টঙ্গীবাড়ীতে প্রশাসনের অধীনে ছায়া-সন্ত্রাস: লাইনম্যানদের হাতে বাজারজুড়ে ত্রাস

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:২২ |  আপডেট  : ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০০

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বাজারে যানজট নিরসনের দায়িত্বে মাঠে নামানো লাইনম্যানদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য ও অমানবিক আচরণে আজ অতিষ্ঠ পথচারী, চালক ও সাধারণ মানুষ। যে দায়িত্বে এদের নিয়োগ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন-সড়কে শৃঙ্খলা আনা-সেই দায়িত্বই এখন উল্টো পরিণত হয়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভয়-আতঙ্কে।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লাইনম্যান মিশুকচালককে ধরে টেনে-হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামাচ্ছে, বেধড়ক আঘাত করছে, আর তার মিশুকের গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষজনের মুখে ছিল ভয়, হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ।

উপজেলা বাজারের ব্যবসায়ী ‘ল্যাপটপ কেয়ার সেন্টার’-এর প্রোপ্রাইটর আব্দুল কাইয়ুম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি ফেসবুকে লেখা তার পোস্টে উল্লেখ করেন, লাইনম্যানদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, তাদের মারধরে অতিষ্ঠ অটোচালকরা এখন বাজার এলাকায় ঢুকতে ভয় পান। এ বিষয়ে এখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তিনি।

গত ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তিনি চোখের সামনে পুরো ঘটনাই দেখেন বাজারের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে তিনি বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করা কি লাইনম্যানদের দায়িত্ব? তাদের হাতে বিচার করার ক্ষমতা কে দিল? প্রশাসন কি এদের কাজের সীমা ব্যাখ্যা করেই মাঠে নামিয়েছে, নাকি এরা নিজেরাই আইন বানিয়ে বসেছে? মিশুকচালক রবিউল বলেন, সামান্য কথাতেই ওরা গায়ে হাত তোলে। বলেছিলাম-যানজট আছে, ধীরে যাচ্ছি। এতেই একজন কলার ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে চড়-থাপ্পড় শুরু করে। কথা বলার সুযোগও দেয়নি।

অটোরিকশাচালক লোকমান জানান, লাইনম্যান বলে কথা-মনে হয় ওরা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ খুঁজে থাকে। লাইনে দাঁড়ানো না দাঁড়ানো তাদের কাছে অজুহাত; উদ্দেশ্য হলো জোর দেখানো।

এবিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) টঙ্গীবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলা চত্বরে মেয়েরা হেঁটে চলারও সাহস পায় না। যখন খুশি যাকে খুশি ধমক, ধাক্কা, হাতাহাতি, একধরনের ছায়া-সন্ত্রাস। প্রশাসনের কাছে আহ্বান থাকবে তারা যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করেন।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কিছু লাইনম্যান নিয়মিত মাদকে প্রভাবিত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে, এবং বাজার এলাকায় একধরনের সন্ত্রাসী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। অতীতে আরও বেশ কিছু ঘটনার অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন নাকি গুরুত্ব দেয়নি।

এ নিয়ে এখন মূল প্রশ্ন- কারা এদের নিয়োগ দিল? তাদের কাজের সীমারেখা কে নির্ধারণ করল? দায়িত্ব পালন বলতে কি মারধর, গালিগালাজ আর গাড়ি ভাঙচুরই বোঝানো হয়েছে? সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো উপজেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা। ঘটনাটি নিয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া মমতাজের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি ( এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোনো বক্তব্যে পাওয়া যায়নি)। তার এই নীরবতা স্থানীয়দের মনে আরও বড় প্রশ্ন তুলেছে-এত বড় বিশৃঙ্খলার খবর কি তার কানে পৌঁছেনি, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন? যাদের নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন, তাদের দায়িত্ববহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দায় কি প্রশাসনেরও নয়?

অপরদিকে টঙ্গীবাড়ী থানার এসআই রবিউল বলেন, ‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিন্তু মানুষ প্রশ্ন তুলছে, ভিডিও-প্রমাণ কি অভিযোগ নয়? আহত চালকের আর্তনাদ কি শোনার মতো নয়?

টঙ্গীবাড়ীর মানুষ আজ একটাই উত্তর চায়-যানজট নিরসনের নামে নিয়োগ পাওয়া লাইনম্যানরা কি প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে নতুন এক ছায়া-সন্ত্রাস গড়ে তুলছে? আর প্রশাসন কি দেখেও না দেখার ভান করছে?

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত