গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে লোহিত সাগরে হামলা বন্ধের ইঙ্গিত হুথিদেরও
প্রকাশ : 2024-02-28 12:50:59১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে লোহিত সাগরে হামলা বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছে ইয়েমেনভিত্তিক হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সোমবার এ ইস্যুতে হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুলসালাম। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ আবদুলসালাম বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরা লোহিত সাগরে অপারেশন শুরু করেছিলাম। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যতদিন অভিযান চলাবে, ততদিন লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আমাদের অপারেশনও অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সম্প্রতি যে প্রস্তাবটি এসেছে, তার ভিত্তিতে যদি সত্যিই গাজায় যুদ্ধবিরতি হয় এবং মানবিক ও ত্রাণ সহায়তার সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়, তাহলে আমরও লোহিত সাগরে আমাদের অপারেশন স্থগিতের ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করব।’
হুথি মূলত ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী। গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের বাব আল মান্দাব এলাকায় চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করে গোষ্ঠীটি। প্রথম পর্যায়ে কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জাহাজগুলোতেই আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের যৌথ বাহিনী হুথিদের লক্ষ্য করে বিমান অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের পাশাপাশি এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতেও হামলা চালানো শুরু করে হুথিরা।
গত তিন মাসে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে হুথিদের হামলার শিকার হয়েছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও ট্যাংকার জাহাজ। এসব জাহাজের কয়েকটি সাগরে ডুবেও গেছে। ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে হুথিরা। মঙ্গলবার যখন রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন মোহাম্মদ আবদুলসালাম, সেই একই দিন হামাসের অপর মিত্র লেবাননভিত্তিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধ বিরতি হলে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হামলা বন্ধ করবেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। এই তিন দেশের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর প্রথম যুদ্ধবিরতি হয়েছিল গাজায়। সেই বিরতির সময় নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ জনকে ছেড়ে দিয়েছিল দেশটির সরকার।
সম্প্রতি আবার গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। তার জেরেই প্যারিসে বৈঠক হয়েছে গত সপ্তাহে। বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ইসরায়েল, কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং সেখানে গাজায় দ্বিতীয় দফায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবের খসড়া অনুমোদন করেছেন তারা। ইতোমধ্যে হামাসের কাছে খসড়াটি পাঠানো হয়েছে। গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, খসড়াটি পর্যারোচনা করছেন তারা।
এদিকেফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস যদি প্রস্তাবিত ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সায় দেয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা থেকে বিরত থাকবে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। বিস্তারিত> হামাস যুদ্ধবিরতিতে সায় দিলে হামলা থামাবে হিজবুল্লাহও
সূত্র : রয়টার্স
সা/ই