গাজায় প্রথম বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেললো যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : 2024-03-03 15:36:42১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গাজায় প্রথম বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেললো যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথমবার বিমান থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা ফেলেছে। তিনটি সামরিক বিমানে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে ৩০ হাজারের বেশি খাবার ফেলা হয়েছে।

জর্ডানের বিমান বাহিনীর সাথে মিলে যৌথভাবে এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন এমন আরও সহায়তা তারা পাঠাবে গাজায়।

বৃহস্পতিবার ত্রাণ নিতে গিয়ে ১১২ জন নিহত হলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন সহায়তার কাজে দ্রুতগতি আনবেন।

সেদিন ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৬০ জন আহত হয় বলে জানায় হামাস।

বিমান থেকে এই সহায়তা এমন সময় দেয়া হল যখন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন যে গাজার ছয় সপ্তাহের একটা যুদ্ধবিরতি আনার সবরকম প্রস্তুতি চলমান।

বাইডেন প্রশাসনের এই কর্তা শনিবার জানান, ইসরায়েল একটা নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব “অনেকটা প্রায় গ্রহণ করেছে”।

“গাজায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি আজ থেকেই শুরু হয়ে যাবে যদি হামাস নির্দিষ্ট কিছু যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়...যেগুলো হল অসুস্থ, আহত, বয়স্ক ও নারী বন্দী,” নাম পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কর্তকর্তা।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায় যে, শনিবার সি-১৩০ পরিবহন বিমান আকাশ থেকে ৩৮ হাজারের বেশি খাবার ফেলে গাজার উপকূলীয় অঞ্চলে।

এতে আরও বলা হয়, “এই সহায়তাগুলো গাজায় আরও বেশি সাহায্য আনার একটা প্রক্রিয়া, যার সাথে যোগ হবে সড়ক পথে ও অন্যান্য পথে সহায়তা আনা।”

এর আগে অন্যান্য দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মিশর ও জর্ডান আকাশ থেকে গাজায় সহায়তা ফেলেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা প্রথমবার করলো।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, “বৃহস্পতিবারের হৃদয়বিদারক ঘটনা গাজার মানবেতর পরিস্থিতির থেকে বের হয়ে আসতে এখানে আরও বেশি মানবিক সহায়তার পৌছানোর বিষয়টি সামনে এনেছে।”

তবে সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে এভাবে আকাশ থেকে সহায়তা ফেলা ত্রাণ বিতরণের একটি অকার্যকর উপায়।

গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত মেধাত তাহের সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন যে, ত্রাণ সহায়তার এই পদ্ধতি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

“এটা কি একটা স্কুলের জন্য যথেষ্ট হবে? ১০ হাজার লোক কি এতে চলতে পারবে? এভাবে প্যারাস্যূটের মাধ্যমে ত্রাণ ফেলার চেয়ে বরং সীমান্ত দিয়ে সহায়তা আসা ভালো,” বলেন তিনি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করবে যাতে তারা আরও বেশি মানুষ যাদের সহায়তার দরকার সেখানে পৌঁছানোর জন্য বেশি করে ট্রাক ঢুকতে দেয় ও নতুন পথ খুলে দেয়।”

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি ওয়ার কেবিনেটের সদস্য বেনি গানতজের সঙ্গে দেখা করবেন যুদ্ধবিরতি এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনায়।

বৃহস্পতিবার গাজা শহরের দক্ষিণ – পশ্চিম প্রান্তে এক ত্রাণের বহর ঘিরে ভিড় করলে সেখানে ১১২ জন হত্যা করা হয় এবং ৭৬০ জনেরও বেশি আহত হয়।

গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে উপকূলের রাস্তা আল-রাশিদ স্ট্রিট যা সাম্প্রতিক সময়ে ত্রাণ বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল, সেখানেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

হামাস বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানোর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে, কিন্তু ইসরায়েল বলছে সেখানে সতর্কতার জন্য শুধু ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয় এবং মানুষ পদদলিত হয়ে মারা যায়।

গাজা সাব অফিসে হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) বিষয়ক জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর গিওর্গিওস পেত্রোপোলস বিবিসিকে বলেন, তিনি ও তার দল আল শিফা হাসপাতালে গিয়ে প্রচুর গুলিবিদ্ধ মানুষ দেখতে পেয়েছেন।

এদিকে হামাস বলছে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে শনিবারও দক্ষিণ গাজার রাফাহ শিবিরে ১১ জন মারা গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসিয়াস এই হামলাকে “জঘন্য” বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে তারা সেখানে ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একটা “সুপরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট হামলা” চালিয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, উত্তর গাজায় একটা দুর্ভিক্ষ অতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে, সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে খুবই সামান্য সহায়তা যাচ্ছে এবং সেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের ভাগ্যে খুব সামান্যই খাবার ও বিশুদ্ধ পানি জুটছে।

গত ৭ই অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে ১২০০ জনকে হত্যা ও ২৫৩ জনকে বন্দি করে নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে এক তীব্র মাত্রার আকাশ ও স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

তারপর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৩০ হাজার উপর মানুষকে হতা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এর মধ্যে ২১ হাজারই নারী ও শিশু। এর বাইরেও এখনো প্রায় ৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ এবং ৭০ হাজারের উপর আহত হয়েছে।

 

সান