৪০১ ধারায় ১৯৭৭ সালে বিদেশে যান আসম রব
প্রকাশ : 2021-05-10 15:19:24১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রোববার রাতে একটি টেলিভিশনে মঞ্চ অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আমাদের নতুন সময়ের প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। বিষয় ছিলো, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রশ্ন।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, কোন ধারায় আবেদন করা হয়েছে, এটা কিন্তু উল্লেখ ছিলো না। এটা উল্লেখ ছিলো, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হোক।
সরকারের কাছে যখন এই আবেদন আসে, সবকিছু তো আইন মাফিক করতে হবে। আমাদের সরকারের ক্ষমতাটা কোন আইনে দেওয়া আছে, সেটাও আমাদের দেখতে হবে।
তিনি বলেন, এই ব্যাপারে সরকারকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ক্ষমতা দেওয়া আছে। আইনে বলা আছে: সরকারকে ৪০১ ধারায় এই ক্ষমতা দেওয়া হোক, যেনো যখন-তখন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে শর্তছাড়া বা শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত রাখতে পারে। আংশিক বা পুরো সাজা মওকুফ করতে পারে। আরেকটা কথা বলা আছে, আসামীদের মেনে নিতে হবে সেই শর্তগুলো। শর্তগুলো পূরণ না হলে অর্ডার সাসপেন্ড করার ক্ষমতা আইনের ৩ নং উপধারায় সরকারকে দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ৪০১ এর ১ উপধারা ক্ষমতাবলে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়। তারা শর্তগুলো মেনে নেয়। এই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কার্যকর হয়ে গেছে, সেটা আবার পুনরায় শিথিল বা পুনর্বিবেচনা বা পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারকে ৪০১ ধারায় দেয়া হয়নি।
এবার, দ্বিতীয়বার যখন আবেদন করা হলো, তখন আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালো। আইন মন্ত্রণালয় যে মতামত দিয়েছে, অন্ততপক্ষে পদ্ধতিগতভাবে বেআইনী নয়। আমরা আইনটি পর্যালোচনা করে দেখেছি, এই আবেদন বিবেচনার কোনও সুযোগ নেই।
বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আইনী বাধা বলবো না। ব্যাপারটা হচ্ছে, আইনে নাই। এখন কিন্তু সেই জামানা নাই, জাতির পিতাকে খুন করে ইনডেমনিটি করে আইন ব্যাহত করে দেওয়ার দিন নাই। এখন গুড গভর্নন্সের জন্য কোন কাজ করতে হলে সরকারকে আইনের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে হয়। এটা যে কোনও দরখাস্ত আইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। আমাদের কাছে আইনী মতামত চাওয়া হয়েছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ক্ষমা করার, সেটাও কিন্ত আইন ও সংবিধানের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।
তাই বেগম জিয়ার বিষয়টা আইনের মাধ্যমেই নিষ্পন্ন হবে। ওনারা তখন কী দরখাস্ত করবেন, আমি তো জানতাম না। এখন যে দরখাস্ত করেছেন ৪০১ ধারায়, সেটা আমি সেই ধারায় বিবেচনা করেছি। অন্য দরখাস্ত তো আমার সামনে নাই।
মন্ত্রী আনিসুল হক বার বার আইনের মধ্যে থাকার ওপর জোর দিয়েছেন। এই বিষয়টির উল্লেখ করে সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, আইনের বাইরেও কিছু ব্যাপার হয়ে গেছে। বেগম জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে মুক্তি দেয়ার আগে বার বার বলা হয়েছিলো, সরকারকে বলে লাভ নেই। সরকারের হাতে ক্ষমতা নেই। আদালতের বিষয়, আদালতেই যেতে হবে। পরবর্তীতে সরকার ৪০১ ধারার অধীনে তাকে মুক্তি দিলো।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে যেটা হয়েছে, আমি খুব অবাক হয়ে দেখছি, একটা আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে পারছেন। সরকার অত্যন্ত মানবিকভাবে বিবেচনা করেছে। এবং আবহ এতোটাই হয়েছে সরকারি দলের কোর কর্মীদের অনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মহানুভবতাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বড়ো করে দেখিয়েছে। তার মহত্ত্ব, তার মাতৃত্ব, তার উদারতা।
এই যে একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকারের বেশ উচ্চমহল থেকেই একটা আশাবাদ তৈরি করা হয়েছিলো। এগুলো মূলধারার গণমাধ্যমেও এসেছে। এমনও আলোচনা যে, তিনি ফিট কিনা, এটা একটা বড়ো কনসিডারেশন। যেদেশে যাবেন সেদেশে যাওয়ার অনুমতি পাবেন কি না, কীভাবে তাকে কোন এয়ারলাইন্সে নেওয়া হবে, এমন তিন চারটা শংকার কথা বলা হয়েছিলো।
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, জনমনে এই ধারণা তৈরি হলো যে, সরকার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে, এখন বিদেশ যাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেনো সাধারণের মনে এই ধারণা এলো? এমন একটা পরিবেশে কেনো নেগেটিভ হলো?
এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জনমনে ধারণার কথা এসেছে। মানবিক বিবেচনার কথাও এসেছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো এই দরখাস্ত আদালতে নিষ্পত্তির জন্য নাকি নির্বাহী আদেশ নিষ্পত্তির জন্য। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি নির্বাহী।
যদি এটাকে মানবিক দিকে দিয়ে বিবেচনা করা না হতো, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনে পাঠানো হতো না। কিন্তু আমি যেটা প্রথমেই বলেছি। সবকিছু আইনের মাধ্যমে করা না হলে খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। যেটা ১৯৭৫ সালে ইনডেমনিটির পর দেখেছি। এখন যখন গণতান্ত্রিক সরকার আছে, সেখানে আইনের মাধ্যমেই সবকিছু বিবেচনা করবো।
মন্ত্রী বলেন, মানবিকভাবেও বিবেচনা করা যায়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেটা পারেন, সেটাও সংবিধান ও আইনের মোতাবেক। কিন্তু বিষয়টা যদি আইনে না থাকে, মানবিক বিবেচনায় আনা খুব কঠিন। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে করতে হয়। তা খারাপ নজির। আমি আইনী মতামত দিয়েছি।
নাঈমুল ইসলাম খানের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো, আইনে যখন কোন জিনিস উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা না থাকে এবং সরকারের সদিচ্ছা থাকে, সেটা করা যায় কি না? প্রয়োজনে ৪০১ এর বাইরে এসে করা যায় কি না?
জবাবে আনিসুল হক বলেন, সাজা মওকুফের ক্ষমতা সরকারেরও আছে। ফখরুল সাহেবের বক্তব্যে কী বুঝি? সব মিথ্যা মামলা নাকি দেয়া হয়েছে। সব মামলায় সব আদালতে তারা গেছেন। সব কিছু করে হেরে সাজপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপিলেও হেরেছেন। এখন তারা যদি বলেন, আদালতও মানবেন না, যেমন তাদের পূর্বসুরীরা বলেছিলেন, দেশ মানেন না।
আইনের বাইরে গেলে খারাপ নজির সৃষ্টি হবে, আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সঞ্চালক নূর ছাফা জুলহাজ বলেন, জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। সে সময় তাকে ৪০১ ধারা মোতাবেক চিকিৎসার জন্যে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো।
ডিটেইলস জানা নেই এই মুহূর্তে, এ কথা বলে মন্ত্রী জানান, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তবে আ স ম রবকে সাজা মওকুফ করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো, স্থগিত করে নয়।
[২৩] বেগম জিয়ার সুচিকিৎসায় সরকারের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হবে কি না, প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। মন্ত্রী রসিকতার সুরে বলেন, তিনি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দিলে বিএনপি সেটাকেও সন্দেহের চোখে দেখবে। তবে প্রয়োজন হলে সরকার অবশ্যই সেই উদ্যোগ নেবে।
সমাপনী বক্তব্যে আমাদের নতুন সময়ের প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান মন্ত্রীকে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার জন্য যে আবেদনটি করা হয়েছিলো, সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আরও একটি ফ্রেশ আবেদন করা হয়, একটা চ্যাপ্টার ক্লোজড কিন্তু মানে তো এই না যে আর একটা চ্যাপ্টার ওপেন করা যাবে না। আর একটা চ্যাপ্টার ওপেন করার ব্যাপারে নিষেধ দেখি নাই, কিন্তু করার সুযোগটাও দেখিনি। একটা নতুন চ্যাপ্টার তো হতে পারে।
তিনি বলেন, আমার কেনো যেনো মনে হয়, সরকার একটা স্টেজে গিয়ে ফিল করেছিলো, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য সত্যিই নাজুক। তখন নমনীয় হয়েছে। আবার যখন দেখলো, তার অবস্থা স্টেবল, বাইরে নেয়ার প্রয়োজন নেই, তখন আবার পিছিয়ে গেলো।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এরকম কোন চিন্তাধারা ছিলো না। ৪০১ ধারায় কোনওভাবেই খালেদা জিয়ার আবেদন গ্রহণ করা যায়নি, এটাই প্রথম কথা। তবে আমিও চাই বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হোন, এই বলে আলোচনা শেষ করেন মন্ত্রী।