ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল ‘টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বুনন শিল্প’
প্রকাশ : 2025-12-10 11:33:21১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির বুনন শিল্পকে অবশেষে ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কো।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ভারতের দিল্লিতে ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। এবং এই পর্ষদে প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে দ্বিতীয় নিবন্ধন।
চলমান এই সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য একটি অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের অধিক সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি। টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’
এই অর্জন বাংলাদেশের সব তাঁতি এবং নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত; যিনি বর্তমানে ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি।
এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ)’ এর সামগ্রিক সুরক্ষা উদ্যোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের আরও বহু অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে বলে মন্তব্য করে খন্দকার তালহা বলেন, নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে এই রকম আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেস্কো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে রবিবার আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল এনানি যোগ দেন।
এর আগে ২০০৮ সালে বাউল সঙ্গীত, ২০১৩ সালে জামদানি শাড়ি, ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা, ২০১৭ সালে শীতল পাটি এবং ২০২৩ সালে ঢাকার রিকশা ও রিকশা-চিত্র একই রকম স্বীকৃতি পেয়েছিল।
ঢাকার অদূরে দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা টাঙ্গাইলের নামানুসারেই ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ পরিচিত। এখানকার শত শত পরিবার বংশপরম্পরায় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। দেশীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এই শাড়ির কদর রয়েছে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে। বিভিন্ন উৎসব ও বিয়ের অনুষ্ঠানে এই শাড়ির ব্যবহার ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও দক্ষ কারুশৈলীর এক অনন্য সংমিশ্রণ। এতে ফুটে ওঠে স্থানীয় সংস্কৃতির নান্দনিক নকশা ও মোটিফ। সাধারণত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সুতা রং করা, তাঁত বোনা এবং নকশা তৈরির কাজ করেন। আর বাড়ির নারীরা চরকায় সুতা কেটে বা সুতা গুছিয়ে তাদের কাজে সহায়তা করেন।
টাঙ্গাইল শাড়ি কেবল একটি সাংস্কৃতিক স্মারকই নয়, এটি শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস। তবে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং মেশিনে তৈরি সস্তা কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে বর্তমানে এই শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই পারিবারিক পেশায় আসার আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল শাড়ির বুনন শিল্প ইউনেস্কোর মানবজাতির অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তাঁতিরা।