চলমান অস্থিরতায় সংকটে বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গন
প্রকাশ : 2024-08-19 15:55:37১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, এরপর গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ। দীর্ঘ এই সময়টায় দেশ একটি অস্থির সময় পার করেছে। রাজনীতি, অর্থনীতিসহ প্রায় সব সেক্টরে দেখা দেয় স্থবিরতা। রাজনৈতিক এই উত্তাপ থেকে বাদ যায়নি দেশের বিনোদন অঙ্গনও। চলমান এই অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়িকভাবে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে ঢালিউড। রীতিমত হুমকির মুখে পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। লোকসানের শঙ্কায় শিগগিরই নতুন ছায়াছবি মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন না প্রযোজক-পরিচালকরা। দেশে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আশাব্যঞ্জক হবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
গত জুলাই, চলতি আগস্ট ও আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তির পরিকল্পনায় থাকা কয়েকটি সিনেমা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। এ তালিকায় রয়েছে এম রাহিম পরিচালিত ‘জংলি' (সিয়াম আহমেদ, শবনম বুবলী, দীঘি), মিঠু খান পরিচালিত ‘নীল চক্র' (আরিফিন শুভ, মন্দিরা চক্রবর্তী), কুসুম সিকদারের ‘শরতের জবা' (ইয়াশ রোহান), রায়হান রাফী পরিচালিত ‘নূর' (আরিফিন শুভ, ঐশী), শোয়াইবুর রহমান পরিচালিত ‘নন্দিনী' (নাজিরা মৌ, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত), আশরাফ শিশিরের ‘৫৭০' (বাপ্পি চৌধুরী), সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন' (পপি, আমিন খান, ইমন), মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘অমানুষ হলো মানুষ' (ডিপজল), মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেনের ‘হৈমন্তীর ইতিকথা'।
গত ঈদুল আজহায় ‘তুফান’সহ পাঁচ সিনেমা মুক্তির প্রায় এক মাস পর সর্বশেষ গত ১২ জুলাই মুক্তি পেয়েছিল শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত ‘আজব কারখানা’। কিন্তু পাঁচ দিন না যেতেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময় পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রেক্ষাগৃহ খুললেও দর্শক উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ একক-প্রেক্ষাগৃহ প্রায় দর্শকশূন্য। মাল্টিপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহে দর্শক উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিকের দিকে না যাওয়া পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের আগ্রহী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল জানান, বেশিরভাগ একক-প্রেক্ষাগৃহে এখন পুরনো সিনেমা চলছে। তার মতে, ‘‘এমনিতেই দেশে একক-প্রেক্ষাগৃহ ধুঁকে ধুঁকে চলছে, তার ওপর এত বড় ধাক্কা। দুই ঈদ ছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময় খরচ ওঠাতেই হিমশিম খেতে হয় প্রেক্ষাগৃহ-মালিকদের।
প্রদর্শক সমিতি সূত্রে জানা যায়, সরকার পতনের পরপরই দেশের তিনটি সিনেপ্লেক্সে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এগুলো হলো রাজশাহী নগরীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের জয় সিলিকন টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্সের একটি শাখা, সিরাজগঞ্জ শহরের রুটস সিনেপ্লেক্স ও নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার আনন্দ সিনেপ্লেক্স। এগুলো আবারও কবে চালু হবে সেই নিশ্চয়তা নেই।
স্টার সিনেপ্লেক্সের বাকি সাতটি শাখা বিভিন্ন শপিংমলের উপরিভাগে অবস্থিত। ফলে সেগুলোর তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (গণমাধ্যম ও বিপণন) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের রাজশাহী শাখা ভাঙচুরের কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতি হলো। পর্দা থেকে শুরু করে স্পিকার, আসন, টিকিট কাউন্টার, কাঁচের দরজা, ফুড কাউন্টারসহ সবকিছু তছনছ করেছে হামলাকারীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর কারফিউ ও অরাজকতার কারণে দুই দফা আমাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলাম। গত ৯ আগস্ট থেকে আমরা আবারও সব চালু করেছি।
তবে গত মাস থেকে টিকিট বিক্রি হ্রাস পেতে শুরু করে। বর্তমানে কেবল ১০-২০ শতাংশ দর্শক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বলা যায়, এখনও মন্দাবস্থা কাটেনি। ‘পরাণ', ‘হাওয়া', ‘সুড়ঙ্গ', ‘প্রিয়তমা'র ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ঈদুল আজহায় ‘তুফান' দেখতে দর্শকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এর দেদার টিকিট বিক্রি হওয়ায় লাভের মুখ দেখে সংশ্লিষ্টদের দারুণ সময় কাটছিল। কিন্তু আন্দোলনের পটভূমিতে দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী হওয়ার অভ্যস্ততায় ছন্দপতন ঘটেছে। এখন দর্শক-খরার কারণে ব্যবসা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ-মালিকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে জানমালের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। সিনেমা তো একটা বিনোদন, মানুষের মনে আনন্দ না থাকলে তারা বিনোদন উপভোগের কথা ভাববে কখন? আশা করি, নতুন সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
প্রদর্শক সমিতির এই নেতার আশা– রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তুফান' যেভাবে দর্শক টেনেছে, এমন ভালো মানের সিনেমা মুক্তি পেলে দর্শক আবারও প্রেক্ষাগৃহমুখী হবে।
একই অভিমত স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের। তিনি বলছেন, নতুন ও ভালো একটি বাংলা সিনেমা যদি আসে, তাহলে আবারও দর্শক ফিরবে। কারণ, বাংলা সিনেমার দর্শক বরাবরই বেশি। এবারের কোরবানি ঈদেও আমরা এমনটি লক্ষ্য করেছি। তখন প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর আগ পর্যন্ত দর্শক উপস্থিতি ভালো ছিল। সব মিলিয়ে দারুণ ব্যবসা হচ্ছিল আমাদের।
প্রদর্শকরা মনে করছেন, ঢালিউড তারকা শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’ হতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত চলচ্চিত্র। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী সেপ্টেম্বরে এটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। আগামী ২৯ আগস্ট সেই ঘোষণা আসতে পারে। তেমনটাই জানালেন এর পরিচালক অনন্য মামুন। তার আশা, দেশের সবশ্রেণির মানুষ ভাবছে, দুঃশাসনের বেড়াজাল ভেঙে নতুন দিন এসেছে। তারা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করে এই আনন্দ উদযাপন করতে পারে। আর দর্শকদের সুবিধার্থে নতুন সরকার দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোর সংস্কারে ভূমিকা রাখবে আশা করি।
বাংলাদেশে নাটক, ওটিটি ও সংগীতের মতো বিনোদনমূলক কন্টেন্ট উপভোগের জন্য দর্শক-শ্রোতারা এখন পুরোপুরি ইন্টারনেটনির্ভর বলা যায়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে টানা পাঁচ দিন দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা এবং পরে আরও কয়েকদিন পুরোদমে (মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড) চালু না হওয়ায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি, বঙ্গ বিডি, বিঞ্জ, আই স্ক্রিন, দীপ্ত প্লে, বায়োস্কোপ, সিনেম্যাটিক, বাংলাফ্লিক্স, টফি, টেলিফ্লিক্স এবং সিনেস্পট ছাড়াও বাংলাদেশে দেখা যায় বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, হইচই, আড্ডা টাইমস, ডিজনি প্লাস হটস্টার প্রভৃতি। এটি পেইড সাবস্ক্রিপশন-নির্ভর ব্যবসা। এতে নতুন নতুন কনটেন্ট থাকলে প্রতিদিন সাবস্ক্রাইবার বাড়ে। দুই মাস ধরে নতুন কন্টেন্ট না দিতে পারায় পুরনো সাবস্ক্রাইবার ফেরানো ও নতুনদের যুক্ত করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কর্মকর্তারা। নতুন সাবস্ক্রাইবার না পাওয়ার শঙ্কা ও সাবস্ক্রাইবার কমে যাওয়া নিয়েও শঙ্কিত তারা।
চরকি গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রেজাউর রহমান পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘থার্টিসিক্স টোয়েন্টিফোর থার্টিসিক্স' (দীঘি, সৈয়দ জামান শাওন, কারিনা কায়সার) মুক্তির পরিকল্পনা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোদমে প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের ডামাডোলে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় সেটি থমকে গেছে।
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেদওয়ান রনি বলেন, ওটিটিতে প্রতিটি কনটেন্ট মুক্তি দেওয়ার আগে বেশ কিছু পূর্বপরিকল্পনা ও বিপণন কৌশল থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক-দুই মাস প্রচারণা চালাতে হয়। সেক্ষেত্রে কনটেন্টের প্রচারণা শুরু করেও সেটি মুক্তি দিতে না পারা আমাদের জন্য বড় একটি ক্ষতি। আমরা প্রতি মাসে একটি করে কনটেন্ট মুক্তি দিয়ে থাকি, কিন্তু জুলাইতে পারিনি। আগস্টে এসেও পারছি না। দুই মাস কনটেন্ট মুক্তি দিতে না পারায় ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে, এটি কাটিয়ে ওঠা কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে।
হইচই বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাকিব আর খান জানান, তাদের প্ল্যাটফর্মে গত ৮ আগস্ট অনম বিশ্বাস পরিচালিত ‘রঙিলা কিতাব' (পরীমণি) সিরিজটি মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। এছাড়া আশফাক নিপুনের ‘জিম্মি' (জয়া আহসান), ভিকি জাহেদের ‘মিথ্যাবাদী' (মেহজাবীন চৌধুরী) ও অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া' (মোশাররফ করিম) সিরিজ তিনটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল এই আগস্টেই। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেসব স্থগিত করতে হয়েছে। তারকা অভিনয়শিল্পীদের শিডিউল বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে সব পরিচালককেই।
সাকিব আর খান বলেন, আমাদের যেসব সিরিজের কাজ থমকে গেছে সেগুলো আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। গ্রাহকদের কথা ভেবে দেড় বছর আগেই কন্টেন্ট চূড়ান্ত করে ফেলি আমরা। যেমন গত জুনে আমরা নির্ধারণ করেছিলাম ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত কী কী কন্টেন্ট মুক্তি দেবো। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি এলো যে, সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও পরিস্থিতি সেভাবে স্বাভাবিক হয়নি। আপাতত পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। এরপর নতুনভাবে প্রচারণার কাজ শুরু করবো।
রেদওয়ান রনি মনে করেন, মানুষের বর্তমান মন-মানসিকতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। তিনি বলেন, কনটেন্টে আমরা আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে মানুষ যত জলদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তত আমাদের জন্য ভালো হবে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দীপ্ত প্লে'র ওয়েব ফিল্ম ‘ত্রিভুজ' (শাহরিয়ার নাজিম জয়, আনিকা কবির শখ, সোহেল মণ্ডল) এই আগস্টে মুক্তির কথা থাকলেও পিছিয়েছে। এছাড়া গত জুলাইয়ে মুক্তির পরিকল্পনায় থাকা ‘হৃদমাঝারে পার্ট-থ্রি' (শ্যামল মওলা, নাজিয়া হক অর্ষা, আইশা খান) ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে ১৬ আগস্ট। ভিকি জাহেদ পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘একটি খোলা জানালা' (তাসনিয়া ফারিণ, সালহা খানম নাদিয়া) গত ১৮ জুলাই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ-এ মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পিছিয়ে গেছে।
চরকির সিইও বললেন, আমাদের কনটেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকরা দেখেন। আমাদের সাবস্ক্রাইবাররা ৩১টি মুদ্রায় সাবস্ক্রিপশনের মূল্য পরিশোধ করেন। ফলে ছোট আকারে হলেও বৈদেশিক রিজার্ভে সেটি জমা হয়। সরকার যদি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে বৈদেশিক রিজার্ভে বড় একটি ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। বর্তমান সরকার এদিকে নজর দেবেন আশা করি। নতুন সরকারের সুবাদে প্রতিটি খাতে পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে। আমাদের ওটিটি অপারেটরদের বসা প্রয়োজন। যদি সবাই একসঙ্গে বসে একটি নীতিমালা তৈরি করে সরকারকে বোঝানো যায় তাহলে আমাদের পুরো ওটিটি ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে এবং আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
ওটিটির মতোই ইউটিউব-ফেসবুককেন্দ্রিক নাটকের ব্যবসা থমকে গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকে। এরমধ্যে দেশের বাইরে থেকে বিপুল অর্থ আসে। ইউটিউবে পূর্ণ নাটক এবং ফেসবুকে নাটকের অংশবিশেষ ক্লিপ হিসেবে ছাড়া হয়। নতুন নাটকের মুক্তি আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মাসে কর্মীদের বেতনসহ অনেক খরচ।
সিএমভি বড় বাজেটে নির্মিত রুবেল হাসানের ‘অবুঝ পাখি' (ইয়াশ রোহান, নাজনীন নাহার নীহা) ও ইমরোজ শাওন পরিচালিত ‘কাপল অব দ্য ক্যাম্পাস' (ফারহান আহমেদ জোভান, তানজিন তিশা) নাটক দুটির মুক্তি স্থগিত রেখেছে।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সাহেদ আলী পাপ্পু ডয়চে ভেলেকে বলেন, নতুন কনটেন্ট মুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারায় ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে স্বাভাবিক সময়ের মতো সাড়া কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর জেরে স্পন্সরদের টার্গেট পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের অনেক পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। শুটিংয়ে বের হওয়া নিরাপদ বোধ করছেন না কেউই। সবকিছু স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।''
নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমাওয়ালা থেকে ‘ম্যাজিক মোমেন্ট', নির্মাতা শাহিন কবির টুটুলের গোল্লাছুট থেকে ‘কিস্তির ছাড়' (নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি) ও ‘যৌতুক' (জাহের আলভী, অহনা) নাটকের মুক্তি স্থগিত রয়েছে।
ছোট পর্দার অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব জানালেন, প্রায় এক মাস ধরে তার শুটিং বন্ধ। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই শুটিং করেছেন এই তরুণ। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে ভাবলে অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়। এখন মানুষ অনলাইনে রাজনৈতিক কনটেন্ট বেশি দেখছেন। আমরা যে ধরনের গল্প বলতে চাই বা যে ধরনের গল্প বানাবো সেসব দেখার জন্য মানুষের মনকে স্থির হতে হবে এবং মন-মানসিকতা থাকতে হবে। এখনই বলা মুশকিল কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে।
শুধু নাটক নয়, সিনেমা ও গান মিলিয়ে জি-সিরিজের কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। তাদের মতে, দেশের বর্তমান সংকটময় সময় বিনোদন উপভোগের উপযোগী নয়। এ কারণে গান-বাজনাও থেমে আছে।
কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা বলেন, এক মাস ধরে আমার নতুন কোনও গানের রেকর্ডিং হয়নি। কনসার্ট-করপোরেট শো হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই একটি শোতে গেয়েছি। এরপর ঢাকায় ২৩ জুলাই, ২৬ জুলাই ও ২৯ জুলাইয়ের পূর্বনির্ধারিত তিনটি শো বাতিল হয়েছে। সবার মতো আমরা গানের মানুষরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। প্রত্যাশা করছি— অস্থিরতা কেটে যাক, ভালো কিছু হোক।
এদিকে নতুন সরকার গঠনের পর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলোতে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী এখনও শুরু হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন তার নাম ঘোষণার পর মঞ্চনাটক স্বাভাবিক প্রদর্শনীতে ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছেন নাট্যাঙ্গনের কলাকুশলীরা।
সূত্র: ডয়চে ভেলে