কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ

প্রকাশ : 2021-04-25 19:50:18১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ

হেফাজতের ইসলাম বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর ছাত্র ও শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া আজ রোববার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এর আগে রোববার বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদরাসায় বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পরে বোর্ডের অফিস সম্পাদক মু. অছিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সভায় সভাপতিত্ব করেন আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান।

এতে বলা হয়, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, দেশের কওমি অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে তা থেকে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং উলামায়ে কেরামের শান ও মান বজায় রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় নানামুখী দীনি কার্যক্রম যাতে চালিয়ে নেওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয় সেজন্য বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেগুলো হলো-

আল-হাইআতুল উলয়া কওমি মাদরাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেবে। আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ব্যতীত আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন এক বা একাধিক বোর্ড কিংবা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি পৃথকভাবে কওমি মাদরাসা বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণ বা উদ্যোগ নিতে পারবে না।

প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা- এ মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
 
কওমি মাদরাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তত্ত্বাবধান এবং আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এর অধীন ৫ বোর্ডের ৫ জন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে ৫ জন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত ৫ জন সমন্বয়ে মোট ১৫ জনের একটি ‘বাস্তবায়ন সাব-কমিটি’ গঠিত হবে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসার যে নিরীহ ছাত্র, শিক্ষক, আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সরকার যেন রমজানের এই রহমতের মাস বিবেচনায় তাদের মুক্তি দেয় সে আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে নিরীহ আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হয়রানি না করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কুরআন তেলাওয়াতের মাস পবিত্র রমজান। আর কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বালা-মুসিবত ও মহামারি দূর হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে রমজানের মধ্যেই হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়া এবং রোজার পর দেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করা।

এদিকে, আল-হাইআতুল উলয়ার সভার যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সে সম্পর্কে সরকারকে জানাতে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন ও মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন।

সভায় আল-হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি ওয়াক্কাসের মাগফিরাত কামনা করা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশবাসী তথা বিশ্বমানবতার জন্য দোয়া করা হয়।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মাওলানা ছফিউল্লাহ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা মুছলেহুদ্দীন রাজু, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুফতি নূরুল আমীন মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ও মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন প্রমুখ।

এ ছাড়াও আল-হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল ও অফিস সম্পাদক মাওলানা মু. অছিউর রহমান সভায় উপস্থিত ছিলেন।