"কুরবানিঃ প্রাসঙ্গিক কিছু কথা"
প্রকাশ : 2022-07-09 20:20:47১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মানুষ নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে বন্দী। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব জায়গায়ই বিধান- প্রবিধান রয়েছে। আর এসব নিয়ম-নীতির সবটাই মানুষের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিজ্ঞানের ভাষ্যমতে মানুষ সভ্য হয়েছে ৫,০০০ বছরের কিছু বেশি সময় হবে। সভ্য বলতে ঠিক কি বুঝানো হয় তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। আমাদের সামনে যেসব ইতিহাস সংস্কৃতি রয়েছে মূলত সেগুলো মানবসভ্যতার সবটার প্রতিনিধিত্ব করে না। সভ্যতার বিরাট অংশতে এখনো কোন আলো ফেলা হয়নি।
সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি এগিয়েছে ইতিহাসের গতিবেগে নয়। ইতিহাস, সংস্কৃতি মানুষের মর্জি মাফিক বাঁক নিয়েছে। আর ব্যাত্ত্বয় ঘটেছে সেখানেই। ইতিহাসবিদদের একপেশে সুবিধাভোগী মনোভাব এবং কোনো কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ ধারণা থাকার ফলে এমনটা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। তবে এতে করে সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশ সুষম হয়নি। গড়ে উঠেছে রেষারেষি মনোভাব। সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের বিষবাষ্প তৈরি হয়েছে। আর সে বিষ যুগ যুগ ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশে। যার ফলে মানুষ বিভক্ত আর বিভাজনের অংশ হয়ে গিয়েছে।
কুরবানি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান একটি ধর্মীয় আচার। কখন থেকে এ রীতি চালু হয়েছে এ নিয়ে দ্বিমত নেই। নবি আদম (আ) এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মাঝে দ্বন্দ্ব এবং প্রতিযোগিতা থেকেই কুরবানি চালু হয়েছে। ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সে সময় মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নয় তারা কুরবানি করত কোনো বিষয়ে আসমানী ফয়সালা পেতে। অর্থাৎ কোনো একটা বিষয় যা তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব, সংঘাতের সৃষ্টি করেছে, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে, সমাধান পেতে তারা পশু জবেহ করে রেখে দিত আর আকাশ থেকে আগুন এসে সেগুলো জ্বালিয়ে দিত। আর এতে করে তারা সংগঠিত বিষয়ের সমাধান খুঁজে পেত। সে সময় সমাজ ব্যবস্থা এতোটা এগোয়নি। মানব সমাজ সরাসরি সমাধান নিত স্রষ্টার কাছ থেকে।
মানুষের ধর্ম বিশ্বাস এভাবেই চলতে থাকে। কোনো সংকটে সমাধান পেতে মানুষ পশু জবেহ করাকে বিধান বানিয়ে নেয়। বহু বছর চলে এ পদ্ধতি। স্রষ্টা কখন এ পদ্ধতি অকেজো করেছিলেন তার কোনো হদিস নেই। আর কেনই বা অকেজো হলো তার কারণ স্পষ্ট নয়। মানুষ প্রাথমিক যুগে খাদ্য হিসেবে পশুর মাংসকেই প্রাধান্য দিয়েছিল। পরিবেশ, সমাজ, কাঠামোগত সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে মানুষ মাংসের দিকে ঝুঁকে থাকতে পারে। মানুষ মাংসাশী প্রাণী এ সত্য মানব সভ্যতা সংস্কৃতি প্রমাণ করে। শুরুতে নিরামিষ কিংবা আমিষে মানুষের রূচি ছিলো এমন কথা আবিষ্কৃত নয়। আর সেসময় মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার চিন্তা এতোটাই প্রকট ছিলো যে মানুষ আর মানবিকতা, পশুপ্রেম, বৃক্ষপ্রেম, কপটতা, নিছক বিনোদনের জন্য নিয়ম-নীতির যাচাইকরণ এসব বিষয় ধাতে আসেনি। এক কথায় আমলে নেয়নি।
পৃথিবীর ইতিহাস এভাবেই এগিয়ে চললো। বনে, গুহায়, গাছের কোটরে যারা বাস করেছে তাদের আদি মানব হিসেবে আবিষ্কার করার একটা প্রবণতা রয়েছে। আর সে প্রবণতা থেকেই বলা শুরু হয়েছে মানুষ অসভ্য, বর্বর ছিলো এবং পশু হত্যা ছিলো তাদের অন্যতম প্রধান পেশা। তারপর এলো লৌহ যুগ, কৃষি যুগ, পশুপালন যুগ, শিল্প যুগ সবশেষে তথাকথিত আধুনিক যুগ। এই আধুনিক যুগে এসে মানুষের চিন্তা চেতনা পাল্টে যেতে থাকলো। বহুমুখী ধ্যানধারণা গাছপালার মতো বেড়ে উঠতে লাগলো। মানুষ অনেক বিষয় থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিল। ধর্মে বিশ্বাস মানুষের আদিম যুগ থেকেই ছিলো। আধুনিকে এসে সে বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নতুন নতুন চিন্তাকে সামনে নিয়ে আসছে।
মানুষের নতুন চিন্তার কোনো স্থায়ী ভিত্তি নেই, নেই কোনো স্বীকৃতি। বিচ্ছিন্নভাবে সমাজে এসব চিন্তা ঠুকে যাচ্ছে। প্রথমত ধর্ম মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে এমন একটা কথা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু থেকেই ছিলো। আর সেজন্য ধর্মের বিধান নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গেলো। যারা আসমানী কিতাবের প্রচারক তাদের অবস্থান আধুনিক যুগে এনে বিচার করার একটা হীনমন্যতা ঢুকে গেলো কিছু মানুষের মগজে। তারা হঠাৎ করে অতি বেশি মানবতাবাদী হয়ে উঠলো। এতে করে ধর্মের বিধান নিয়ে অতিমাত্রায় আলোচনা অব্যাহত থাকলো। এই আলোচনা ধর্মের বিধানকে আরও সমুন্নত করলো।
কিছু মানুষের ধারণা কুরবানি ইব্রাহিম (আ) থেকে চলে আসছে। বিষয়টা তেমন নয়। কুরবানি অর্থ উৎসর্গ করা। ইব্রাহিম (আ) উৎসর্গ করেছিলেন নিজের সন্তানকে। মহান স্রষ্টা সে কুরবানি কবুল করেছিলেন, গ্রহণ করেছিলেন। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। দীর্ঘ উপাখ্যান। ইব্রাহিম নবি কিন্তু দুম্বা নামক জন্তুকে বনে ছেড়ে দেননি কিংবা কাউকে পালতেও দেননি। এরপর কোনো নবির জীবনীতেই দেখা যায়না তারা কুরবানির পশুকে ছেড়ে দিয়েছেন বা কাউকে পালতে দিয়েছেন। আধুনিক যুগে মানুষের মধ্যে নতুন মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মানুষ মনের পশুকে তাড়াচ্ছে ঝাড়ফুঁক করে। কেউ কেউ কিছুটা এগিয়ে এসে বলার চেষ্টা করছে জীব হত্যা মহাপাপ। তারা সজ্ঞানে নিরামিষ ভক্ষণ করতে গিয়ে উদ্ভিদ নামক জীবের বিনাশ করছে।
মানুষ নিজের প্রয়োজনে জীবের বিনাশ করবে এতে কোনোই আপত্তি নেই, বিধিনিষেধ নেই। বাস্তুসংস্থান কিংবা ইকোলজিকাল ব্যালেন্স টিকিয়ে রাখতে হলে এসব বিষয় আমলে নিতেই হবে। নতুবা পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। একটা বিষয় পরিস্কার মানুষের খামখেয়ালি প্রকৃতিতে টিকে না।প্রকৃতি তার নিয়ন্ত্রণ নিজেই করে নিয়েছে। সভ্যতা সংস্কৃতি মানুষের মর্জি মাফিক বাঁক নিতে পারে না।সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করে সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায় না।মুসলিম উম্মাহর অনুভূতি বুঝতে হবে। আর অনুভূতি সম্মানের মধ্যদিয়েই গড়ে উঠে বিশ্বসংস্কৃতি, বিশ্ব সভ্যতা।
আসলে এগুলো মানুষের বিচ্ছিন্ন চিন্তার ফসল। ইসলামি সংস্কৃতির মানুষকে সর্বোত্তম বিধান দিয়েছে। যা কিছু ভালো, যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু চির কল্যাণকর সবই এসেছে ইসলামি তমুদ্দুন থেকে।