উপমহাদেশের সেরা জীবিত লিজেন্ড রজনীকান্ত
প্রকাশ : 2023-12-11 13:02:12১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রজনীকান্ত জন্মনাম শিবাজী রাও গায়কোয়াড় একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক। তিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক করেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল (১৯৭৫) এ অভিনয়ের মাধ্যমে, এই সিনেমার পরিচালক কে.বলচন্দ্র, যার উপদেশে তিনি সিনেমাতে অভিনয় করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তিনি ২০১৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তার শৈশব। বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি “ অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন। সিনেমায় তার আচরণ এবং সংলাপের ধরন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। “শিবাজী” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ₹২৬০ মিলিয়ন (US$ ৩.১৮ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর দিল্লি তে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত হন। অন্যতম এই জীবন্ত কিংবদন্তি। ২০১৩ সালে, তিনি ছয়টি “তামিলনাড়ু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। যার মধ্যে চারটি সেরা অভিনেতা এবং বাকি দুইটি সেরা অভিনেতা হিসেবে বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার – তামিল। তিনি ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ অর্জন করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি, তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী, উৎসাহদাতা এবং ড্রাভিডিয়ান রাজনীতিতে সেবা দানকারী।
রজনীকান্তকে তার সময়ে গণমাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। তার জনপ্রিয়তার সম্পর্কে বলা হয় যে, "ফিল্মে তার অদ্বিতীয় কথনশৈলী এবং প্রকাশভঙ্গী, সাথে সাথে রাজনৈতিক বক্তব্য এবং মানবপ্রীতি যে কোনো মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে"। অনেকে তার জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে, তার জীবনের চেয়ে বড় সুপার হিরো ভূমিকায় বিভিন্ন চলচ্চিত্রে আবির্ভাব এবং অন্যরকম স্টাইলের অভিনয়কে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রায় প্রত্যেকটি সিনেমায় রজনীকান্তের জনপ্রিয় স্টাইল বিদ্যমান যা অন্যান্য নায়কদের জন্য একটি বার্তা রেখে যায়। তার সংলাপগুলো সাধারণত তৈরী হত, নতুনত্বকে সৃষ্টি করার জন্যে, বা দর্শকদের হাসানো জন্য, কিন্তু এইসব সংলাপ দর্শকদের মনোরঞ্জনে কোনসময় বিফলে যেত না। গণমাধ্যমের অনেকে বলেন, রজনীকান্তের প্রাথমিক জীবনে তার সাথে যারা অভিনয় করেছেন, যেমনঃ “গৌতম তাদিমাল্লা” এবং “নয়নতারা”, ইনারা জনপ্রিয় হয়েছেন রজনীকান্তের সাথে অভিনয়ের জন্যে।
রজনীকান্ত তার অভিনীত অনেক সিনেমার জন্য অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, বিশেষভাবে তামিল সিনেমার জন্যে। তিনি প্রথম “ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতা পুরস্কার” অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” সিনেমার জন্যে। পরে তিনি তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তার “শিবাজী” (২০০৭) এবং “এন্থিরান” (২০১০) সিনেমার জন্যে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত, রজনীকান্ত তার বিভিন্ন সিনেমার জন্য ছয়টি “তামিল স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। তিনি “সিনেমা এক্সপ্রেস” এবং “ফিল্মফ্যান এসোশিয়েশন” থেকে চলচ্চিত্রে পর্দার সামনে অভিনত ও কাহিনীকার এবং প্রযোজনা কাজের জন্যে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন।
রজনীকান্ত “কালাইমামানি” পুরস্কার জিতেন ১৯৮৪ সালে এবং এম.জি.আর পুরস্কার জিতেন ১৯৮৯ সালে, উভয় পুরস্কার প্রদান করে তামিলনাড়ু সরকার। ১৯৯৫ সালে, “দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র কলাকৌশলী সংগঠন” (South Indian Film Artistes' Association) তাকে “কালাইচেল্ভাম” পুরস্কার প্রদান করে। ২০০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ উপাধী প্রদান করে। তিনি NDTV কর্তৃক ২০০৭ সালের সেরা বিনোদনদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন, যেখানে শাহ্রুখ খানের মত নায়ক তালিকায় ছিল। একই বছর মহারাষ্ট্র সরকার তাকে রাজ কাপুর পুরস্কার প্রদান করে। তিনি ২০১০ বিজয় পুরস্কার অনুষ্ঠানে ভারতীয় সিনেমায় তার অবদানের জন্য তাকে “চিভালিয়া সিবাজী গণেশ পুরস্কার” প্রদান করে। “এশিয়াউইক” কর্তৃক রজনীকান্তকে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে ঘোষণা করে। “ফোর্বস ইন্ডিয়া” তাকে ২০১০ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। ২০১১ সালে, NDTV তাকে “দশকের সেরা বিনোদনদাতা পুরস্কার” প্রদান করে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, NDTV তাকে "২৫ জন সেরা জীবিত লিজেন্ড" এর মধ্যে একজন হিসেবে সম্মান প্রদান করে।
সান