২০ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি নন্দীগ্রামের ২০ শয্যা হাসপাতাল

প্রকাশ : 2025-11-01 11:27:40১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

২০ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি নন্দীগ্রামের ২০ শয্যা হাসপাতাল

বিএনপি সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যোষ্ঠপুত্র তারেক রহমান ২০০২ সালের ৮ মার্চ বগুড়ার নন্দীগ্রাম সদরে ২০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ও নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ওই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। যার কারণে একরকম বন্ধই থাকে। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুসাঙ্গিক খাতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সিএমএমইউ এ কাজ বাস্তবায়ন করে। এতো টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি ২০ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। 

স্থানীয়রা হাসপাতালটির দুরাবস্থার  জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই দায়ী করেন। তাদের অভিযোগ, জনবল নিয়োগ না দিয়েই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে বিএনপি সরকার আমলে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। অপরদিকে বিএনপি সরকারের আমলের প্রকল্প হওয়ায় দলীয় সংকীর্ণতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালটি আর চালু করেনি। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৯ কিলোমিটার দূরে ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুলে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় নন্দীগ্রাম সদরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো। এ কারণেই নন্দীগ্রাম সদরে একটি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মানের হাসপাতাল নির্মাণের দাবি তোলেন এলাকাবাসী। এমন দাবির প্রেক্ষিতে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিএনপি সরকার আমলে নন্দীগ্রাম সদরে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মানের হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেসময় তারেক রহমান হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। 

সরেজমিনে নন্দীগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের চারটি ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ফাটল ধরেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে গেছে। ময়লা আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ণ হাসপাতালের লোহার গ্রিল, জানালা, দরজা ও কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না থাকায় নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালে মূল্যবান আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি। এ ছাড়াও হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ বেশিরভাগ কক্ষেই ঝুলছে তালা।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. দিগন্তময় সরকার। তিনি বলেন, আমার কর্মস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বর্তমানে এখানে মেডিকেল অফিসার না থাকায় আমাকে বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিন ৩০-৩৫জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা নাই। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এখন এখানে ঔষধ নাই। রোগীরা যতোক্ষণ থাকে আমি ততোক্ষণ এখানে থাকি। 

হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের গর্ভবতী সোনিয়া খাতুন, নন্দীগ্রাম কলেজপাড়ার জাহেরা বেগম ও ফোকপাল গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, এখান থেকে শুধু ঔষধ লেখে দেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যার সমাধান এখানে হয় না। ঔষধও পাওয়া যায় না। আমরা চাই জরুরী ভিত্তিতে যেনো ২০ শয্যা হাসপাতালের সকল কার্যক্রম চালু করা হয়।
 
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। ২০ শয্যার অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয়  এই হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা সহকারী, ঔষধবিদ, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারি ও ল্যাব এটেনডেন্টসহ ১৩ জনের পদ রয়েছে। বর্তমানে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালের আউট ডোর চালু রাখা হয়েছে। 

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নন্দীগ্রাম সদর থেকে আনুমানিক ৯ কিলোমিটার দূরে। এজন্য নন্দীগ্রাম সদরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে একটি স্পেশাল বরাদ্দ নিয়ে ২০ শয্যার অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই হাসপাতালের দিকে আর কেউ নজর দেয়নি। দেশনায়ক তারেক রহমান হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলো। সেসময় আমি হাসপাতালটির উদ্বোধন করেছিলাম।