৭৯ বছরে পা রাখলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
প্রকাশ : 2022-01-01 12:44:15১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জন্মদিন আজ। ৭৯ বছরে পা রাখলেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয়ভাজন কামালপুর গ্রামের সদালাপী ও মিষ্টভাষী সেই ছাত্রলীগ নেতা এখন ৭৯ বছরের প্রবীণ এবং দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ, হাওড় উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৭৯ পাউন্ডের কেক কাটার ঘোষণা দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী, শুভাকাক্ষী ও স্বজনরা। কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করা হবে রাষ্ট্রপতির জন্মদিন।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি হাওড়বেষ্টিত মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন আবদুল হামিদ। তার বাবার নাম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মা তমিজা বেগম। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক তারই নির্বাচনি এলাকা থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃণমূলে নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হয়ে আবদুল হামিদের ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা। গল্পরসিক, নির্মোহ ও নিরহংকার ব্যক্তি আবদুল হামিদ রাজনীতিকদের আদর্শকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ২৫ বছর বয়সে এলএলবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সামনে ছিল জাতীয় পরিষদ নির্বাচন। কিন্তু আবদুল হামিদের এলাকা তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) আসন থেকে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিল না। মিজবাহ উদ্দিন নামের অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখালেও মনোনয়নপত্র দাখিলের কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়। এ সংকটকালে বঙ্গবন্ধু আবদুল হামিদকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করলেন। তিনি তাকে এলাকায় ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি^তা করার নির্দেশ দিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ওই আসন থেকে আবদুল হামিদ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। এলাকাবাসী সাহসী ভূমিকার জন্য তাকে তখন ভাটির শার্দুল উপাধি দিয়ে নির্বাচনি প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কামালপুর গ্রামের অদূরে মিঠামইন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনপূর্ব শেষ জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত হয়ে তরুণ প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হামিদের জন্য ভোট চান। মুসলিম লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দিনকে ধরাশায়ী করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আবদুল হামিদকে। সাতবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার অসামান্য গৌরব অর্জন করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি বিরোধী দলের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
নিজ গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ চুকিয়ে আবদুল হামিদ ভর্তি হন নিকলী জিসি উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে। ১৯৫৯ সালে তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন। তিনি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদ থেকে প্রথমে জিএস ও পরে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬১ সালে গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। গুরুদয়াল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ঢাকার সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন তিনি। পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও তিনি গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাওড় জনপদ এখন সম্ভাবনাময় এক পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। নিজ গ্রাম কামালপুরের দুপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঘোড়াউত্রা নদী। এখানকার মা-মাটি-মানুষ ও কাদা-মাটি-জলের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার প্রাণের সম্পর্ক। আর সেখান থেকেই নির্মোহ রাজনীতির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কামালপুর থেকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতা পদকের হিরন্ময় পালক।