আজ ১৭ নভেম্বর, শ্রীনগর মুক্তদিবস
প্রকাশ : 2022-11-17 11:51:23১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ মেনে শ্রীনগরের ছাত্র সমাজ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে প্রত্যহ পথসভা ও মিছিল করে জনগণকে সচেতন করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ৮ মার্চ সকালে মাইকযোগে বেতার থেকে জনগনকে শোনানোর ব্যবস্থা করে থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।এ ভাষণ ছিল দেশ স্বাধীন করার দিক নির্দেশনাপূর্ণ মূল অনুপ্রেরণা ও শক্তি।
১৩ মার্চ শ্রীনগর থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যেগে স্থানীয় খেলার মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবদুস শহীদ খান সেন্টু উপস্থিত ছাত্র জনতাকে বাম হাত বুকে ও ডান হাত ঊর্ধ্বে তুলে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করার শপথ করান। সভার সভাপতি হিসেবে শেষে আমি পাকিস্তানী পতাকা জ্বালিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা সকলকে নিয়ে উত্তলন করি।
বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীনগরের জনগণ সম্পূর্ণভাবে পালন করেন। ২৫ মার্চের কালো রাতের পরে ঢাকা থেকে প্রত্যহ শত শত মানুষ শ্রীনগরে একরাত থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণা লের জেলাসমূহে চলে যেতে শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক শ্রীনগরের মথুরাপাড়ার সন্তান মধুসূদন দে, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় মধু দা, তিনি, তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধুর হত্যা সংবাদে শ্রীনগরবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শ্রীনগরের সমষপুরের সন্তান প্রখ্যাত ব্যাংকার আ ন হামিদউল্লাহর দশ বছরের পুত্র জাকিউল্লাহ টুটুলের শহীদ হওয়ার সংবাদে ছাত্র জনতার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে।
২৯ মার্চ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা থেকে শ্রীনগর এসে জানান, ‘বঙ্গবন্ধ দেশ স্বাধীন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁকে পাকিস্তানী সৈন্যরা গ্রেফতার করেছে।’ তিনি ছাত্র-জনতাকে নিয়ে শ্রীনগর থানার রাইফেল ও গুলি নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
১১ মে,১৯৭১ একদল পাকিস্তানী সৈন্য শ্রীনগর ডাকবাংলায় এসে আস্তানা পাতে। কতিপয় দালাল সৈন্যদের পথ ঘাট চিনিয়ে দেয়। তারা শ্রীনগর বুরুজের পাড়া, রাঢিখাল, মাইজপাড়া, ষোলঘরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয় ও লুটতরাজ চালায়। এ সময়ে দোগাছিতে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের পৈত্রিক বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে বেতন খাদ্য না আসায় সৈন্যরা পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। শ্রীনগর বেজগাঁওর আনোয়ার হোসেন খান একজন রাজাকারর সহায়তায় পাকিস্তানী সৈন্যদের গতিবিধির ওপর তীক্ষè নজর রাখতে থাকে। রাজাকারের মাধ্যমে মুক্তি বাহিনী জানতে পারে যে ১৭ নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা কেরাইয়া লৌহজংয়ের দিকে নৌকাযোগে পলায়ন করবে। আনোয়ার খান সকল মুক্তিযাদ্ধা ,বেসামরিক প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে।
ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।১৭ নভেম্বর ১৯৭১ শ্রীনগরের জনগণ তাই করেছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো বৈঠা, লগি, লাঠি নিয়ে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলে পাকিস্তানী হানাদারদের খতম করেছে শ্রীনগরের সংগ্রামী জনতা। যা ছিল প্রকৃতই এক জনযুদ্ধ। এই যুদ্ধকে উপজীব্য করে প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ তার বিখ্যাত কবিতা ‘শ্রীনগরে যুদ্ধ’ লিখেছিলেন। উল্লেখ্য, তার বাড়ি শ্রীনগর উৃপজেলার বাসাইলভোগ গ্রামে। শ্রীনগর যুদ্ধের এক মাসের মাথায় পাক হানাদার বাহিনঅ আত্মসমর্পন করে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে।
লেখকঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, গবেষক ও কলাম লেখক।