেদু ভাইর জন্য অপরটি মহিউদ্দিন আহমদ এর জন্য। আমার দুঃখ বইটি না দেখেই তিনি চির বিদায় নিলেন।তাঁর আত্নার মাগফিরাত কামনা করি।