ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের হামলার পর বিশ্ববাজারে বাড়ছে তেলের দাম

প্রকাশ : 2024-01-13 10:44:42১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের হামলার পর বিশ্ববাজারে বাড়ছে তেলের দাম

 ইসরাইলি জাহাজগুলোকে টার্গেট করায় ইয়েমেনকে শাস্তি দিতে দেশটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সহায়তা করেছে বৃটেন। তবে ওই হামলার পর বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে তেলের দাম। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে চার শতাংশেরও বেশি। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

খবরে বলা হয়েছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারে। এই অবস্থা চলতে থাকলে রাশিয়ার আক্রমণের সময় তেলের যেভাবে দাম বৃদ্ধি হয়েছিল, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃটিশ সরকারের আশঙ্কা প্রতিশোধের আকাঙ্খা থেকে হুতিরা যদি লোহিত সাগরে জাহাজগুলোকে আরও বেশি টার্গেট করে তাহলে কার্গো চলাচলে যে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে, তাতে জ্বালানি বাজারে বড় ঝাঁকুনি সৃষ্টি হতে পারে। 

এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের হামলার পর বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৯ দশমিক ২৫ ডলার হয়েছে। অন্যদিকে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৭৩ দশমিক ৮৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। হুতিদের হামলার কারণে বেশকিছু বৈশ্বিক শিপিং জায়ান্ট তাদের জাহাজগুলোকে লোহিত সাগর থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এর পরিবর্তে তারা গোটা আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে চলাচল করছে।

এতে যাত্রাপথ কয়েক গুণ পর্যন্ত বড় হচ্ছে। ডাইওয়া ক্যাপিটাল মার্কেটের হেড অব ইকোনমিক রিসার্চ ক্রিস সিক্লুনা রয়টার্সকে বলেন, আজ সকালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম পরিমিতভাবে বেড়েছে। যদিও তা এখন পর্যন্ত ৮০ ডলারের নিচে আছে। এই তেলের দাম বাড়ার কদিন আগেই দাম তিন শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। তবে এখন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে তেলের সরবরাহে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে ইয়েমেনে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন। দুই দেশের সরকারই হামলার পর এ খবর ঘোষণা করেছে। অপরদিকে দেশ দু’টির এই আগ্রাসনের জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বাহিনী। ইয়েমেনে হামলার খবর দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বাইডেন বলেন, গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত হুতিদের হামলার জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, এই মিশনে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা সমর্থন দিয়েছে।

অপরদিকে সুনাক বলেন, বৃটেনের রয়্যাল এয়ারফোর্সের যুদ্ধবিমানগুলো ইয়েমেনের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে সহায়তা করেছে। এই হামলা ছিল প্রয়োজনীয় এবং আত্মরক্ষার অংশ। তবে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রাসনের জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইয়েমেন। হুতির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ‘নির্মম আগ্রাসনের’- জন্য তাদেরকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে।’

ইয়েমেনের রাজধানী সানা, লোহিত সাগরের হুদায়দাহ বন্দর, ধামার এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাদায় ভয়াবহ বিমান হামলা হয়েছে। ইরানপন্থি হুতিরা ইয়েমেনের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নৃশংস হামলার জবাবে তারা লোহিত সাগরে ইসরাইলি জাহাজগুলোকে টার্গেট করা শুরু করে। এরইমধ্যে ইসরাইল থেকে আসা একাধিক জাহাজে হামলা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো যখন ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে, তখন হুতি বলেছে, ইসরাইলগামী জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে তারা মিত্র গোষ্ঠী হামাসকে সহায়তা করছে।

হুতিদের হামলার কারণে ইসরাইলসহ দেশটির সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলোর বাণিজ্য জাহাজগুলো লোহিত সাগর এড়িয়ে চলতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই ইয়েমেনে হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার সে হামলা চালানো হলো। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধ জাহাজ থেকে ইয়েমেনে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং মার্কিন জেট বিমান থেকে রাজধানী সানা, হুদায়দাহ এবং হুতিদের লোহিত সাগরের শক্ত ঘাঁটির বন্দরগুলোসহ মোট ১২টির বেশি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

সাইপ্রাসের আক্রোতিরি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি আরএএফ টাইফুন জেট বিমান দু’টি হুতি টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা চালায়। অবাধ বাণিজ্য চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছেন, হুতিদের সক্ষমতা ধ্বংস করতে এই যৌথ সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের আওতায় হুতিদের পাইলটবিহীন উড্ডয়ন যান, চালকবিহীন জাহাজ, স্থল-হামলায় ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, উপকূলীয় রাডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেন্টাগনের প্রধান সরাসরি হাসপাতাল থেকে এই অভিযান পর্যবেক্ষণ করেছেন। মূত্রথলির ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের কারণে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, অস্টিন সক্রিয়ভাবে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই অভিযান নিয়ে গত ৭২ ঘণ্টায় তিনি অন্তত দুইবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ করেছেন। 

অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও। এতে বলা হয়েছে, দেশটির রয়্যাল এয়ার ফোর্স ইয়েমেনে হামলা চালানোয় অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, বৃটেন সব সময় চলাচলে স্বাধীনতা এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহের পক্ষে অবস্থান নেবে। এ কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে সীমিত, প্রয়োজনীয় এবং আত্মরক্ষায় যথাযথ মাত্রার পদক্ষেপ নিয়েছি। এই অভিযানে অংশ না নিলেও এই হামলা সংশ্লিষ্ট টার্গেটগুলোর বিষয়ে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস, কানাডা এবং বাহরাইন। হুতিদের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে বৈশ্বিক জাহাজ চলাচল সুরক্ষিত করতে এই হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে এ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে হামলার ক্ষেত্রে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটি উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে রিয়াদ পুরো পরিস্থিতির উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে।

তবে ইয়েমেনে বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াতেই ইয়েমেনে পশ্চিমারা বিমান হামলা চালিয়েছে। রাশিয়া এর আগে গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রেরও সমালোচনা করেছে দেশটি। ইসরাইলি হামলায় গাজায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের মধ্যেও দেশটিকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এই অভিযানের মধ্যেই ইসরাইলকে সামরিক সহায়তাও দিয়েছে ওয়াশিংটন। উল্লেখ্য, ইসরাইলি হামলায় গত দুই মাসে গাজার এক শতাংশ মানুষ নিহত হয়েছেন।