এবার স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি পোড়ালেন রিজভী 

প্রকাশ : 2024-12-05 16:22:17১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

এবার স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি পোড়ালেন রিজভী 

‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচিতে এসে নিজের স্ত্রীর একটি ভারতীয় শাড়ি ছুড়ে ফেলে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। পরে তাতে আগুন দিয়েছেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। এসময় তিনি বলেন, ‘তারা [ভারত] যদিও আমাদের পতাকাকে অসম্মান করেছে। কিন্তু আমরা ওদের পণ্য বর্জন করবো।’ এর আগে চলতি বছর ২২ মার্চ নিজের গায়ে থাকা একটি ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলেছিলেন বিএনপির এই নেতা।

বৃহস্পতিবার [৫ ডিসেম্বর] জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাধারণ চিকিৎসক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচিতে তিনি এই কথা বলেছেন।  

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় রুহুল কবির রিজভী ব্যাগ থেকে একটি লাল রঙের শাড়ি বের করে বলেন, ‘এই সেই ইন্ডিয়ান শাড়ি। আমার স্ত্রীর ছিল, সে নিজেই এই শাড়ি দিয়েছে। আজকে সেই শাড়ি আমি আপনাদের সামনে ছুড়ে ফেললাম।’ একথা বলার পর শাড়িটি মঞ্চের সামনের দিকে সড়কে ছুড়ে দেন রিজভী। পরে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দিয়ে দেও, আগুন দিয়ে দেও’। এমন নির্দেশনার পর দলটির নেতাকর্মীরা শাড়িটি নিয়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের ঐক্য ইস্পাতের মতো কঠিন। এই ঐক্য কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা ওদের (ভারত) দেশের স্বাধীনতা ও পতাকাকে সম্মান করবো। যদিও তারা আমাদের পতাকাকে অসম্মান করেছে। কিন্তু, আমরা ওদের পণ্য বর্জন করবো।’ 

তিনি বলেন, ভারতের আগরতলায় কিছু উগ্রবাদী মানুষ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে আমাদের কর্মচারীদের আঘাত করেছে। আমাদের জাতীয় পতাকার যে খুঁটি রয়েছে, সেটি ভেঙে আমাদের পতাকাকে তারা ছিঁড়েছে। কলকাতায় যে হাইকমিশন রয়েছে সেখানে গিয়েও তারা আজেবাজে বলেছে। আমরা তাদের বাংলাদেশ বিরোধী নানা প্রচার দেখছি। তোমরা আমাদের পছন্দ করো না, তারপরও তোমাদের জিনিস কিনতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ তো মাথা নত করার মানুষ নয়। আমরা একবেলা খেয়ে থাকবো, তারপরও আমরা মাথা নত করবো না। 

শাড়ি পোড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

এসময় ভারতীয়দের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কিসের এত অহংকার। কেন আপনারা পদাবনত করে রাখতে চান? আপনারা নাকি পেঁয়াজ, আদা না দিলে আমরা খেতে পারবো না। আপনাদের আদা, পেঁয়াজ আমাদের দরকার নেই। আমাদের বান্দরবনে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর আদা হয়। আমাদের নীলফামারীতে প্রচুর আদা হয়। আমরা আদার চাষ বাড়িয়ে দেবো। আপনাদের ওপর আমরা মুখাপেক্ষী থাকবো, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আপনারা আমাদের একটু দেবেন, আর যা বলবেন তা শুনতে হবে। এটা হাসিনার মতো দুয়েকজন লোক থাকতে পারে। কিন্তু, কোটি কোটি বাংলাদেশের মানুষ এটা মানবে না।’

‘ভারতের অনেক সাংবাদিক এবং অনেক নেতা বলেছে, তাদের ওখান থেকে নাকি ডাক্তার না আসলে আমাদের চিকিৎসা হয় না’ এমন কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আপনারা কি আমাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেন? আপনারা কি বিনা টাকায় এক কাপ চা খাওয়ান? এমন নজির তো আপনাদের নেই। আমাদের দেশের লোক ওখানে গিয়ে ডলার খরচ করে। এখন কলকাতার নিউমার্কেট বন্ধ, দোকান পাট বন্ধ। সেখানে আর কোনও ক্রেতা নেই। আমাদের ডলারে এগুলো কেনা হতো।’

বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে বলেবো, ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মর্যাদাকে লুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, ওরা বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে; কিন্তু আমরা ভারতের পতাকাকে লাঞ্ছিত করবো না। আমরা আরেকটি স্বাধীন দেশের মর্যাদাকে ছোট করবো না। প্রত্যেক জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আমরা সম্মান করবো। আমরা ওদের [ভারত] মতো ছোটলোকি করবো না।’ 

জাতীয় ঐক্যের ইস্যুতে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের কথা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জাতির এই সংকটকালে আমরা এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব আগ্রাসন ঠেকাবো। যারা আমাদের অপছন্দ করে, শুধু একজন ব্যক্তি; যে ব্যক্তি বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন করেছে, ছাত্র জনতার রক্তে রাজপথ লাল করেছে সেই নিষ্ঠুর হাসিনাকে তারা (ভারত) পছন্দ করে। বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ টিকে থাকুক এটা তারা চায় না। আজ তারা (ভারত) বাংলাদেশে নানা ধরনের উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের উসকানিতে কান দেয়নি। ছোট্ট যে দুয়েকটি গোষ্ঠী উসকানিতে পা দিয়েছে, তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ যে আমাদের এখানে উসকানি দিতে পারে, এটা গোটা জাতি ধরে ফেলেছে।

কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু এবং ডা. আউয়াল প্রমুখ।

কা/আ