আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম
প্রকাশ : 2022-06-23 09:45:02১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “আমরা সকল কাজে পরের প্রত্যাশা করি কিন্তু পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করি”। তেমন করে বলাই যায়, আমরা দেশবাসী আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সবচেয়ে ভালোটা প্রত্যাশা করি কিন্তু আওয়ামী লীগের সামান্য ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করে থাকি। যারা আওয়ামী লীগের চরম বিরোধী, যারা কোনোদিন আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি এবং কোনোদিনও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না তারাও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার চেষ্টা করে। শুধু জনমানুষের জন্যে কাজ করার জন্যই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম”। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই দলের জন্ম; সেই সময়টা ছিল বড় জটিল এক সময়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হলেও মূলত এই দলটি গড়ে উঠেছে শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ, সততা, দেশপ্রেম ও সৃজনশীলতার অভাবনীয় সমন্বয়ের কারণে।
১৯৪৬-এর বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির নির্বাচনী ফলাফলে দেখি মুসলিম লীগের ভূমিধস বিজয়, আর এ বিজয়ের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান। আমাদের এই ভূখণ্ডের নির্বাচনী ইতিহাস প্রমাণ করে এ বিজয় মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। অথচ মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে, বাঙালির ভাষার অধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে মুসলীম লীগ। এই ভূমিধস বিজয়ের পরের নির্বাচনেই ১৯৫৪ সালে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি ইলেকশানে মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত ২২৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩টি আসন। সেবারই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মুসলীম লীগ। মুসলীম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনসহ বাঘা বাঘা নেতারা শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণ তখনকার সরকারি দল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে চেতনাগতভাবে সংঘবদ্ধ হতে শুরু হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কলকাতা থেকে ফিরে আসা তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বপ্রথম তিনি গঠন করেন গণতান্ত্রিক যুবলীগ। আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে পাই শেখ মুজিবুর রহমান খুব চমৎকার করে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’ তিনি বলেছেন, “আমি বললাম, এর (গণতান্ত্রিক যুবলীগের) কর্মসূচি হবে সাম্প্রদায়িক মিলনের চেষ্টা করা, যাতে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয়, হিন্দুরা দেশ ত্যাগ না করে- যাকে ইংরেজিতে বলে ‘কমিউনাল হারমনি’ তার জন্য চেষ্টা করা। অনেকেই এই মত সমর্থন করল।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা ৮৫)। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক বলেন, “সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করলেন সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।” ভাষা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বললেন, “পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক। এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।” এভাবেই ভাষার দাবি প্রথমে উচ্চারিত হয়েছিল। (সূত্র: ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গাজীউল হক, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। এর প্রথম সরব প্রমাণ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ১৯৪৯ সালের মার্চ/এপ্রিলে টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। শামসুল হক বলেছিলেন, জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে আমি প্রার্থী নই। তার মতো ভালো মানুষের বিরুদ্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমার লড়াই মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। আমি মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছি। শামসুল হকের সেই বক্তৃতার কোনো ডকুমেন্ট আজ কারও কাছে নেই। কিন্তু অসাধারণ বক্তৃতা করেছিলেন তিনি। খুররম খান পন্নীর জনসভায় আসা মানুষও শামসুল হকের বক্তৃতা শুনে জেগে উঠেছিলেন। ভোট দিয়েছে শামসুল হককে। বিশাল ভোটের ব্যবধানে খুররম খান পন্নী পরাজিত হন। উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানে পন্নীকে পরাজিত করলে প্রদেশে পরিবর্তনের বিরোধীতাকারীদের নড়বড়ে অবস্থানের মুখোষটি উন্মোচিত হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির পরবর্তী ঘটনাগুলি এরই স্বাভাবিক পরিণতি বৈ আর কিছুই নয়।
শামসুল হকের এই বিজয় মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার জনগণের প্রথম রায়। টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের বিজয় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠায় বিশাল, উর্বর একটি জমি তৈরি হয়েছিল এবং শামসুল হক এই জমি ও তার ওপর বাড়ি নির্মাণে অন্যতম কারিগর ছিলেন। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২৩ বছর নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০-এর নির্বাচনেও শতকরা ৭৭ ভাগ ভোট পেয়ে মাত্র দুটি আসন ছাড়া সকল আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যে দলটি আত্মপ্রকাশ করেছিল সেই দলটিই আজকের আওয়ামী লীগ। দল আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়, উদ্দেশ্য ছিল দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ।
ভারতের কংগ্রেস নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছিলেন বিশিষ্ট লেখক অমলেশ ত্রিপাঠী; নাম ‘ভারতের স্বাধীন সংগ্রামে জাতীয় কংগ্রেস’। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ভারতের অন্যন্য রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের পক্ষ নিয়ে রাজনীতি করেছে অথবা বিরোধিতা করে আলোচনায় এসেছে। এমনটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও বলা যায়। পাঠকদের কেউ কেউ ‘The Awami League 1949-1971’ বইটা পড়েছেন; যার লেখক ড. শ্যামলী ঘোষ। তিনি ১৯৪৯ সালে যখন দলটি ইস্ট পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে রূপান্তর পর্যন্ত এই দলটির বিষয়ে গবেষণাটি সীমিত রেখেছিলেন। এখানে উল্লেখ করা যায়, সর্বপ্রথম বিশিষ্ট রাজনৈতিক গবেষক ড. শ্যামলী ঘোষ দক্ষিণ এশিয়ার এমন একটি রাজনৈতিক দলের কথা তুলে এনে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন যে দলটি নীতি ও কর্মসূচির দিক থেকে উদার হলেও তাকে বর্ধিত হতে হয়েছে আধা গণতান্ত্রিক পরিবেশে এবং এমন একটি দেশে যেখানে আঞ্চলিক বৈষম্য ছিল ব্যাপক ও প্রতীকীভাবে হলেও অঞ্চলে অঞ্চলে ঐক্যের কোনো সাধারণ যোগসূত্র ছিল না। এই বই পাঠ করলে জানা যাবে শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও কীভাবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে এসেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এটি একটি অতীব নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। এটি ড. শ্যামলী ঘোষের ‘দ্য ইস্ট পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ১৯৫৮-১৯৭১’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের রূপান্তরিত রূপ। ‘The Awami League 1949-1971’ গবেষণাগ্রন্থে স্পষ্ট করে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংগ্রামী চেতনার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখক উল্লেখ করেছেন, “ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যায় যে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বিতর্কে অংশগ্রহণ ছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ কর্মীরা ১৯৫১ সালের আদমশুমারি চলাকালে গণনাকারীদের নিকট জনগণ যাতে তাদের উর্দু ভাষার জ্ঞানের কথা স্বীকার না করে সে কথা বোঝানোর জন্য নীরব অভিযান চালায়। তারা যে এ ব্যাপারে কিছুটা সফলকাম হয়েছিল সেন্সাস কমিশনারের মন্তব্য থেকে তা জানা যায়।” এটা সম্ভব হয়েছে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কারণে। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে কতিপয় মুসলীম লীগ এমএলএ ও কর্মী যারা দলীয় প্রভুদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তারা ঢাকায় দু-দিনব্যাপি সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে তারা তরুণ ভিন্নমতালম্বী শামসুল হক কর্তৃক লিখিত মূল দাবি নামক পুস্তিকায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের দাবি ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে। সম্মেলনে তারা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে গণমানুষের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক ৪০ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব এই সম্মেলনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তারিখে সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়। তারই সভাপতিত্বে ১৯৪৯ সালের ২৪ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২.
১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু মাত্র আট বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসাধারণ বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্যের সবকটি বাক্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখার এই অংশে তার বক্তব্যের কয়েকটি লাইন এখানে উৎকলন করছি। আজ প্রয়োজন ছিল আওয়ামী লীগের কিছু ইতিহাস বলার, প্রয়োজন ছিল আপনাদের কিছু পথ দেখানোর। শুধু একটা কথা বলে যাই; শেষ কথা আমার, যে কথা আমি বারবার বলেছি– সোনার বাংলা গড়তে হবে। এটা বাংলার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা। আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা, যখন বাংলার মানুষকে বলি তোমরা সোনার মানুষ হও তখন তোমাদেরই প্রথম সোনার মানুষ হতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা গড়তে পারবা। আর যারা দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করেছো, তারা বাংলার দুঃখী মানুষের কাছ থেকে সরে যেও না।… আজ বাংলার নিভৃত কোণে আমার এক কর্মী পড়ে আছে, যার জামা নাই, কাপড় নাই। তারা আমার কাছে আসে না। আপনাদের অনেকেই এখানে। কিন্তু আমি যদি চর কুকরীমুকরী যাই, আমার ঐ ধরনের কর্মীকে আসে দেখি। এদের সাথে আমার রক্তের সম্বন্ধ। আজও আমি দেখি তার পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি। আজও দেখি, সেই ছেঁড়া পায়জামা, ছেঁড়া শার্ট, পায়ে জুতা নাই। বাংলাদেশে আমার এ ধরনের লক্ষ লক্ষ কর্মী পড়ে আছে। কিন্তু কিছু কিছু লোক যখন মধু-মক্ষিকার গন্ধ পায় তখন তারা এসে আওয়ামী লীগে ভিড় জমায়। আওয়ামী লীগের নামে লুটতরাজ করে। পারমিট নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা, আওয়ামী লীগ থেকে তাদের উৎখাত করে দিতে হবে– আওয়ামী লীগে থাকার তাদের অধিকার নাই।” ১৯৭২ সালে ২২ সেপ্টেম্বরে ওই সময় প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকাগুলোর একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন– “আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য আরও এমসিএ ও দলীয় নেতাকে বহিস্কার করা হবে। আরও ১৯ জন এমসিএ বহিস্কৃত’’। সংবাদ বিবরণীতে উল্লেখ ছিল, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান গণপরিষদ সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এসব গণপরিষদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনস্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, “এসব সদস্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।” তিনি আরও জানান যে, দলকে দুর্নীতিবাজ গণপরিষদ সদস্য ও কর্মীদের থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন হলে আরও এনসিএ এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা হবে। উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপ্রধানের জারিকৃত এক অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, কোনও গণপরিষদ সদস্য তার সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ হারালে তার গণপরিষদের সদস্য পদও বাতিল বলে গণ্য হবে। ফলে ১৯ জন গণপরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই গণপরিষদে তাদের সদস্য পদ বাতিল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুব নেতাদের মতে, একশ্রেণির এমসিএ দলীয় কর্মী ও নেতা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে জনগণের সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ও দলের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন ও দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী চক্রের হাতকে শক্তিশালী করছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শুধু ত্যাগের ব্রত নিয়ে কাজ করেছে। এই দলের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মী আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করতে গিয়ে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দেশের ও দলের কাজে ব্যয় করেছেন। এই ইতিহাস যারা জানেন না তারা আওয়ামী লীগকে চেনেন না।
৩.
আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেমন আছেন? এখনকার সময়ের জন্যে এরকম প্রশ্ন করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা সময়ের বিবেচনায় এরকম প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া হবে মিশ্র। কেউ কেউ বলবেন আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মীরা এখন কোনঠাসা। আওয়ামী লীগ কর্মীদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, সারাজীবন আওয়ামী লীগ করে কী পেলাম? পরিবেশটা এমনভাবে তৈরি হয়েছে মনে হয় যেন সর্বত্র ছদ্মবেশী কর্মীদের জয় জয়কার। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কে কী করেছেন? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী পরিবারের সন্তানেরা স্কুল কলেজে যেতে পারেনি। এটা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছে। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ ব্রাকেটবন্দী হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান), আওয়ামী লীগ (দেওয়ান ফরিদ গাজী) এভাবে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। এখন নিশ্চয়ই প্রমাণ করা যায় এই বিভক্তি কারা করেছিল? বিজ্ঞজনদের প্রায়শই বলতে শোনা যায়, সব জায়গায় দলীয়করণ হচ্ছে। তাহলে কি গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে যত নিয়োগ হয়েছে সবই কি দলীয় লোক নিয়োগ হয়েছে? আচ্ছা, আমরা বলতে কি পারব বিগত এগারো বছরে সরাসরি ছাত্রলীগের মিছিল করা শতকরা কতজন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে। মুখস্ত বিদ্যার মতো কিছু মুখোরোচক কথা বলা সহজ। তথ্য দিয়ে বলা যায় না মোটেই। আওয়ামী লীগ আমলে চায়ের আসরের গল্পের শেষ নেই। যদিও আওয়ামী লীগ কর্মীরা যতটা অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, তার চেয়ে বেশি বলে নিজেদের বিরুদ্ধে। জেলা শহর, গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকানে দশ-বারো জনের আসরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা শুনলেই ধরে নেওয়া যায় ওই আসরে সবাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো না কোনো জায়গায় তাদের অবস্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাঙালি শুধু পরশ্রীকাতর জাতি নয়, আত্মশ্রীকাতর জাতিও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় বসে যে ডায়রি লিখেছিলেন সেখানে আমরা দেখতে পাই। পরশ্রীকাতরতা একমাত্র বাংলা ভাষার ব্যাকারণেই আছে এবং আওয়ামী লীগারদের ক্ষতি আওয়ামী লীগরাই করতে পারে। যে কথা কখনই বলা হয় না যে আওয়ামী লীগ আমলে আওয়ামী লীগররা বেশি বেশি সুবিধা পায়। এই বিষয়টা কি নতুন ধারার আওয়ামী লীগের চালচিত্র নাকি অনেকদিনের পুরানো রোগ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বিধিতে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যেকোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের নিয়ম কার্যকরী হয়েছে। এখনকার মতো বিএনপি সরকারের আমলেও লিখিত পরীক্ষায় আশি (৮০), মৌখিকে বিশ (২০) ছিল। কিন্তু বিএনপি আমলে লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর পেলেই মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হতো, সেখানে লিখিত পরীক্ষার নম্বর যোগ করার রেওয়াজ ছিল না। অর্থাৎ শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার ওই বিশ (২০) নম্বরের ওপর ভিত্তি করে চাকরি দেওয়া হতো। সেখানেই সরকারি দলের কর্মী ও নানানভাবে সুবিধাপ্রাপ্তদের প্রাধান্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই হলের ছাত্র, প্রায় কাছাকাছি মানের ছাত্র একজন ছাত্রলীগের মিছিল করা ছেলে, আরেকজন ছাত্রদলের মিছিল করা ছেলে। ছাত্রদল করা ছেলেটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক সরকারি চাকরি পেয়েছে। অথচ ছাত্রলীগের মিছিল করা ছেলেটির বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা দিতে দিতে সরকারি চাকরির বয়স শেষ। এ সব কারণে সারাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে নানা ধরনের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। লোভে পড়ে অনেকেই ঈমান নষ্ট করার ঘটনাও ঘটেছে। দু-বছর আগে দৈনিক ‘কালের কন্ঠ’র একটি শিরোনাম ছিল– ‘যুবদল থেকে আওয়ামী লীগ: নসিমন চালক থেকে কোটিপতি’। এই জাতীয় সংবাদ মাঝে মাঝেই পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। রবিউল ইসলাম রবি নাটোর জেলার সিংগার ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। সে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এতেই নাকি পেয়ে যায় আলাদীনের চেরাগ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা নব্য আওয়ামী লীগররা অনেক ক্ষতি করেছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডির নাম ছিল ‘বাসন্তী’। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এক জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। আর সেই বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন ইত্তেফাকেরই নিজস্ব আলোকচিত্রী আফতাব আহমেদ। এই ছবি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু সরকারকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দেশের আনাচে-কানাচে দুর্ভিক্ষের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। সে সময় তিনজন লোক গিয়েছিল বাসন্তীদের বাড়িতে। এদের মধ্যে একজন ছিল তৎকালীন স্থানীয় রিলিফ চেয়ারম্যান তার নাম আনছার আলি পাঠান। এই আনসার আলি পাঠান ছিল নব্য আওয়ামী লীগার, মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিল আওয়ামীবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী দলের সদস্য। তৎকালীন ওই নব্য আওয়ামী লীগারই তখন বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্তের সাথে যুক্ত ছিল।
৪.
২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সরকার কতটা কার্যকর করতে পারছে তা নিয়ে জনমনে কিছু প্রশ্ন উঠতেই পারে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর জওহরলাল নেহরু অতিষ্ঠ হয়ে জিভিজি কৃষ্ণ মূর্তির নের্তৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী শক্তিশালী কমিটি করেছিলেন। এদিক-ওদিক কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যতটা তৎপর ও সফল, ঠিক ততটাই পিছিয়ে পড়ছে সাংগঠনিক বিশেষত তথাকথিত নেতাকর্মী অর্থাৎ ক্ষতিকারকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগের সাচ্চা সমর্থকদের কাছে দলের অভ্যন্তরে জায়গা পাওয়া আওয়ামী লীগ অংশের অবস্থানে খুবই ব্যথিত করে। বিশ-ত্রিশ বছর আগের আওয়ামী লীগের অনেক সক্রিয় কর্মী এখন উপায়ন্ত না দেখে র্নিবাক হয়ে গেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে জাতীয় সংকটের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থাকে। এটা হচ্ছে জন্মসূত্রে পাওয়া আওয়ামী লীগের সংগ্রামী চেতনা। এবার করোনাকালীন সময়েও দেশের সর্বত্রই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের তৃর্ণমূল পর্যায়েও জনগণের সেন্টিমেন্টের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেখছে না। যাদের কারণে এক সময় আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি তাদের কেউ কেউ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। তারা এখনও আওয়ামী লীগের সাচ্চা নেতা কর্মীদের এখনও হয়রানি করে যাচ্ছে। মনে পড়ছে পণ্ডিত নেহরুর সময়কার আর একটি ঘটনা। কে. ডি. মালব্য তখন ছিলেন খনিমন্ত্রী। কোনো এক নির্বাচনের সময় তিনি একজন শিল্পপতির কাছে দশ হাজার টাকা চেয়েছিলেন একজন দলীয় প্রার্থীর জন্যে। কয়েকদিন পরে পণ্ডিতজি তাকে ডেকে পাঠিয়ে সেই চিঠিটি দেখালেন। মালব্যকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চিঠিটি কি তার? মন্ত্রী বললেন, তারই বটে। “তা হলে আমাকে আপনার পদত্যাগ গ্রহণ করতে হবে” পণ্ডিতজি জানালেন। পদত্যাগপত্র তিনি পেয়ে গেলেন কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কংগ্রেস নেতাদের সৎভাবে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। বলেছিলেন, যে ভ্রষ্টাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা সহ্য করার চেয়ে বরং তিনি কংগ্রেসের গোটা সংগঠনটিকে সুন্দরভাবে কবর দিয়ে দেবেন। (‘হরিজন’, ২৭ মে, ১৯৩৯)।
লেখার শুরুতে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধৃত করেছিলাম এভাবে– “আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম”। সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগ এটাই। জনগণের মনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে স্বপ্ন জাগ্রত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ষাটের দশকে, সত্তর দশকে সেই আর্দশের ঝাণ্ডার জন্যে জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এই দলের হাল ধরেন তখন ঘোর অমানিশার অন্ধকার। এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি, এই সংকল্পবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ, জাতি ও দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দলে যখন ছদ্মবেশী ও মতলববাজ আওয়ামী লীগারদের আস্ফালন দেখেন তখন সাচ্চা আওয়ামী লীগারদের মনটা ভারী হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে একজন সাবেক আমলা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন; বেগম খালেদা জিয়ার নাকি কাছের লোক ছিলেন। বাজারে তার লেখা কয়েকখানা বইও আছে। এর মধ্যে ‘চিরঞ্জীব জিয়া’, ‘ছোটদের জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ’, ‘আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া’ প্রভৃতি। এই জাতীয় মানুষের যোগদানের গুরুত্ব ও উপযোগিতার কোনো রকম ব্যাখ্যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ে নেতা কর্মীদের কাছে উপস্থাপন করেন না। যে কারণে আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মীরা যুক্তির শক্তিতে পিছিয়ে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে… শুধু চোরগুলোকে রেখে গেছে।” ‘চাটার দল’ চোরগুলোকে রেখে যাওয়ার পরিণতিতে কীভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কার্যকরী হয়ে হাজার বছরের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, তা জাতির অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে। তবে তখনকার চেয়ে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন এই দিক থেকে যে, দেশ এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত নয়, খাদ্য ঘাটতিও নেই, ভিক্ষুকও নই আমরা; দেশ রয়েছে উন্নয়নের ধারায়।
৫.
আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা জন্মসূত্রে আত্ম উৎসর্গীকৃত হয়ে থাকে। ইতিহাস সেটারই সাক্ষ্য দেয়। এখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের ভিতরের দুর্বিনীত ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের কার্যক্রম দেখে আওয়ামী সর্মথকরা বিষণ্নতায় ভোগে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে নীতি গ্রহণ’ (ইস্তেহারের ৩.৫) করার কথা খুবই স্পষ্ট করে বলেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, “দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ।”
লেখকঃ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।