আল্লাহ না করুক, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে: ফখরুল

প্রকাশ : 2022-06-12 15:12:29১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আল্লাহ না করুক, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে: ফখরুল

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো দায় নেই।’ আল্লাহ না করুক, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারকেই দায় নিতে হবে। অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।’ 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ রোববার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ দাবি জানান। 

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কয়েক বার মৃত্যুর হাত থেকে চিকিৎসকদের সুচিকিৎসায় বেঁচে এসেছেন। গতকাল রাতে চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তে তিনি ফিরে এসেছেন।এখন উনার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, যা দেশে নেই। তাই, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠাতে হবে।’ 

রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের সলিমুদ্দিন, কলিমুদ্দিন, সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এর কারণ সরকার তাকে ভয় পায়। তিনি যদি রাস্তায় নামেন তাহলে হ্যামিলিয়ানের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষের ঢল নেমে আসবে।

রোববার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই বিক্ষোভ সমাবশের আয়োজন করে।

সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। যেটা আমাদের এখানে নেই। যেটা বিদেশে আছে। বারবার চিকিৎসকরা বলছেন। আমদের খুব সোজা কথা, আল্লাহ না করুন বেগম খালেদা জিয়ার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সরকারকেই দায় নিতে হবে। এ দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। টেনেহিঁচড়ে নামাবে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার দাবিতে এই কর্মসূচি। তিনি শুধু একটি দলের প্রধান নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। ছিলেন একজন গৃহবধূ, কিন্তু যেদিন বাংলাদেশের শত্রুরা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলো সেদিন সময়ের প্রয়োজনে, মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া পতাকা হাতে তুলে দিয়েছেন। নয় বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এরপর থেকে যতবার ক্ষমতায় এসেছেন ততবার দেশ এবং গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কথা স্পষ্ট। তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠাতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরে দেশের মানুষ কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত না। এখনো কিছুটা সময় আছে। রক্ষা পেতে পারেন। এরপর আর পালাবার পথ পাবেন না। সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। যে দুর্বার আন্দোলন হবে তাতে আপনাদের রক্ষা হবে না।

প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তো কোনো ব্যবস্থা নেনইনি, বরং কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা করেছেন। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়েনি। অথচ করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা ফুটে উঠেছে।

পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতদিন টাকা পাচার করেছেন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে, বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছেন। এখন সেগুলো জায়েজ করতে কর দিয়ে টাকা ফেরত আনার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন এই উদ্দেশ্যে সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দেশের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দুর্বার গণআন্দোলন শুরু হবে। সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং জনগণের কল্যাণ একটি সরকার গঠন করবো।

বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের মন্ত্রী, নেতারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ পেলেও খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেন, জনগণ পাল্টা জবাব দেবে। সবদিক থেকে মানুষের সাড়া পড়ে গেছে, সবাই সরকারের পতন চায়।

এ সময় অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য সচিব যথাক্রমে আমিনুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব,আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসবেক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, কৃষকদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।