আন্দোলনের নামে বোমা মারলে একটাকেও ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : 2022-11-26 19:16:24১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আন্দোলনের নামে বোমা মারলে একটাকেও ছাড়ব না:  প্রধানমন্ত্রী

সহ্য করাকে দুর্বলতা মনে না করার পরামর্শ দিয়ে বিএনপিকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আন্দোলনের নামে বোমা মারলে, মানুষকে অত্যাচার করলে একটাকেও ছাড়ব না।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে বলেছি আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারার বা বোমা মারার বা গ্রেনেড মারার বা এ ধরনের অত্যাচার করতে যায় তাদের একটাকেও ছাড়ব না। এটা হলো বাস্তব কথা। ’

বিএনপি আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি দেখে যেন এটা মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা না। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নি সন্ত্রাস, এটা কোন মানুষের কাজ। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!’

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এদেশের জনগণের জন্য কাজ করছি। জনগণের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু অপর পক্ষে বিএনপি কী করে? তারা ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার, নির্যাতন। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন ২০০১ এর নির্বাচনের পর কীভাবে বিএনপি এবং জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারা বাংলাদেশে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। ’

‘১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলো, আমরা আইভী রহমানকে এবং মহিলা আওয়ামী লীগে চার নেত্রীসহ ২২ জন নেতা-কর্মীকে হারিয়েছি। বিএনপি জামায়াত এত জঘণ্য কাজ করতে পারে, যেটা কল্পনাও করা যায় না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলন করতে যেয়ে একদিকে বিএনপির লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডা বাহিনী, জামায়াত-শিবির, আরেকদিকে পুলিশ বাহিনী আমাদের নারীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে। রাস্তায় ফেলে কীভাবে মেরেছে, নির্যাতন করেছে, বুটের লাথি মেরেছে, তাদের ওপর অত্যাচার করেছে। এমনকি  সদ্য প্রসূত ‍শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী কেউ রেহাই পায়নি। এভাবে তারা অত্যাচার নির্যাতন করেছে। কই আমরা তো কিছু করছি না। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। ’

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া রাজনতিক দলের ইচ্ছাধীন বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছে নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যাদের না থাকে তারা হয়তো নির্বাচন করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি করলে তারা মেনে নেয় না।

ভোটচোরেরা ভোট চুরি করতে জানে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরির জন্য বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে টেনে নামিয়েছিল। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য হয়েছিল।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা প্রকারান্তরে নাকচ করে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেকে বলেন ডায়ালগ করতে হবে। আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া? সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ-সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাতিকারী, আর অর্থ ও অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী। আর জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে! আলোচনা করতে হবে! আবার মানবাধিকারের কথাও বলেন। এটা কেমন ধরনের কথা- জিজ্ঞাসা করি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিল- শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও কখনও হবে না। আওয়ামী  লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহ এ ধরনের গর্ভভরা কথা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। এজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে।

প্রত্যেক মা-কে সজাগ থাকতে হবে

সন্তানদের বিপথে যাওয়া ঠেকাতে মায়ের বিরাট ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়েরদের বলবো, তাদের সন্তান যেন কোনোরকম জঙ্গিবাদ, মাদক বা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। প্রত্যেক মা-কে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। তারা যেন নিজের মনের কথা মায়ের কাছে খোলামনে বলতে পারে, সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ছেলেমেয়ে কখনো বিপথে যাবে না। তাদের খবর রাখতে হবে। কী করছে, কোথায় যাচ্ছে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

বাড়ির আশপাশ ও ছাদে চাষ করুন

বাড়ির আশপাশ ও ছাদে চাষাবাদের আহ্বান জানিয়ে নারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে মন্দা। তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। আমেরিকা-ইউরোপের স্যাংকশন। প্রত্যেকটি জিনিসে দাম বেড়ে গেছে। দু’শ টাকার গম এখন ৬’শ টাকায় কিনতে হয়। ৮০০ ডলারের পরিবহন খরচে এখন ৩৮০০ ডলার। তারপরও আমরা আনছি। আমাদের খাদ্যাভাব যেন না হয়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসি ২৬ লাখ মেট্রিন টন খাদ্য ঘাটতি। আজ দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই। তারপরও আমার অনুরোধ, এখন ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যাদের যেখানে জমিজমা আছে, অথবা বাড়ির ছাদে আপনারা বাগান করেন। তরিতরকারি-শাকসবজি লাগান। ফলমূল লাগান। যা পারেন, টমেটো, সিম যা পারেন লাগান। একটি মরিচ গাছ লাগালেও তা খেতে ভালো লাগবে। কোনও জায়গা যেন অনাবাদী না থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা দেখা গেছে। অনেক দেশে দুর্ভীক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে এটা যেন না হয়। প্রত্যেকে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। এটা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। নিজের হাতে গাছ লাগালে সেই গাছের ফল-তরকারির আলাদা আনন্দ হবে। সৃষ্টির একটা আলাদা আনন্দ আছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনিদের রাজত্ব আর যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব। আওয়ামী লীগই একমাত্র  এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।