আওয়ামী লীগ এখন আর কোন রাজনৈতিক দল নয়, লুটেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে
প্রকাশ : 2022-12-03 19:31:40১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
‘একটি সুস্থ-সুন্দর-প্রেমময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তনের কোনও বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই পরিবর্তনে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। লুটেরাদের হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়। লুটেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে। এরা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়া আর সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে। এই দানবীয় অনির্বাচিত সরকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিরোধীদলকে হামলা-মামলা-গুম-খুন দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মেতেছে। কিন্তু পারেনি। এখন তারা ভয়ে আছে। আজ আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এই সরকার আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই লুটেরা সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের গত তিন দিনের কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন দিন ধরে এখানে সময় কাটালেন? একটাই কারণ, আপনারা মুক্তি চান। সেই মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
রাজশাহীকে গণতন্ত্রের আন্দোলন-সংগ্রামের উর্বর ভূমি পরিচয় করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। পাশেই শুয়ে আছেন শাহমখদুম। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। এরকম অনেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন যুগ যুগ।’
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও লুটপাটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের আমলে ২৫ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ আরও গরিব হয়েছে। এই সরকার কি ২৫ হাজার মানুষের? লুটপাটের সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে তারা। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায়। তাতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ কি ভয় পেয়েছে? পায়নি তো। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’
“কোথায় ১০ টাকার চাল, ঘরে ঘরে চাকরি” উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হ্যাঁ চাকরি দিয়েছে। নিজেদের লোকদের দিয়েছে। সেখানেও ২০ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাটাছেঁড়া সংবিধানের আইন মেনে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। ভয় পায় নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি সরকারের দুঃশাসন বন্ধ করা, নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করা সর্বোপরি দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারেক জিয়ার নির্দেশে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে, সেটি বানচালে সব রকম চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য তারা নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এজন্য দেশের বিভাগীয় আন্দোলন শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সম্মেলনকেও সফল করতে হবে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এতে বক্তব্য রাখেন সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি হারুন অর রশিদ, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ আলী ঈশা।