ইউক্রেন ইস্যুতে আরব বিশ্বের সমর্থন চায় রাশিয়া

প্রকাশ : 2022-07-25 10:12:47১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ইউক্রেন ইস্যুতে আরব বিশ্বের সমর্থন চায় রাশিয়া

ইউক্রেন ইস্যুতে আরব বিশ্বের সমর্থন চায় রাশিয়া। এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া ঠেকাতে এমন সমর্থন চাইছে মস্কো। যুদ্ধের মধ্যেই শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রো ছুটে গেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। কায়রোতেই আরব লিগের সদর দফতর অবস্থিত। সফরে এই জোটের স্থায়ী প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার সকালে ল্যাভরভ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গীতের সঙ্গেও তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

মিসরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরের কদিন আগেই ফোনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় বৈশ্বিক জ্বালানি তেল সরবরাহ এবং ওপেক প্লাসে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে কথা হয় দুই নেতার।

১৯ জুলাই মিত্র দেশ ইরান সফরে গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন পুতিন। বৈঠক করেন তুর্কি ও ইরানি নেতার সঙ্গে। এর ধারাবাহিকতায় এবার মিসরে আরব লিগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ মিসরের সঙ্গে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সপ্তাহেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কর্পোরেশন রোসাটম মিসরের প্রথম পারমাণবিক প্ল্যান্টে দীর্ঘ বিলম্বিত নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭০ সালে নীল নদের উপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের পর রাশিয়ার ও মিসরের মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। রাশিয়ার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সামরিক সরঞ্জামও আমদানি করে মিসর। 

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম আমদানিকারক দেশগুলোর একটি মিসর। এর বেশিরভাগই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে দেশটি। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কোনও একটি পক্ষ নিতে অস্বীকার করে কায়রো। বরং মস্কো এবং পশ্চিম দুনিয়ার সঙ্গে সমান্তরালে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে তারা।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তবে মিসরের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে। পশ্চিমা অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গমের অন্তত একটি রাশিয়ান চালান ফিরিয়ে দিয়েছে কায়রো। কেননা, ইউক্রেনের দাবি ছিল, ওই চালানে থাকা গম দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে চুরি করেছে রাশিয়া। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আরব বিশ্ব এবং আফ্রিকার দেশগুলোর কাছে অপশ্চিমা বিকল্পের প্রতিও আগ্রহ রয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক এইচ.এ. হেলিয়ার। তার মতে, মিসর নিজেকে এমন একটি সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না যেখানে সবকিছুর ওপর পশ্চিমাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

মিসরের পর আফ্রিকার আরও তিন দেশ ইথিওপিয়া, উগান্ডা ও কঙ্গো সফরের কথা রয়েছে তার। সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ল্যাভরভ লিখেছেন, ঔপনিবেশিক জোয়াল থেকে মুক্তির সংগ্রামে আফ্রিকানদের প্রতি মস্কোর আন্তরিক সমর্থন রয়েছে। নিবন্ধে ইউক্রেন ইস্যুতে আফ্রিকানদের ‘ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের’ও প্রশংসা করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।