আসন বণ্টন নিয়ে সময় চায় আ.লীগ, ১৪ দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ : 2023-12-11 12:16:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ৪০টি আসন চেয়েছে ১৪ দলের শরিক দলগুলো। বর্তমান সংসদে দলগুলোর মাত্র আটটি আসন থাকায় এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তত ২০টিতে ছাড় চায় তারা। কিন্তু গেলবারের চেয়েও এবার বেশি আসন চাওয়ায় তিন দফা বৈঠকের পরও সমঝোতা ঝুলিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শরিক কয়েকটি দল বলছে, নির্বাচনের খুব বেশি সময় বাকি না থাকায় প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই দুই-তিন দিনের মধ্যে আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে আওয়ামী লীগকে তাগিদ দিয়েছে। ১৪ দলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেলে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদকের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ১৪ দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে এ বৈঠক হয়। আগের দুই দফা বৈঠকের মতো এবারও সিদ্ধান্ত ছাড়া আসন বণ্টনের আলোচনা শেষ হয় বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
সূত্রমতে, বৈঠকে ৪০টির বেশি আসন দাবি করে ১৪ দলের শরিক দলগুলো। এ নিয়ে আলোচনা বাড়তে থাকায় বর্তমান সংসদে যে দলের যে কয়টি আসন আছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে শর্ট লিস্ট তৈরি করার কথাও উঠেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন বণ্টন নিয়ে সুস্পষ্ট কোনও বক্তব্য না দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন (১৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। এ নিয়ে জোটের বড় দুটি দলের শীর্ষ একাধিক নেতা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। ভোটের সময় কম থাকায় দুই-তিন দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসার তাগিদ দেন জোট নেতারা।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ একটি বিষয় আলোচনা হয়েছে। সেটা হচ্ছে সিট সমঝোতা। তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছে আলোচনা করবে। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা এখনও প্রস্তুত করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, বৈঠকের বর্তমান সংসদে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাসদের তিনটি, তরিকত ফেডারেশনের দুটি, জাতীয় পার্টির (জেপি) একটি আসন থাকলে এই দলগুলো তিন-চার গুণ বেশি আসন চেয়েছে। সাম্যবাদী দল, বাসদ, গণতান্ত্রিক পার্টিসহ জোটের বাকি দলগুলোও কয়েকটি করে আসনে ছাড় দাবি করে।
আরও জানায়, একপর্যায়ে বর্তমান সংসদে থাকা আসনগুলোর ছাড় নিশ্চিত করে আরও কিছু আসন দলগুলোকে দেওয়ার কথা বলা হয়। কোনও কোনও দল আসন দাবির শর্ট লিস্ট দিয়েছে। কিন্তু অনেক দলের সাংগঠনিক শক্তি সেভাবে না থাকায় তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ। যারা বেশি জনসমর্থন থাকার দাবি করেছে, তাদের নৌকা ছেড়ে নিজদের প্রতীকে ভোট করার কথাও বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা চারটি আসনের শর্ট লিস্ট দিয়েছি। তার মধ্যে আগে ছাড় পাওয়া দুটি আসনও রয়েছে। অন্য দলগুলো তাদের চাহিদামতো আসন চেয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে কেবল ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নৌকা প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে জাপার বৈঠকের বিষয়টি কথা প্রসঙ্গে উঠলেও বিষয়টি আওয়ামী লীগের কৌশলগত ব্যাপার বলে জানানো হয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা এখনও নিষ্পত্তি করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কোন দলের প্রার্থী কে হবেন, কোন আসন থেকে হবেন, সেই তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হলে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীদের তালিকা আমরা দেশবাসীকে জানাতে পারবো। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত আসনগুলো ছাড়া বাকি আসনগুলো উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিটি দল তাদের প্রতীকে নির্বাচন করবে।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ১৪ দলের জোটগতভাবে এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে আসন বণ্টনের আলোচনা হলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি সমন্বয় করতে জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করে দেন শেখ হাসিনা।
এরপর মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে আমুর বাসায় বৈঠক করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে দল দুটির সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা। সেখানে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও, অন্য দলগুলো তাদের রেখে এভাবে দুটি দলের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে আজকের বৈঠকে আপত্তি তুলেছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে আমির হোসেন আমু ও ওবায়দুল কাদের ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
জোটের নেতাদের মধ্যে আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীণ আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২) ও জাতীয় পার্টি সেলিম ওসমানের ( নারায়ণগঞ্জ -৫) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ। এছাড়া ১৪ দলীয় শরিকদের ৭ আসনেও প্রার্থী দেয় ক্ষমতাসীনরা।
কাআ