অভিনেত্রী হিমুর ‘আত্মহত্যা’র সময় বিছানায় বসে দেখছিলেন তার প্রেমিক  

প্রকাশ : 2023-11-04 10:39:30১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

অভিনেত্রী হিমুর ‘আত্মহত্যা’র সময় বিছানায় বসে দেখছিলেন তার প্রেমিক  

অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু যখন আত্মহত্যা করেন, তখন তার সামনে বিছানায় বসে দেখছিলেন প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাফি। এর আগে আত্মহত্যার হুমকি দেন হোমায়রা হিমু। কিন্তু তার প্রেমিক তাতে পাত্তা দেননি। কারণ তার আগেও তিন থেকে চারবার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন এ অভিনেত্রী।

গ্রেফতারের পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) জিজ্ঞাসাবাদে এমনটি জানান জিয়াউদ্দিন। হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তবে রাফির দেওয়া তথ্য যাছাই করতে পারেনি র‌্যাব।

এর আগে বৃহস্পতিবার হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর পর থেকে এ ঘটনায় ঘুরেফিরে আসে জিয়াউদ্দিনের নাম। তিনি বিভিন্ন মহলে রুফি ওরফে উরফি জিয়া নামেও পরিচিত। ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন জিয়াউদ্দিন।

জিয়াউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, হোমায়রা হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের বিয়ে হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেই সময় হিমু ও জিয়াউদ্দিনের পরিচয় হয়। তবে পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে পরে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে হিমুর খালাতো বোনের সংসারের ইতি ঘটে। এর পরও হোমায়রা হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

এর মধ্যে জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিয়ে করলেও সে নিয়মিত হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ করত। চার মাস আগে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে এই অভিনেত্রীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন জিয়াউদ্দিন। আর নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত শুরু করেন তার প্রেমিক। কিন্তু তাদের মধ্যে অনলাইন জুয়াসহ নানা বিষয়ে প্রায়ই বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটত।

র‌্যাব আরও জানায়, হিমুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর তার মরদেহ হাসপাতালে রেখে এই অভিনেত্রীর দুটি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে সে হিমুর বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেয় গাড়ি। আর মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশে বংশালে যায় জিয়াউদ্দিন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় তার খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় জিয়াউদ্দিনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এদিকে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুকে লক্ষ্মীপুরে তার মা শামিম আরা চৌধুরীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লামচরী জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মসজিদের কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। রাত ৭ টার দিকে ঢাকা থেকে হিমুর লাশবাহী গাড়ি লক্ষ্মীপুর এসে পৌঁছায়।

হুমায়রা হিমুর মামা মঈন উদ্দিন চৌধুরী কামরু বলেন, হিমুর বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। হিমু বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা প্রকৌশলী সানা উল্লাহ গত আগস্ট মাসে মারা যান। তার মা শামীম আরা চৌধুরী ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। হিমুর মরদেহ তার মায়ের কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা সানা উল্লাহর সঙ্গে হিমুর মায়ের বিয়ে হয়। হিমুর জন্মের পরেই তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকেই হিমুকে নিয়ে তার মা লক্ষ্মীপুরে থাকতেন। কখনো দাদার বাড়িতে যাওয়া হয়নি তার।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহিদুজ্জামান চৌধুরী রাসেল বলেন, হিমুর জন্ম আমাদের এলাকায়। লামচরী তার নানার বাড়ি। তারা এখানেই থাকতেন। একপর্যায়ে তারা এখান থেকে ঢাকায় চলে যান। লক্ষ্মীপুর আসলে নানা বাড়িতেই থাকতেন তারা।

প্রসঙ্গত, হুমায়রা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্য দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমুর অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।