ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে, এমনটি নয়: ড. ইউনূস
প্রকাশ : 2025-02-21 19:01:02১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

পৃথিবীর অনেক দেশে একজন নাগরিক একাধিক ভাষায় কথা বলেন। এজন্য ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে, এমনটি নয় বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পদক হিসেবে একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও প্রাইজ মানি দেওয়া হয়।
একটি নতুন ভাষা শিখলেই পুরোনো ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়বে এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে একই নাগরিক সাবলীলভাবে কয়েকটি ভাষায় কথা বলবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা শৈশব থেকে নানা ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। স্কুলে পড়ার সময় প্রত্যেক ছাত্রকে অন্তত একটি ভিন্ন ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়। ছাত্ররাও আনন্দ সহকারে সেটা করে থাকে। ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে এরকম কোনো চিন্তা তাদের কারো মাথায় আসে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রভাষা বাংলা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের আন্দোলন সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা। এটি ছিল রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা দ্রুতগতিতে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করে চলেছি। এজন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রধানত দায়ী। প্রযুক্তির প্রাধান্য সঙ্গেই ভাষার প্রাধান্য আসে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে দেশের প্রযুক্তি পৃথিবীতে প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে, তার সঙ্গেই প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে প্রযুক্তিদাতা দেশের ভাষা সারা পৃথিবী এই ভাষা শেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। যে দেশ পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে সে দেশের ভাষার জন্য সারা পৃথিবী ঝুঁকে পড়বে।সরকারপ্রধান বলেন, প্রযুক্তি ছাড়াও যেকোনো একটি দিক থেকে জাতি নেতৃত্ব দিতে পারলে, সে দেশের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বেই।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা দ্রুত গতিতে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করে যাচ্ছি। এর জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রধানত দায়ী। প্রযুক্তির প্রাধান্যের সঙ্গে আসে ভাষার প্রাধান্য। যে দেশের প্রযুক্তি পৃথিবীতে প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে তার সঙ্গে প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে প্রযুক্তিদাতা দেশের ভাষা। সারা পৃথিবী এ ভাষা শেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এর আগে ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যেও প্রধান উপদেষ্টা মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্বের প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীকে মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব জাতি-গোষ্ঠী মাতৃভাষার গুরুত্ব না বুঝলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হবে না। এছাড়া পৃথিবীর কোনো ভাষাকেই বিলুপ্ত হতে দেওয়া উচিত নয় বলে জানান তিনি।
মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মানুষের পরিচয়ের মূলেই মাতৃভাষা রয়েছে। সবাইকে নিজের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে হবে। অন্যথায় থ্রি জিরো তত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ কাউকে পেছনে রেখে এগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মাতৃভাষাতেই অভ্যন্তরীণ অভিব্যক্তির যথার্থ প্রকাশ হয়। জুলাই অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশ নির্মাণের ইতিহাসে মাতৃভাষার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। ভাষায় জাতিগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকে। এর ফলেই জাতিগুলোর মধ্যে এত বৈচিত্র্য দেখা যায়।
সরকারপ্রধান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে হলে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে একটি ভাষাকেও বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাবে না।