আদমদীঘিতে ধানের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে আড়তদার ও ব্যবসায়িরা
প্রকাশ : 2024-05-29 17:08:38১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
উত্তরাঞ্চলের মধ্যে চিকন ধান উৎপাদনে শীর্ষে বগুড়া, নওগাঁ ও নাটোর জেলা। এই ৩ জেলার মধ্যে বগুড়া জেলার পশ্চিম অঞ্চল আদমদীঘি উপজেলাও রয়েছে। এখানকার আড়তদার-ব্যবসায়ি নিয়ন্ত্রণ করে এ অঞ্চলের চিকন ধানের বাজার দর। দু’ তিন দিন পর পর প্রতি মণে ৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে পরের ৪-৫ দিন প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম কমিয়ে দেন। এটা হলো এখানকার আড়তদার ব্যবসায়িদের পুরানো কৌশল । আদমদীঘিতে ধানের বাজার দর নির্ভর করে আড়তদারদের দয়া মর্জির উপর। খোজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের সিদ্ধান্তই এখানকার বাজার দর। আর বাজার দর ২ থেকে ৩ ঘন্টার আদমদীঘি ও পার্শ্ববর্তী আবাদপুরের ধান ব্যবসায়ীরা জানান,এ অঞ্চলের মধ্যে আবাদপুকুর হাটে ধানের বাজার দর সবচেয়ে বেশি থাকে। এত বেশি দরে কৃষক আর কোন হাটে ধান বিক্রি করতে পারে না। মৌসুমে প্রতি দিন এ বাজারে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার মণ ধান কেনা বেচা হয়। এছাড়া আদমদীঘির বিভিন্ন আড়ৎতে আমদানি হয় অতি চিকন লম্বা জিরা শাইল ধান। এ ধানের কদর কুষ্টিয়া খাজা নগর, নওগাঁ, মহাদেবপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঈশ্বরদী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মিলারদের মধ্যে (চালকল মালিক)। এ জিরা শাইল ধান থেকে মিনিকেট, নাজির শাইল, জিরা শাইল, বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন নামের চাল তৈরি হয়। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ থেকে জানা গেছে, জিরা শাইল ধান মূলত ভারতীয় জাতের। কৃষক ও চাল ব্যবসায়ী চালকল মালিক ও ভোক্তাদের চাহিদার কারণে এ ধানের চাষ বিস্তার লাভ করেছে। ভারত থেকে এ ধানের বীজ প্রথমে বাংলাদেশে আসে। জিরা শাইল ৪ জাতের ধান আছে- রাশিয়ান জিরা শাইল, জিরা শাইল, সুগন্ধি জিরা শাইল, মাঝারী জিরা শাইল। আজ থেকে দুইযুগ আগেও এ ধানের জাত বাংলাদেশে ছিল না। চিকন এ ধানের আবাদ করতে বেশি সার ব্যবহার করতে হয় না। ফলন ভাল হয় বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়। বাজার দরও খুব ভাল পাওয়া যায়। এ জন্য কৃষক এ ধান চাষে বেশি আগ্রহী। বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, রাজশাহী জেলার সিংহ ভাগ জমিতে জিরা শাইল ধানের আবাদ হচ্ছে। প্রতি বছর এ ধান চাষের আওতা বাড়ছে। আমন মৌসুমেও এ ধান চাষ করা যায়। মৌসুমে জিরা শাইল এক হাজার থেকে এগার’শত টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও অমৌসুমে জিরা শাইল ধান বিক্রি হয় থেকে বার’শত থেকে চৌদ্দশত টাকা মণ। আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন ধানের আড়ৎ ঘুরে একাধিক ধান বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেজি ও স্থানীয় সেরের মারপ্যাঁচে বিক্রিতাদের ঠকানোও হয়। ৩৭ কেজি ৫০০ গ্রামে স্থানীয় এক মণ (৪০ সের)। কিন্তু এক বস্তা ধানের ওজন ধরা হয় ৭৮ কেজি সমান দুই মণ। বাংলা হিসাবে দুই মণ সমান ৭৫ কেজি। সেখানে আড়তদাররা ধান কেনার সময় ৭৭ থেকে ৭৮ কেজি মেপে নেন। আড়তদাররা যখন মহাজনদের কাছে ধান বিক্রি করে তখন তারা ৭৬ কেজিতে দুই মণ ধরে দেয়। এভাবে তারা প্রতি বস্তাায় দুই কেজি করে ধান বেশি নেয়। কোন আড়তদার এক হাজার বস্তা ধান যে দামে কিনবে সেই দামেই বিক্রি করলে তার কমপক্ষে দুই হাজার কেজি ধান অতিরিক্ত থাকে। এই দুই হাজার কেজি সমান ৫২ মণ ২৬ সের ধান। এভাবেই রাতারাতি ধনী হচ্ছে আদমদীঘির ধান ব্যবসায়িরা।