কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা, বেকার হচ্ছে শ্রমিক
প্রকাশ : 2024-12-21 13:01:58১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সময়ের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা। সেই সাথে বেকার হচ্ছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকগণ। ফলে খেটে খাওয়া এসব শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে পেশা বদলাতে বাদ্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর বিয়ে বাড়িতে দু-তিন দিন আগে থেকে হলুদ-মেন্দি বাটা হয় না। বর্তমানে বাজারে সুন্দর প্যাকেটে হলুদ কিংবা মেহেদি বাটা পাওয়া যাচ্ছে। কেবল শহরে নয়, গ্রামগঞ্জেও পৌঁছে গেছে সব ধরনের মসলাজাতীয় প্যাকেট। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ আর আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিকল্প উদ্ভাবনের ফলে এখন আর শিলপাটায় মসলা বাটায় উৎসাহী নয় এ প্রজন্মের নারীরা। তাই সময় ও কালের প্রবাহে বাঙালির সমাজব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিলপাটার ব্যবহার। প্রতিটি ঘরের গৃহিণীদের নিকট শিলপাটায় মসলা বাটা ছিল নিত্যদিনের কাজ। রান্নার আগেই গৃহিণীরা শিলপাটা নিয়ে মসলা বাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু কালেভদ্রে চোখে পড়ে না। রংপুরের কাউনিয়ায় এক সময় প্রতিনিয়তই দেখা মিলত শিলপাটা ধারকাটা কারিগরদের। হাতুড়ি, ছেনি নিয়ে কারিগররা বিভিন্ন বাড়ির সামনে গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, শিলপাটা ধার করবেন শিল পাটা......। সেই হাকডাক এখন আর শোনা যায় না। দিন দিন কমছে এই শিলপাটার কদর। আগের তুলনায় প্রতিনিয়তই কমছে শিলপাটার ব্যবহার। ঈদুল আজহার পূর্ব ছাড়া এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। শিলপাটা ধারকাটার কারিগরদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রংপুর লালবাগ কেডিসি রোডের শিলপাটা ধারকাটা কারিগর মমিনুলের সাথে কাউনিয়ার হরিশ^র গ্রামে শিলপাটা ধার করার সময় কথা হলে তিনি জানান, আগে শিল পাটা খোদাই কাজের কদর ছিল এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রভাবে অনেক কমে গেছে। সারাগ্রাম ঘুরে ২/৪টা শিলপাটা ধার করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে না, তাই অনেকেই জীবিকার তাগিদে এ কাজ ছেড়ে জোগালি, ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। কেউ কেউ বাপ-দাদার এ পেশায় টিকে থাকলেও মানবেতর জীবন করছে। যারা আছেন তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকমে টিকে রয়েছেন। মাছে ভাতে বাঙ্গালী। ৩ বেলা খাবারেই ভাতের সঙ্গে খেতে হয় বিভিন্ন প্রকার তরকারি। আর এসব তরকারী রান্না করতে প্রয়োজন হয় মসলা। এই মসলা পিশানোর জন্য প্রয়োজন শিল পাটা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাইন্ডার মেশিন ও ব্যালেন্ডারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় বিলুপ্তর পথে বসেছে শিল পাটা। হরিশ^র গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, আগে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিলপাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার জন্য ডিজিটাল যুগের ছোঁয়ায় এখন মেশিনেই তৈরি হয় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, গরম মসলা। শিলপাটার ব্যবহার এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এলাকার বাবুচি আঃ রহমান জানান, এই অঞ্চলে শিলপাটা এখন বিলুপ্তির পথে। সবাই এখন প্যাকেট মসলা কিনে ও ব্যালেন্ডার করে খায়। রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুঁড়া করার জন্য এক সময় শিলপাটার বিকল্প বলতে কিছু ছিল না।