একবার রোপণ করলেই বছরে পাঁচবার ফলন!
প্রকাশ : 2021-11-23 10:44:11১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
নতুন ধানের জাতের উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। তার উদ্ভাবন করা নতুন জাত এবার নিজ গ্রামে চাষ হয়েছে। অবাক হওয়ার বিষয় এই ধান একবার রোপণের পর পাঁচবার কাটা যায়। বছরে এই একই ধান গাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচবার ফসল জন্মায়।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের দিগন্ত জুড়ে সোনালী ফসলের মাঠ। এই ফসলের মধ্যে জন্মেছে নতুন এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ধান। এই ধান একবার রোপণ করলে সারা বছরে পাঁচবার ফলন আসে।
ধানের এ নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। প্রবাসী এ বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরে ধানের নতুন জাত আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। তবে এক ধানগাছ থেকে পাঁচবার ফলন পাওয়াতে তিনি সন্তুষ্ট নন। যাতে ছয়বার একই গাছ থেকে ধান পাওয়া যায় এ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন। একইসঙ্গে নতুন জাতের এ ধান যাতে সারাদেশে চাষাবাদ করা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমরা কৃষির ওপর খুব নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু কৃষকরা অবহেলিত। তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে না। এটা আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। মানুষ শুধু চায় কমদামে ধান পেতে। কিন্তু কৃষকরা যে মূল্য পাচ্ছে না, সেটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষিতে কিভাবে আয় বাড়ানো যায় ব্যয় কমানো যায় এটা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করি।
তিনি বলেন, আমার চিন্তা একটা ধানগাছ জমিতে থাকবে, বিশাল আকার ধারণ করে অনেক অনেক ধান দেবে। আমি এই জিনিসটাই করতে চেয়েছি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমি করতে পেরেছি।
বোরো হিসেবে বছরের প্রথমে লাগানো এ ধান ১১০ দিন পর পেকেছে। ওই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫ দিন পরপর একবার বোরো, দুইবার আউশ এবং দুইবার আমন ধান পেকেছে। কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন বেশি, খরচও কম। তবে প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
তিনি বলেন, বছরের যেকোনো সময়ে এ ধানগাছ রোপণ করা যায়। এখন পরের ধাপগুলোতে কিছুটা কম উৎপাদন হচ্ছে। আমার চেষ্টা থাকবে, আরও বেশি ফলন বের করার।
আবেদ চৌধুরী জানান, যে জাতগুলোর ধান পাকার পর কেটে নিয়ে গেলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলো তিনি আলাদা করেন। এভাবে ১২টি জাত বের করেন। তিন বছর ধরে জাতগুলো চাষ করে দেখলেন, নিয়মিতভাবে এগুলো দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। তারপর তিনি শুরু করেন একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা। চারটি জাত একই গাছ থেকে পাঁচবার ফলন দিচ্ছে। এই চারটি জাতের ওপর ১০ বছর ধরে চলছে গবেষণা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোরো ধানের এই চারটি জাত দুই বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। পরিমাণমতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করার পর ১১০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার উচ্চতার গাছে ফসল আসে। পরে মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ওই ধান কেটে ফেলা হয়।
মে মাসের প্রথম দিকে প্রথমবার কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে চার টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন অন্তর প্রতিটি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি কখনও দুই টন, কখনও তিন টন ফলন এসেছে। সবগুলো জাত হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফলন দিয়েছে। পাঁচবার চাষ হয় বলে প্রাথমিক ভাবে নাম দিয়েছি ‘পঞ্চব্রীহি’। তবে এখনও কনফার্ম হয়নি। আমার এলাকার নামেও দিতে পারি।
আবেদ চৌধুরীর এই ধান দেখাশোনা করছেন রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, কৃষকরা খুব কম খরচে এই ধান উৎপাদন করতে পারবেন। প্রথমবার উৎপাদনে যে খরচ হয়, পরের বার উৎপাদনে তেমন খরচ নেই। জমি প্রস্তুত করে বোরো রোপণের পর আর জমি প্রস্তুত করতে হয় না। নির্দিষ্ট একটা মাপে ধান কেটে নেওয়ার পর মোড়া অংশে লতাপাতা ও ঘাস বাছাই করে সার দিই। এটুকু করলেই আবার ধানের গাছ বাড়তে থাকে।
রাসেল জানান, যদি পোকামাকড়ে ধরে তাহলে সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এই ধান মেঘবৃষ্টি নষ্ট করতে পারে না। খুব শক্ত ধানের গাছ। এলাকার কৃষকরা এ ধানের ফলন দেখে চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়েছেন।
কানিহাটি গ্রামের কৃষক পাবেল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার সন্তান ড. আবেদ স্যার যে ধান উৎপাদন করেছেন সেটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা এই ধান নিজেরা চাষ করতে চাই।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, এক গাছে পাঁচবার ধান উৎপাদন নতুন দেখেছি। এটি দেশের খাদ্যের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। এই উদ্ভাবনের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।