করোনা কেড়েছে প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ কর্মকর্তার জীবন

প্রকাশ : 2021-04-16 09:09:59১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

করোনা কেড়েছে প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ কর্মকর্তার জীবন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৬ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা জালাল সাইফুর রহমান। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ছিলেন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার এক বছর পর এসে বৃহস্পতিবার করোনায় মারা গেলেন একই ব্যাচের কর্মকর্তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল খায়ের মো.মারুফ হাসান।

 শুধু এই দুই কর্মকর্তাই নন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্য মানুষের সঙ্গে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মৃত্যুও বেড়ে চলেছে। গত ছয় দিনেই মারা গেলেন তিন কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিব। এ নিয়ে গত এক বছরে প্রশাসন ক্যাডারের মোট ২৫ জন কর্মকর্তা করোনায় মারা গেলেন। মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত ছিলেন। বাকি তিনজন অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) এবং আটজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন হাজারখানেক কর্মকর্তা।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তা ৬ হাজার ৩২৭ জন।

সংগঠনের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তো কাজ করতেই হচ্ছে। উপায় নেই। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে যেন চিকিৎসা পায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের পরিবারকে যথাসাধ্য সহায়তা করা হচ্ছে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। এখন আবার ‘লকডাউন’ চলছে।

কাজের ধরনের কারণে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করতে হয় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। যে কারণে মানুষের সংস্পর্শে বেশি যেতে হয় তাঁদের। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরও নিয়মিত অফিস করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

যাঁরা মারা গেলেন
উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান ও আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান ছাড়াও কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ফখরুল কবীর, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার, তথ্য কমিশনের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান, যুগ্ম সচিব খন্দকার অলিউর রহমান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লিয়াকত আলী, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহম্মদ এবং যুগ্ম সচিব শামস ই আরা বিনতে হুদা। এর মধ্যে রফিক আহম্মদ ১০ এপ্রিল ও শামস ই আরা ১১ এপ্রিল মারা যান।

আর উপসচিব আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা রেখে গেছেন।

পিআরএল অবস্থায় মারা যাওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব নূর হোসেন তালুকদার ও যুগ্ম সচিব খুরশীদ আলম। অবসরে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া আট কর্মকর্তা হলেন সাবেক সচিব বজলুল করিম চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সচিব সামছুল কিবরিয়া চৌধুরী, আ. রশিদ, মোহাম্মদ আলী (১৯৭০ ব্যাচ), ইসহাস ভূইয়া (১৯৭৩ ব্যাচ), সরওয়ারী আলম (১৯৭০ ব্যাচ), ওয়াজেদ আলী খান (৮১ ব্যাচ) এবং তপন কুমার সরকার (৮৫ ব্যাচ)।

এর বাইরে গত বছরের ২১ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব নরেন দাস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত আগস্টে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে তরুণেরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। তাই কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথ সুরক্ষিত হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন।