কিভাবে পালন করবেন লাইলাতুল কদর
প্রকাশ : 2023-04-18 15:32:49১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রমজান মাসের প্রতিটি ক্ষণ মুসলিম উম্মাহর জন্য মহামূল্যবান। এই মাস প্রাপ্তিতে পরকালীন চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য মুমিনমাত্রই বেশি বেশি আমল করে। প্রথম দশ দিনে আল্লাহর রমহতে বান্দা নিজেকে পবিত্রতায় সিক্ত করে নেয়। দ্বিতীয় দশ দিনে ক্ষমা লাভের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয়। আর শেষ দশ দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা লাভের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে।
মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল রমজানের শেষ দশকের প্রতি অসাধারণ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং নফল ইবাদতের দ্বারা শেষ দশককে সমৃদ্ধ করেছেন। রমজান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শেষ দশকের রাত।আমাদেরও রমজানের শেষ দশকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া চাই। বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে। কারণ এ রাতগুলোতেই আছে হাজার মাসের চেয়ে সেরা রজরি লাইলাতুল কদর, যেটি কুরআন নাজিলের মতো মহা-অর্জনসমৃদ্ধ।
আল্লাহ তাআলার বাণী :
লাইলাতুল কদর হাজার মাসের (ইবাদতের) চেয়ে উত্তম।
[সুরা ক্বদর, আয়াত : ০৩]
এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
যে ব্যক্তি ঈমান [বিশ্বাস] ও ইহতিসাব [লাভ ও উপকার জানা] সহকারে কদর রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে, তার জীবনের পূর্ববর্তী সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১]
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাহর মহাকল্যাণার্থে এর তারিখ নির্দিষ্ট করে দেননি। এর কল্যাণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তবে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট হয়ে গেলে মানুষ এদিনকে নিয়েই পড়ে থাকত, অন্যান্য দিন-রাতের কোনও কদর করত না। এজন্যও তার এই কৌশল হতে পারে। লাইলাতুল কদর খুঁজে নিতে নির্দেশ দিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর খোঁজ করো।
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭]
অবশ্য এই অনির্দিষ্ট রাখার আরেকটি কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :
আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলিতে তা খোঁজ করবে।
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৬]
অধিকন্তু ২৭তম রাতকেই মুসলিম সমাজ কদরের রাত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। কারণ কিছু কিছু বর্ণনা এই ২৭তম রাতকে নির্দেশ করে। তবে নির্দিষ্ট না করে সব বিজোড় রাতেই ইবাদত করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কোনও রাতে শবে কদর তা নিয়ে হা-হুতাশ করা একেবারেই অনর্থক কাজ। যেহেতু এ রাতের একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদত করা, সুতরাং বেশি বেশি ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আর সেটা পাঁচ রাত ব্যাপী হওয়াতে তো আরও সুবিধা হলো।
কিভাবে পালন করবেন শবে কদর:
(ক) লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ পড়া।
(খ) দীর্ঘ কিয়াম করা। লম্বা রুকু করা।
(গ) দীর্ঘ সিজদা করা।
(ঘ) বেশি পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা।
(ঙ) জিকিরের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।
(চ) তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা। বিশেষ করে এই তাসবিহ পাঠ করা :
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
এরপর কালিমা, দুরুদ শরিফ ও ইস্তেগফার পাঠ করবে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেওয়া দুআ দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া :
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নি]
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫১৩]
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাস। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
সাবধান! ওয়াজ মাহফিলে এই রাত কাটাবেন না। যতদূর সম্ভব সবাই ব্যক্তিগত আমলের ওপর জোর দেবেন। এটা আমলের রাত। এই রাতে ওয়াজ মাহফিল করার অর্থ হলো, যুদ্ধের ময়দানে এসে ট্রেনিং শুরু করা। যুদ্ধের আগে ট্রেনিং। যুদ্ধের সময় লড়াই। সুতরাং লাইলাতুল কদরে একাকী রাত কাটানো। এক কোণায় বসে যাওয়ার চেষ্টা করা। যেখানে মহান আল্লাহ আর আপনি ছাড়া কেউ নেই। নিভৃতে-নির্জনে দুআ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রাত চাওয়ার রাত। সুতরাং যত বেশি চেয়ে নিতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।