আগামী নির্বাচনে ইভিএম বাড়ানোর পক্ষে আওয়ামী লীগ
প্রকাশ : 2022-06-28 20:48:14১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখ্যযোগ্য হারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে হবে। রাখঢাক করার কিছু নেই। দিস ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার।’ ওবায়দুল কাদের আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত বৈঠকে অংশ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ইভিএমে ভোটগ্রহণের পদ্ধতি বৃদ্ধি করতে হবে। কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তি বৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইভিএমে ভোটগ্রহণ জরুরি।
বর্তমান সরকারের অধীনে নয়, বরং ইসির অধীনেই নির্বাচন হবে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এ সময় নির্বাচন সম্পর্কিত সব ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে স্বাধীন কমিশনের। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইসির তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন রুটিন কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বর্তমান সরকার ইসির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, একটা কথা কেউ কেউ বলে থাকে তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে ইসির অধীনে। ইসিকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেবো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যেসব বিষয় নির্বাচন রিলেটেড, সেগুলো ইসির অধীনেই থাকবে। এখানে সরকারের করণীয় কিছু নেই। সরকার (নির্বাচনে) কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে মোটেও আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন দলগুলোর সঙ্গে কারিগরি বিষয়ে ভোটদান নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে। আমাদের আমন্ত্রণ জানানোয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ। এছাড়া তিনি বিতর্কিত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রিটার্নিং অফিসার থেকে পোলিং অফিসার নিয়োগসহ একগুচ্ছ দাবির কথা বলেন।
সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সদ্য শেষ হওয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় কমিশনকে ধন্যবাদ জানায়।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ও লে কর্ণেল (অব.) ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও সহ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমার বিশ্বাস বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। পানি ঘোলা করে খাবে, আর কী?
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে (২৮ জুন) যে রাজনৈতিক দলগুলো এখানে আসছে। আমার মনে হয় অধিকাংশই ইভিএমের পক্ষে বলেছেন। আজ অনেকগুলো দল এসেছে। আমরা সবার কথা শুনেছি। ইভিএম নিয়ে বিরুদ্ধেও বলেছেন দুয়েক জন। এটা তো গণতন্ত্র, বিউটি অব ডেমোক্রেসি। বিরুদ্ধে তো বলবেনই। ভিন্নমত থাকতেই পারে। তাতো কোনো অসুবিধা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমার বিশ্বাস যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। আমরাও চাই বিএনপি আসুক। আমরাও চাই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। সে কারণে বিএনপির মতো একটা বড় দল বাইরে থাকবে, এটা আমরাও চাই না। আমরা চাই তারা আসুক। '
বিএনপি নির্বাচনে আসবে কীভাবে জানলেন, আপনারা কী বিএনপি চাহিদার অংশিক পূরণ করবেন- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা অনেক কথাই বলে, শেষ পর্যন্ত আসল কথায় চলে আসে। আমি একটা কথা বলি, নির্বাচন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এটা বিএনপির অধিকার। সরকারের সুযোগ বিতরণ না। এটা একটা সুযোগ নয় যে, সরকার বিতরণ করবে। এটা হচ্ছে বিএনপির অধিকার। দল হিসেবে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে নির্বাচনে তারা আসবে। আমরা এটাই বিশ্বাস করি। ’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, দল হিসেবে আমরা বলেই যাচ্ছি। আমরা পদ্মা সেতুতেও দাওয়াত দিয়েছি। দেখেন আমাদের একটা পজেটিভ এটিচিউড আছে। সে কারণে আমরা তাই করি। তারা নিজেরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে। হয়তো শেষ বেলায়। ঘোলা করে খাবে আর কি।
আওয়ামী লীগ সাধাররণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখেন একটা কথা সবাই বলে, সরকারের অধীনে। আমি অবাক হয়ে শুনি ফখরুল সাহেব বলেন এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। ইলেকশন তো এই সরকারের অধীনে হবে না। ইলেকশন হবে ইলেকশন কমিশনের অধীনে। সরকার একটা কর্তৃত্বপূর্ণ স্বাধীন ভূমিকা ফর ক্রেডিবল, ফেয়ার অ্যান্ড ফ্রি ইলেকশন। যে যে সহযোগিতা, ফ্যাসিলিটিজ দরকার, সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস আমরা আগেও দিয়েছি। এখনো আমরা নির্বাচন কমিশনকে আশ্বাস দিয়েছি। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।
আপনারা কি সব আসনে ইভিএম চান- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই। আমরা যখন দেখেছি একটা ইউনিয়নের ইলেকশনে রাজশাহীর একটা ইউনিয়ন একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা ইউনিয়ন, সেখানে দিনের আলোও ঠিক মতো যায় না। ঠিক এই রকম একটা জায়গায়ও ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়েছে। সেখানে ভোটরদের প্রচুর উপস্থিতি ছিল এবং নারীরা পর্যন্ত লম্বা লাইন দিয়ে ভোট দিয়েছে। কাজেই ইভিএম অজনপ্রিয় এ কথা বলার আর এখন কোনো প্রয়োজন নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার, আমরা যেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয়, বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার সরকার সেটাই অনুসরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এখানে একটা পজেটিভ চেঞ্জ হয়েছে। এটা আমরা আরও উন্নত করতে চাই, এই নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে। এটা আমরা ইঙ্গিত করে গেলাম। আমরা আরও উন্নত করতে চাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মন থেকে চাই, চেতনা থেকে চাই। ৩০০ আসনে ইভিএম হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা সাপোর্ট করি।
৩০০ আসনে নির্বাচন করতে কি ইসি সক্ষম? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দ্যাট ইজ দ্যা ডিসিশন অব ইলেকশন কমিশন। এটা তাদের এখতিয়ার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১০টি দলের নেতারা, অন্য নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইভিএম নিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন ভাগ করে একেকটিতে ১৩টি দল নিয়ে তিন দফায় বৈঠক করল ইসি।
মঙ্গলবার শেষ দফায় যেসব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। এছাড়া প্রথম দাপের বৈঠকে গণফোরাম উপস্থিত না হতে পারায় সময় চাইলে ইসি এই দলটিকেও আসার সময় দেয়। এক্ষেত্রে শেষ দিনের বৈঠকে তিনটি (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ) অংশ নেয়নি। এর আগে ১৯ জুনের বৈঠকে দু'টি দল এবং ২১ জুনের বৈঠকে বিএনপিসহ পাঁচটি দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।