কাউনিয়ায় খালে বিলে জল-কাদায় মাছ ধরা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে
প্রকাশ : 2024-05-22 20:48:51১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
এক সময় বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সাথে মিশে ছিল গ্রাম বাংলায় নিচু জমি, খাল-বিলে পানি সেচে মাছ ধরা উৎসব। প্রখর রোদে হাঁটু কাদা পানিতে মাছ ধরা গ্রাম বাংলায় অন্যতম বিনোদনও বটে। সবাই মিলে মাছ ধরার চিরায়ত সেই দৃশ্য সচরাচর এখন আর চোখে পড়েনা।
ভাদ্র মাসের তীব্র গরম আর প্রখর রোদের তেজে খাল বিল, পুকুর, নদ-নদীর পানি কমে যাবার সাথে সাথে শুকিয়ে যেতে থাকে ডুবে থাকা ক্ষেত ও জলাধার। পানি শুকিয়ে গেলেও এসব স্থানে আটকা পড়ে নানা দেশীয় মাছ। আর সে সময় কাদা পানিতে নেমে হাত দিয়ে মাছ শিকার করে গ্রামের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠে নদী গুলো। শুধু নদী নয়, পানি বৃদ্ধি পায় পুকুর-ডোবা আর খাল-বিলের। ডুবে যায় ধানের খেত আর নিচু জমি। সেই জমিতে দেশি জাতের নানা মাছের আগমন ঘটে। একসময় খাল-বিল, পুকুর-ডোবা আর ক্ষেত-খলা শুকিয়ে এলে থালা-বাটি দিয়ে চলে সামান্য পানি সেচার কাজ এরপর চলে মাছ ধরার উৎসব। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের শূন্য পানির কাদার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। শত শত বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে, যা আজও বহমান। নদী বেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলায় রয়েছে তিস্তা, মানাস ও বুড়াল নদীসহ বেশ কিছু বড় বড় খাল বিল এবং দোলা। কালের বিবর্তনে এসকল নদীর আয়তন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। সেচ দেয়া পুকুরে চাষ করা মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আর ডোবায় মেলে শোল, টাকি, পুঁটি, খলসে, কৈ, মাগুর, সিং, ট্যাংরাসহ দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। কাদায় মাছ ধরার এমনই এক উৎসবের দেখা মিলল উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষা শেষ হলে পানি কমে গেলে পুকুরসহ এলাকার নিচু জমিগুলোতে এমন মাছ ধরার উৎসব চলে। সেই উৎসবে মাছ ধরায় মেতে উঠে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই। তারা জানান, আগে এমন করে নানা জাতের দেশীয় মাছ প্রচুর ধরা গেলেও, এখন আর সেদিন নেই। নেই মাছের সে প্রাচুর্য। প্রতিনিয়ত রাসায়নিক সার ব্যবহার আর মাছের অভয়ারণ্য কমে যাওয়ায় আগের মতো জমে ওঠেনা মাছ ধরার উৎসব। দেশীয় মাছের উৎসগুলো ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। ইউপি সদস্য তবারক আলী আক্ষেপ করে বললেন, কাদা পানিতে খালবিল থেকে মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়েনা।