খাদ্যের অভাবে গাজায় ইফতার করতে পারেনি চিকিৎসাকর্মীসহ বেসামরিকরা
প্রকাশ : 2024-03-13 12:00:48১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। ইবাদতসহ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মাসটি পালন করবেন সারা বিশ্বের মুসলিমরা। তবে এবারের রমজানে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের চিত্রটা নির্মম।
যুদ্ধবিধ্বস্ত এই উপত্যকায় প্রথম রোজায় খাবারের অভাবে ইফতার করতে পারেননি প্রায় ২ হাজার চিকিৎসাকর্মী। তারা উত্তর গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রায় ২ হাজার চিকিৎসাকর্মীর এক প্রকার অনাহারে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আশরাফ আল-কুদরা বলেন, গাজা উপত্যকার উত্তরাংশের চিকিৎসাকর্মীরা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা দেওয়া সংগঠনগুলোকে অতি দ্রুত গাজার চিকিৎসাকর্মীদের জন্য ত্রাণ নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় সোমবার ছিল রোজার প্রথম দিন। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলটিতে যুদ্ধের দামামার মধ্যেই রোজা রেখেছেন লাখো মানুষ। তাদেরই একটি অংশ ছিলেন সেই ২ হাজার চিকিৎসাকর্মী। কিন্তু কর্মক্লান্ত শরীরে দিনের শেষে ইফতারের সময় কোনো খাবারই জোটেনি তাদের। বর্তমানে উত্তর গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কারণ এলাকাটিতে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও খাদ্য সহায়তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রতি ছয়জনের মধ্যে অন্তত একজন অপুষ্টির শিকার।
আবারও ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা : এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা শহরের দক্ষিণে কুয়েত গোলচত্বরে ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খাবারের অভাবে যখন ফিলিস্তিনি শিশুরা মারা যাচ্ছে, এমন সময় দখলদার ইসরাইল আবারও এমন নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটালো।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ এজেন্সির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণে কুয়েত গোলচত্বরে ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিছু ফিলিস্তিনি। তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে ৯ জন নিহত হয়। হামলায় আহত ২০ জনেরও বেশি লোককে আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, প্রায় ৮৫ শতাংশ গাজাবাসী খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতির মধ্যে ইসরাইলি আক্রমণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যেখানে ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন। নিহতদের মধ্যে সাড়ে ১২ হাজারই শিশু।
চিকিৎসকদের ওপর নির্যাতন : ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর চিকিৎসকদের মারধর ও অপমান করেছে ইসরাইলি সেনারা। এমন অভিযোগ করেছেন গাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীরা। তারা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, গত মাসে হাসপাতালে অভিযানের পর ইসরাইলি সেনারা তাদের চোখ বেঁধে আটকে রেখেছে এবং বারবার মারধর করেছে। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বিবিসি।
নাসের হাসপাতালের এক ডাক্তার আহমেদ আবু সাভা। তাকে ইসরাইলি সেনারা এক সপ্তাহ আটকে রেখেছিলেন। বিবিসিকে তিনি সে সময়ের বর্ণনা দেওয়ার সময় বলেন, তার ওপর মাস্ক পরা কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় এবং এক ইসরাইলি সেনা তার একটি হাত ভেঙে দেয়। সাভার দেওয়া এই বর্ণনা অন্য দুই ডাক্তারের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে মিলে যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি। ওই দুই ডাক্তার ইসরাইলি সেনাদের রোষানলে পড়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছিলেন।
তারা বিবিসিকে বলেছিলেন, তাদের অপমান ও মারধর করার সঙ্গে গায়ে ঠান্ডা পানিও ঢেলে দেয় ইসরায়েলি সেনারা। এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদেরকে অস্বস্তিকর অবস্থায় হাঁটু গেড়ে থাকতে বাধ্যও করা হয়েছিল। তারা আরও জানান, মুক্তির আগে তাদের কয়েকদিন আটকে রাখা হয়েছিল।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়া সত্ত্বেও গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় আতংক প্রকাশ করেছেন। গুতেরেস সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, পবিত্র এই মাসেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় আমি আতংকিত এবং ক্ষুব্ধ। এটি হৃদয়বিদারক ও অগ্রহণযোগ্য। আমাদেরকে অবশ্যই এই প্রতিরোধযোগ্য নৃশংসতা ঠেকাতে কাজ করতেই হবে।
গুতেরেস বলেছেন, ইতিহাস প্রত্যক্ষ করছে। আমরা দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে পারি না। আরও প্রাণহানি এড়াতে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর গুতেরেস গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ক্ষুধা ও অপুষ্টি বিরাজ করছে। তিনি ত্রাণ সরবরাহে সব বাধা দূর করারও আহ্বান জানান।
সান