গীতিকবি রাধারমণ দত্তের প্রয়াণ দিবস

প্রকাশ : 2021-11-10 10:40:23১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গীতিকবি রাধারমণ দত্তের প্রয়াণ দিবস

‘কারে দেখাব মনের দুঃখ গো
আমি বুক চিরিয়া
অন্তরে তুষেরই অনল
জ্বলে গইয়া গইয়া’

‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো,
আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে’
এমনই অসংখ্য গানের জনক, লোকসংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র গীতিকবি রাধারমণ দত্তের ১০৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯১৫ সালের ১০ নভেম্বর (২৬ কার্তিক) ৮৩ বছরে বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

রাধারমণ দত্তের জন্ম ১৮৩৩ সালে জগন্নাথপুর থানার কেশবপুর গ্রামে। তার বাবা রাধামাধব পরম পণ্ডিত ও অশেষ গুণের অধিকারী ছিলেন। বাবার সংগীত ও সাহিত্যসাধনা রাধারমণকে প্রভাবিত করে। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিভিন্ন সংগ্রাহকের মতে, রাধারমণের গানের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। তবে তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী হচ্ছে ধামাইল গান।

ভাটি বাংলার অন্যতম একটি জেলা সুনামগঞ্জ। হাওড়-বাওড়, নদ-নদী, পাহাড়-টিলা অধ্যুষিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি সুনামগঞ্জ। এই সুনামগঞ্জে যুগে যুগে অসংখ্য মরমি কবি, বাউল, সাধক, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, আধ্যাত্মিক ব্যক্তির জন্ম হয়েছে। দেওয়ান হাছন রাজা, বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ, সৈয়দ শাহনুর, আছিম শাহ, কালা শাহ, আরকুম শাহ, শীতালং শাহ, ছাবাল শাহ, এলাহী বক্স মুন্সী, শাহ আছদ আলী, পীর মজির উদ্দিন, আফজল শাহ, কামালউদ্দীন, একলিমুর রাজা চৌধুরী, গণিউর রাজা চৌধুরী, দীননাথ বাউল, গিয়াসউদ্দীন আহমদ, মকদ্দস আলম উদাসী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

জীবনভর তাদের দীর্ঘ সাধনায় সৃষ্ট জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ঘেঁটুগান, গাজীর গান, মালজোড়া বা কবিগান, কীর্তন, ধামাইল গানগুলো বৃহত্তর সিলেট, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ অনেক অঞ্চলকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি আমাদের বাংলা লোকগানের ভাণ্ডারে যোগ করেছে অসাধারণ মাত্রা। এই সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের খ্যাতির আড়ালে থাকা বিখ্যাত গীতিকবি ও সাধক রাধারমণ দত্ত।

তিনি একাধারে ছিলেন- মরমি কবি, বৈষ্ণব সহজিয়া ঘরানার সাধক, ধামাইল গানের জনক কিংবা লোকায়ত বাংলার মহান কণ্ঠস্বর। জীবনের বড় একটা অংশ যিনি কাটিয়ে দিয়েছেন অনন্তের সন্ধানে, তেমনি প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব, ভজন, ভক্তি, রাধাকৃষ্ণের আকুলতা নিয়ে বেঁধেছেন গান। নিজে কখনও সেসব গান না লিখলেও তার ভক্তরা শোনার সাথে সাথেই পুঁথিবদ্ধ করে ফেলতেন। এভাবে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তিন সহস্রাধিক গান, যা তাকে একজন কিংবদন্তি অমর গীতিকবি ও সুরসাধকের আসনে আসীন করেছে।