আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই, তবে আদেশ প্রত্যাহার চান রাঙ্গা

পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর দলের চেয়ারম্যানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার একদিন পর সুর পাল্টালেন জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গা। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দেওয়া অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই। তবে আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।’ 

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বুধবার রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি হুঁশিয়ারি দেন তাকে বাদ দিয়ে জিএম কাদের কীভাবে রাজনীতি করেন। জিএম কাদের রংপুর নামতে না দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। রাতে রংপুরে পক্ষে বিপক্ষে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে এলেন রাঙ্গা।  

দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে কীভাবে রাজনীতি করে সেটা দেখে নেওয়া হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, গতকাল অব্যাহতির আদেশ পাওয়ার পরে আমি একটু রাগান্বিত ছিলাম। এটা অস্বীকার করবো না। আমি চেয়ারম্যানকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম সেটা তুলে নিয়েছি। রংপুরেও আর কোনো ঝামেলা হবে না। সেটা গতকাল রাতেই বলে দিয়েছি।

রাঙ্গা বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। এটা বলার জন্য আজকে এই সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছি। আমি আমার বহিষ্কার আদেশে অখুশি নই। আমি চাই দলটা যেন সুন্দরভাবে চলে। না ভেঙে যায়। দলটাকে ছোট করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে আমি নিজেই দলে থাকবো না।

কেন আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে করার বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। এটা আমি একটা টেলিভিশনকে বলেছি। এই জন্য আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে করছি।

চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে সেটা নিয়ে এতদিন পরে কেন কথা বলছেন- জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করার চিঠি দেওয়া পর তিনি (রওশন এরশাদ) আমাকে বলছেন- তুমি তো আমার সব সর্বনাশ করছো। তুমি তো সব চিঠিতে সই করেছো। তখন আমি উনাকে বলেছি- এটা সঙ্গে যে আমি নেই। প্রক্রিয়া যে সঠিক ছিল না, এটা আমি কোনো গণমাধ্যমে বলে দেবো। এরপর আমি এই নিয়ে কথা বলছি।

প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে কেন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, তখন স্বাক্ষর না করলে আমাকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। 

আগামীতে কি আপনি রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকবেন কি না জানতে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেটা এখনও ঠিক করিনি।

আগামীতে যদি জাতীয় পার্টির রাজনীতি না করতে পারলে অন্য কোনো দলেও যাবো না বলে উল্লেখ করেন রাঙ্গা। বলেন, আমি আজকে এখানে পার্টির কোনো লোক নিয়ে আসিনি। পরিবহন সেক্টরের কিছু লোক এসেছে।

আগামীতে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে বলে মনে করছেন সদ্য অব্যাহতি পাওয়া দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রাঙ্গা।  তিনি বলেন, আগামীতে শুধু দুইটি রাজনৈতিক দল থাকবে। কোনো দুটি থাকবে সেটা আমি বলবো না। তবে সেখানে আমরা (জাতীয় পার্টি) থাকবো না।

রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে অখুশি হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির ভাঙনের আশঙ্কা করছেন অনেকে। আপনি কি মনে করেন- জবাবে তিনি বলেন, ‘আমিও শঙ্কিত। তবে আশা করি পরিস্থিতি ভালো হবে। দল যাতে না ভাঙে সেজন্য প্রয়োজনে আমি পদত্যাগ করতেও রাজি আছি।’