কার সঙ্গে সংলাপ করবো, এবারও তারা নির্বাচন থামাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : 2023-10-31 17:59:56১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কার সঙ্গে সংলাপ করবো, এবারও তারা নির্বাচন থামাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ করবো। বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করবো? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ?

বেলজিয়ামে তিন দিনের সফরের বিষয়ে জানাতে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন। এতে বেলজিয়ামের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

এ সময় একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান—মঙ্গলবার পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের কথা জোর দিয়ে বলেছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে সংলাপ করুক। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও হারিয়েছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তার বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, তখন কেন বিচারের দাবি করে না। যারা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলে, আজকে যখন এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হল, তারা চুপ কেন?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারলো। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করছে? ট্রাম্প বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করবো। তাদের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা আছে।’

‘নির্বাচন যথাসময়ে হবে, কে চোখ রাঙালো তা পরোয়া করি না’

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে হবে, কে চোখ রাঙালো তা পরোয়া করি না।’

‘বাইডেন সাহেব ট্রাম্পের সঙ্গে যেদিন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমিও করব’

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের আহ্বানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? কিসের সংলাপ? তাদের দেশে [যুক্তরাষ্ট্র] বাইডেন সাহেব কি ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে ডায়ালগ [সংলাপ] করেন। যেদিন বাইডেন সাহেব ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করবেন, সেদিন আমরাও সংলাপ করব।’

ওরা কী মানুষের জাত, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা পুলিশকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা কী মানুষের জাত।’ তিনি বলেন, ‘যারা যখন গাড়ি পুড়িয়ে দেবে তাদের হাতও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত।’

বিএনপি সন্ত্রাসী দল, আবারও প্রমাণ হলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতার মাধ্যমে বিএনপি আবারও নিজেদের সন্ত্রাসী দল প্রমাণ করলো।শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট— এরা যে সন্ত্রাসী এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটাই তারা আবার প্রমাণ করলো। কানাডার কোর্ট-ও কিন্তু এই বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। এখানে যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সেখানে আশ্রয় চাইতে গিয়েছিল, তারা কিন্তু পায়নি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মাঝখানে তারা কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল এবং আপনারা বিশেষভাবে লক্ষ্য করছিলেন আমাদের সরকার তাদের তেমন কোনও বাধা দেয়নি, কিছুই দেয়নি। তাদের ওপর সবসময় একটাই শর্ত ছিল যে, তারা কোনও রকম অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তখন কিন্তু তারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত ২৮ তারিখ অক্টোবর তাদের যে ঘটনা, বিএনপি যেসমস্ত ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করলো, পেটালো এবং এই ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না।

তিনি আরও বলেন, পুলিশকে তো মেরেছেই তারপর হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ। আজকে ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে বোমা হামলা করলো। নারী-শিশুদের হত্যা করেছে এবং সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি এখানে তফাত কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই আবার পালালো। এখন আবার অবরোধের ডাক। কীসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ? যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, বাংলাদেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা দেখাবে যে কিছু হয়নি।

২৮ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল উপমহাদেশে আর কোনও দেশ করেনি। আমরা প্রথম এই টানেলটা করলাম। চট্টগ্রামে একটা বাণিজ্যের জায়গা, পোর্ট রয়েছে। সেখানে টানেল তৈরি করে যখন আমরা উদ্বোধন করছি, তখন এখানে তারা মানুষের ওপর হামলা করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করছে। তাদের হামলায় লক্ষণীয় হলো, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গুলি কারা কারা করেছে, তাদের নামধাম… [বের করা হবে]— তারা তা প্রকাশ্যেই করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। কালকেও লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সাংবাদিকদের ওপর তারা যেভাবে চড়াও হলো— বুঝতে পারলাম না কেন হঠাৎ… কারণ সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শো’তে… বরং সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে তাদের এত রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর। সবজায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও ৪ নম্বর/৫ নম্বরেও থাকে। কিন্তু তারাও যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছিল। তারপরও কেন তাদের রাগটা। সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার দেখবে বলেও জানান তিনি।

যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটা সরকার দেখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব গাড়ি পুড়িয়েছে। ২০১৩ সালে তারা একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে। পরে ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। তিনটি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর আক্রমণ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাসমালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারে। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি।

সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেছি, সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট। কাজেই বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, সেই শিক্ষাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেবো। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না। যাদের বাস-টাস পুড়েছে, তাদের সহযোগিতা করবো।

রুটি-রুজির কারখানা ধ্বংস করলে চাকরিটা থাকবে?

পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আলোচনার [মজুরিবৃদ্ধি] পর্যায়ে হঠাৎ তাদের (পোশাকশ্রমিক) মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালা-পোড়াও করা, কোনও কোনও কারখানায় আগুন দেওয়া…যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন গার্মেন্টস কর্মীরা কত টাকা মজুরি পেতো? ৮০০ টাকা। আমরা সেটা ১ হাজার ৬০০ টাকা করি। কিন্তু যখন সরকার থেকে চলে যাই, তখন এটি কার্যকর করেনি বিএনপি। কার্যকর করেছিল ২০০৬ সালে এসে। আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে প্রথম ধাপে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করি, দ্বিতীয় ধাপে ৫ হাজার ৩০০ টাকা, তৃতীয় ধাপে ৮ হাজার ৩০০ টাকা করেছি। এই অল্প সময়, মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে তিন দফা তাদের মজুরি বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকা করেছি।

তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয়, তাদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি দত করে দিই। তাদের টিফিনের ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং সব রকমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। করোনাকালীন যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছে না, সেই বেতন আমি সরকারের পক্ষ থেকে মালিকদের হাতে না প্রতিটি গার্মেন্টস শ্রমিকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমস্ত টাকা তাদের হাতে পৌঁছে দেই। সরাসরি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলাম। মালিকদের বিশেষ প্রণদোনা দেই, যাতে ব্যবসাবাণিজ্য চালাতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিনিসের দাম, মূল্যস্ফিতি বেড়েছে, এটা তো সবাই জানে। বিশ্বব্যাপী, শুধু বাংলাদেশে না, বাংলাদেশে তো আমরা যে পয়সায় কিনে খেতে পারি বিদেশে কিন্তু সে অবস্থা না, আরও খারাপ অবস্থা। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টায় এক কোটি মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছি। বিশেষ পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যাতে সল্প মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা যদি রেশন নিতে চায়, মালিকদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া আছে। তারা কিন্তু অল্প পয়সায় এদের খাদ্যসামগ্রীও দিয়ে থাকে। এই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি। এরপর তারা যখন দাবি করেছে, আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি করে দিয়েছে, আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় একটা কথা ছিল, এই ডিসেম্বর থেকেই তারা এই মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেবে, এ বিষযে কত বাড়বে না বাড়বে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এই আলোচনার পর্যায়ে হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালা-পোড়াও করা, কোনও কোনও কারখানায় আগুন দেওয়া…যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা। এদের কারণে সেখানেও দুটি জীবন ঝরে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি সত্যি এ জন্য দুঃখ পাচ্ছি।