উত্তরাঞ্চলের ১১ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণে সহায়তা দেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-টিএমএসএস
প্রকাশ : 2024-05-20 16:50:52১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ঢাকা ২০ মার্চ, ২০২৪: দেশের উত্তরাঞ্চলের ৬ জেলার ১১ হাজার কৃষককে পরিবেশবান্ধব আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করবে দেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এ ধরণের প্রশিক্ষণে কৃষকরা আর্থিকভাবে সুবিধা যেমন পাবেন তেমনি দেশের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে প্রত্যাশা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও টিএমএসএস’ এর।
স্থানীয় সংগঠন ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) সাথে যৌথ উদ্যোগে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও রাজশাহীতে ১১ হাজার কৃষককে পরিবেশ বান্ধব আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ‘পলি হাউস’ চাষ প্রক্রিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
পলি হাউস একটি আধুনিক চাষ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে যে কোনো পরিবেশেই চাষ করা যায়। ফলে বাইরের তীব্র রোদ-ঠান্ডা-বৃষ্টিতে চাষাবাদের ক্ষতি হয় না। কৃষকদেরকে পলিহাউজ তৈরির উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে হাজারো কৃষকের আয়ের সুযোগ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্ট্যান্ডার্র্ড চার্টার্ড ব্যাংকের তরফ থেকে কৃষকদের তরমুজসহ অন্যান্য সবজির বীজ দেওয়া হবে। পাশাপাশি কেঁচোর মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করছে।
উচ্চ মানসম্পন্ন বীজের অভাব, পানির স্বল্পতা এবং সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারে দেশের কৃষিখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। টেকসই ও উৎপাদনশীল ব্যবস্থা তৈরিতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও টিএমএসএস পলি হাউস চাষ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে, যা কৃষকদেরকে ব্রকলি, ক্যাপসিক্যাম, বাঁধাকপি, লেটুসের সাথে সাথে ফল ও ফুলের মতো উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদনে সক্ষম করবে। এছাড়াও তরমুজের বীজ বিতরণের মাধ্যমে ব্যাংক কৃষকদেরকে লাভজনক চাষাবাদে সক্ষম করে তোলার চেষ্টা করছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের ১১ হাজার কৃষককে সহযোগিতা করার এ উদ্যোগে টিএমএমএসের সঙ্গে কাজ করতে পেরে প্রতিষ্ঠানটি গর্বিত।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ১ মার্কিন ডলার ব্যয় করলে তা থেকে ১০ মার্কিন ডলারের আর্থিক লাভ অর্জন করা সম্ভব। এ থেকে বোঝা যায়, অভিযোজন প্রকল্পে বিনিয়োগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দ্য অ্যাডাপ্টেশন ইকোনমি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে অভিযোজন বিষয়ে টেকসই কৃষি চর্চা ও উন্নত পানিসম্পদ অবকাঠামোর বিষয় দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পলি হাউস চাষাবাদ এই দুটি বিষয়কে একই ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে। পলি হাউজ পদ্ধতিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক দিয়ে টেকসই কাঠামো তৈরি করা হয় যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল নিয়ন্ত্রিত ও স্থিতিশীল পরিবেশে জন্মাতে পারে। ফলে দেশের কৃষকরা চাষের জল সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সার ও কীটনাশকের উপর তাদের নির্ভরতা হ্রাস করতে সক্ষম হবেন। এই যুগান্তকারী পদ্ধতি শুধু স্থিতিশীল উৎপাদনই নিশ্চিত করে না, একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অভাব, ফসলের দুর্বলতা ও কীটপতঙ্গের সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকিতে সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।’
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. হোসনে-আরা বেগম বলেন, ‘টিএমএসএস এর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। পলি হাউস চাষাবাদ পদ্ধতির প্রধান উদ্দেশ্যে হলো খরা প্রবণ এলাকাতে লাভজনক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এই পদ্ধতি কৃষকদেরকে শুধু আর্থিকভাবেই সুবিধা দেবে না, একই সাথে তা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। এই প্রকল্প কৃষকদেরকে বৈচিত্র্যময় ফসল ফলাতে সহায়তা করা ছাড়াও অসময়েও ফসল ফলাতে সাহায্য করবে, যা কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বদলে দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অবিচল অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও সহনশীলতার অসাধারণ যাত্রায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১১৯ বছর ধরে বিস্তৃত অঙ্গীকার বজায় রেখে কাজ করছে। দেশের কৃষিখাতে টেকসই উন্নয়নে সহযোগিতা বজায় রাখতে ব্যাংক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কমিউনিটিগুলোতে বিনিয়োগ করেছে। সেই সাথে তার পরিষেবাসমূহ স্টেকহোল্ডারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ গড়ে তুলেছে -যার সবগুলোই বাংলাদেশের কৃষি ভ‚-প্রকৃতি, টেকসই উন্নয়ন চাষাবাদে ব্যাংকের অঙ্গীকারের উদাহরণ।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ যা টিএমএসএস নামে পরিচিতি - বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী এনজিও। ১৯৮০ সালে অধ্যাপক ড. হোসনে-আরা বেগম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। টিএমএসএস দারিদ্র দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতাসহ একটি সমাজ গঠনে কাজ করছে। টিএমএসএস বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ই