খরোস্রোতা তিস্তা আজ পানি শূন্য

প্রকাশ : 2023-12-18 16:31:14১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

খরোস্রোতা তিস্তা আজ পানি শূন্য

তিস্তা নদী উত্তরাঞ্চলের প্রান। ভারতের সিকিম পর্বত থেকে প্রবাহমান তিস্তা নদী বাংলাদেশের সীমানায় ১১৫ কিলোমিটার নদী এখন প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল ফসলী জমি। ভারতের গজল ডোবায় তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য অংশ না দেয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে কঙ্কালসারেস পরিণত হয়েছে। 

সরেজমিনে তিস্তা নদী ঘুরে দেখা গেছে বর্ষায় প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ পথে বসে যাচ্ছে। এভাবেই চলছে ৫২ বছর ধরে। বর্ষা ও শুস্ক দুই মৌসুমেই তিস্তা পাড়ের মানুষ পরে মহাবিপাকে। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে ও ভারতের উজানের ঢলে নদীর দু’পাড় উপচে সৃষ্টি হবে বন্যা। দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙ্গন। আর শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে পানি শূন্য হয়ে কঙ্কাল রূপ ধারণ করে ধু-ধু বালু চরে পরিণত হয়।

লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্ট থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিলো মিটার নদীর বুকে এখন সবুজের সমারোহ। নদীর বুকে শ্যালোমেশিন লাগিয়ে চলছে চাষাবাদ। চলতি শুস্ক মৌসুমে কাউনিয়া তিস্তা নদীতে ফসলি জমি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২হাজার হেক্টর। অনেকে বলছেন এটা চরের মানুষের জন্য আর্শিবাদ। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। ফলে নৌকা ঘাট গুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি। জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন
তারা। পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, তাই মৎস্যজীবিরাও আছেন সংকটে। 

নিজপাড়া মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে সত্য কুমার দাস বলেন, তিস্তায় পানি নেই, তাই মাছ নেই। এ কারণে নদীকে ঘিরে জীবীকা নির্বাহকারী জেলেরা পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। তাদের মানেবতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিস্তা সেতু এলাকর নৌকার মাঝি জহির মন্ডল বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন। ঘাট ও পর্যটক পরিবহনে সৌখীন নৌকা গুলো চলাচল না করায় নৌকা চালানোর কাজে নিয়োজিত মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

ঢুসমারা চরের তাজুল ইসলাম জানান, বর্ষার সময় ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ায় নদীর দু’পারের মানুষের জমি, ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সর্বশান্ত করে দেয়। খরা মৌসুমে পানির অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারে না নদী তীরের মানুষ। তিস্তা পাড়ের কলেজ শিক্ষক আসাদুজ্জামান শামিম বলেন, নদীকে ঘিরে গাথা হয়েছিলে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান, নতুন জামাই এলে বা নতুন মেহমান এ নদীর বইরাতি মাছ ছিলো খাবারের উপকরণ আজ সেই নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। তিস্তায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার মরুভূমিতে পরিণত হয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করতে সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে। নদী বাঁচাও আন্দোলনের কাউনিয়ার নেতা মোস্তাফিজার রহমান জানান, শুধু শুনেই আসছি তিস্তা নদী উন্নয়নে সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করছে। আজো এ প্রকল্পের বাস্তব কোন রূপ দেখতে পাচ্ছেন না নদীপাড়ের মানুষ। বিরোবির শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ জানান, তিস্তা নদী খননসহ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে নদী ফিরে পারে তার পূর্বের রূপ। এতে তিস্তাপাড়ে আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি, বাড়বে কৃষি উৎপাদন। জীবিকা নির্বাহের উৎস সৃষ্টি হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষের। রক্ষা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। 

 

সান