কানাডা ভারত দ্বন্দ্ব - মিলছে না শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি

প্রকাশ : 2024-01-18 12:03:33১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কানাডা ভারত দ্বন্দ্ব - মিলছে না শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি

কানাডাপ্রবাসী শিখ নেতা ও দেশটির নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড ও এই নিয়ে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে দেশটির শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি প্রদান ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে কানাডা। দেশটির পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে এই হার হ্রাস পেয়েছে ৮৬ শতাংশ।

কানাডার অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলার নিজেও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিলার বলেন, ভারতের সঙ্গে কানাডার বর্তমান সম্পর্কই আমাদেরকে এই পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিচালিত করেছে। অনুমোদনের হার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সম্ভবত আরও সময় লাগবে।’

কানাডা প্রবাসী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর ভারতের শিখদের পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন খালিস্তান মুভমেন্টের একজন অগ্রসারির সংগঠক ছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ফেরার সন্ত্রাসীও ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে কানাডায় যান হরদীপ, পরে সেখানকার নাগরিকত্ব অর্জন করেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর।

গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হরদীপ হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের দায়ী করে বলেন, এ অভিযোগের পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ তার হাতে রয়েছে

হরদীপ হত্যাকাণ্ড যে কানাডার জন্য যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

স্বাভাবিকভাবেই ভারত এই অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং কানাডার সরকারের কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ দাবি করে। জবাবে কানাডাও নিজের অবস্থানে অনড় থেকে জানায়, ভারতের সরকারকে আগেই এ সংক্রান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সরবরাহ করা হয়েছে। এই নিয়ে বাদানুবাদের জেরে নজিরবিহীন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে ভারত-কানাডা। দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে গত বছর কানাডার ৪১ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত, যা নয়াদিল্লিতে কানাডার দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকদের এক তৃতীয়াংশ।

মূলত ওই ঘটনার পর থেকেই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কানাডায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।

বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ ও বসবাসের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী কানাডায় যান। কানাডার অর্থনীতির জন্যও এটি বেশ লাভজনক। প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাত থেকে গড়ে ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার যোগ হয় দেশটির অর্থনীতি। ফলে কানাডা সবসময় বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়। সেই সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে কানাডায় স্থায়ী হতে চান, তাদের প্রতিও উদারতা প্রদর্শন করে দেশটি। দেশটির বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয়রা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কানাডার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কানাডায় বসবাসরতর শিক্ষার্থীদের ৪১ শতাংশই ভারতীয়। ২০২২ সালে মোট ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৫ ভারতীয় শিক্ষার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে কানাডা। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৩ সালে, তিন লাখ শিক্ষার্থীকে স্টাডি পারমিট দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা নয় লাখ ছাড়িয়েছে। এটি লক্ষণীয় যে ২০২২ সালে কানাডায় পড়াশোনার জন্য আবেদন করা ছাত্রদের ৪০ শতাংশ ভারতীয়। গত বছরের শেষে ভারতীয় ছাত্রদের জন্য কানাডা কর্তৃক ইস্যু করা স্টাডি পারমিটের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কিন্তু হরদীপ হত্যার জেরে গত বছর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব সেই চিত্রে পরিবর্তন এনেছে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। 

রয়টার্সকে মার্ক মিলার বলেন,  ‘(ভারতের সঙ্গে) কীভাবে এবং কবে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হবে, আমি বলতে পারছি না। যখন দুই দেশের মধ্যে অমিমাংসিত ফৌজদারি অপরাধ চলে আসে, তখন এ সম্পর্কিত কোনো অনুমান করা কঠিন। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমরা (কানাডা এবং ভারত) একটি সুড়ঙ্গে আটকা পড়েছি এবং এখন পর্যন্ত সেই সুড়ঙ্গের শেষে কোনো আলো আমি দেখতে পাচ্ছি না’ ।

 

সা/ই