খাগড়াছড়িতে কলেজ শিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যাকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ : 2024-10-03 15:34:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
৩ অক্টোবর ২০২৪ইং, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে কলেজের অফিস কক্ষে হত্যাকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কে দেশ থেকে বিভক্ত করে জুম ল্যান্ড করার চক্রান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আলকাছ আল মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্থায়ী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের মনিটরিং কমিটির আহবায়ক, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শেখ আহমদ রাজু, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মোঃ রেজাউল করিম মাস্টার, ঢাকা মহানগর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইয়াসিন করিম, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ আহমেদ, ঢাকা মহানগর সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আলকাছ আল মামুন বলেন, গত ০১/১০/২০২৪ তারিখে দিন দুপুরে ধর্ষণের মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে কলেজের অফিসকক্ষে পুলিশের সামনেই মারতে মারতে তাকে হত্যা করেছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির নিউজল্যান্ড এলাকায় একইভাবে মামুন নামে এক ব্যবসায়ীকে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে তারা, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে কিন্তু কৌশলে ও প্রভাব খাটিয়ে এই হত্যা মামলায় নিরীহ বাঙালিদের কে আসামি করা হয়েছে যা খুবই নিন্দনীয়। ১০ দিন পরেই খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে কলেজের অফিসকক্ষে উপজাতি সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করে যা তাদের ধারণ করা ভিডিওতে স্পষ্ট। এই দুইজন বাঙালি হত্যাকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি।
তিনি আরো বলেন, এই খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসান মুহাম্মদ সোহেল রানা ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো সোহেল রানার বিচার দাবি করে। ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে ধর্ষিতা ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করে। মামলার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ মার্চ তারিখে সোহেল রানা ঢাকায় গ্রেফতার হন। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধার তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয় তিনি কোন ধর্ষণের শিকার হননি। পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। আজ ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে ত্রিপুরা এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শিক্ষককে হত্যা করা হয়।শিক্ষক সোহেল রানার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাহাড়িদের প্রতিবাদের মুখে ওই শিক্ষক আজ বিদ্যালয় রিলিজ অর্ডার নিতে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হলো না। এবার বলুন রহস্যটা কোথায়? ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ এনে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাপে এক উপজাতি অসহায় বাবা সোহেল রানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অথচ যাকে ধর্ষিতা বলা হচ্ছে তিনি নিজেই আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনি ধর্ষিতা নন। অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ।
আলকাছ আল মামুন বলেন, কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সোহেল রানা চাকরিতে বহাল হন। কিন্তু, তাতে বাধা দিচ্ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। আজ তিনি রিলিজ অর্ডার নিতে বিদ্যালয়ে যান। সেখানে আজই ছাত্রী ধর্ষণ কতটুকু যৌক্তিক? পূর্বেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কিন্তু তিনি আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বুঝতে পারছেন ঘটনাটা সুপরিকল্পিত। চুরির অপবাদে মামুনকে হত্যা, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও স্বার্থ হাসলে ব্যর্থ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আজ ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক হত্যা। মোটকথা তারা সুপরিকল্পিতভাবে পাহাড়কে অশান্ত রাখতে চাইছে। নচেৎ, এভাবে বিভিন্ন অপবাদ এনে বাঙ্গালী হত্যার কোন অর্থ নাই। চোর, ধর্ষক, খুনি—অপরাধী যাই হোক প্রত্যেক অপরাধের বিচারের জন্য দেশের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকে যদি রাষ্ট্র অবহেলা করে তবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্ব শাসনের জন্য সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস গঠন করে প্রায় ৪০ হাজার বাঙালিকে নির্মমভাবে খুন করেছে এই উপজাতী সন্ত্রাসীরা, ১৯৯৭ সালের সংবিধান বিরোধী পার্বত্য চুক্তি করে পাহাড়িদের কে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই চুক্তির ফলে বাঙালিরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে, শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাহাড়িরা একচেটিয়া সুযোগ—সুবিধা ভোগ করেও তাদেরকে দেওয়া চুক্তির দুটি শর্ত (১) অবৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া (২) স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা, এই দুটির একটি শর্তও তারা না মেনে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এবং বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি জুমল্যান্ড নামক রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদেরকে সরিয়ে নেওয়ার আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে এবং যার বলিদান হচ্ছে অসহায় নিরীহ বাঙালিরা, বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে বাঙ্গালীদেরকে।সময় মত যৌথ অভিযান পরিচালনা করে পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে নির্মূল করা না গেলে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও প্রভাব পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকবেনা এবং খুব দ্রুতই বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে বিভক্ত করবে। এখন সময় এসেছে পার্বত্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবার, যেহেতু উপজাতিদের দেওয়া দুটি শর্ত তারা ভঙ্গ করেছে সেহেতু পার্বত্য চুক্তি ভেঙে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় একটি শান্তি চুক্তি করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত দাবি সমূহ পেশ করা:—
১) ব্যবসায়ী মামুন ও শিক্ষক সোহেল রানার হত্যাকারীদের কে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২) প্রত্যাহারকৃত ২৪১ টি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প পুনরায় স্থাপন করতে হবে।
৩) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যন্ত এলাকাতে প্রয়োজনীয় সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
৪) গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ভিডিপির জমাকৃত অস্ত্র ফেরত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।