২০২৪ সালে ভোট দেবেন বিশ্বের অর্ধেক ভোটার

প্রকাশ : 2024-01-10 14:43:32১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

২০২৪ সালে ভোট দেবেন বিশ্বের অর্ধেক ভোটার

বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে পার্লামেন্ট/প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে। এসব দেশে বসবাস করেন ৪০০ কেটিরও বেশি মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক; সেই হিসেবে চলতি বছর ভোট দেবেন বিশ্বের অর্ধে ভোটার।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্টিত হলো বাংলাদেশে। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের কাজ শুরু করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল সেই নির্বাচন বয়কট করেছে।

৯ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ভুটানে। নির্বাচনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়েছে শেরিং তোবগের দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হলো পরিবেশবাদী নেতা তোবগের। জাতীয় পরিষদের ৪৭ আসনের মধ্যে পিডিপি পেয়েছে ৩০টি।

১৩ জানুয়ারি নির্বাচন হবে স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপভূখণ্ড তাইওয়ানে। চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই দাবি আরও একবার দুর্বল হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কারণ নির্বাচনে যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, প্রতিটির অবস্থান তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে স্পষ্ট। তবে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক কেমন থাকবে— তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে রয়েছে তাইওয়ানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। দ্বীপ ভূখণ্ডটির সরকারি দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী উইলিয়াম লাই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা কেবল তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচন করতে চাই— এমন নয়। ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে তাইওয়ানের ভূমিকা কেমন হবে, তা ও নির্ধারিত হবে এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে।’

বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপরাষ্ট্র ও জনসংখ্যার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। ২৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই দেশটির নির্বাচনকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে পাকিস্তানেও। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ইমরান খান দুর্নীতির অভিযোগে গত কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন। নির্বাচনের আগে তার মুক্তির সম্ভাবনা নেই। তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই ইনসাফের প্রার্থীদেরকে দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী মার্চে। ২০০১ সাল থেকে ভৌগলিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম এই দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আগামী নির্বাচনেও তার জয়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এর একটি বড় কারণ, এই নির্বাচনে পুতিনের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ইউরোপের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান ফোরামের গবেষক ইয়ান বন্ড মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনে পুতিনের সঙ্গে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন— এমন কোনো প্রার্থী নেই; আর গত কয়েক বছরে যেভাবে তিনি প্রশাসনকে পুনর্গঠন করেছেন, তাতে অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় পুতিনের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী উঠে আসার সম্ভাবনা নেই।’

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে পরিচিত ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার নির্বাচন আগামী এপ্রিল এবং মে মাসে। ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের মতো এই নির্বাচনেও জয়ী হবে বিজেপি।সেই সঙ্গে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে আগামী নির্বাচন। ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক সাংবাদিক পুষ্প শ্রফ ভয়েস অব আমেরিকাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনে বিজেপি জিতবে প্রধানত দু’টি কারণে। প্রথম কারণ- এই দলটি সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী এবং দ্বিতীয় কারণ- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার ঢেউ। আর কংগ্রেসের ফলাফল কেমন হবে— তা নির্ধারিত হবে দলটির অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর। অতীতে বিভিন্ন সময়ে দলটির ভেতরে ঐক্যের অভাব দেখা গেছে।’

আগামী ২ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে মেক্সিকোতে। সেখানকার রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে এই নির্বাচনের মধ্যে মেক্সিকোর রাজনীতিতে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। কারণ সম্ভবত এই প্রথম মেক্সিকো একজন নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে।মেক্সিকোর রাজনীতি বিশ্লেষক প্যাট্রিসিও মোরালেস জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল রাজধানী মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ক্লডিয়া শেইনবাউমকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। সামনের নির্বাচনেও তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

একই মাসে নির্বাচন হবে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেও (ইইউ)। ইইউভু্ক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা এবারের নির্বাচনে উত্থান ঘটবে ডানপন্থীদের।

চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যেও পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে। গত ১৪ বছর ধরে দেশটিতে কনজারভেটিভ পার্টির শাসন চলছে। এবার তার পতনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক। তার একটি বড় কারণ বর্তমানের বিরোধী দল লেবার পার্টির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা। লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ মেনন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত ১৪ বছরে ব্রিটেনের বাসিন্দারা ব্রেক্সিট এবং করোনা মহামারির মতো বড় দু’টি বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। এখন সবচেয়ে বড় সংকট তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে সেটি হলো জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি। এসব ইস্যু এবারের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।’

নভেম্বরের ৫ তারিখ হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হবেন এবং আদালতের বাধা না থাকলে নির্বাচনে বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তার পূর্বসূরী এবং রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আনন্দ মেননের মতে, ২০২৪ সালের এসব নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলবে। ভয়েস অব আমেরিকাকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সব রাজনীতিই স্থানীয়— কিন্তু প্রত্যেক রাজনীতির একটি বৈশ্বিক ধারও রয়েছে। চলতি বছর যত নির্বাচন হবে, সেসবের একটি বড় অংশের ফলাফল নির্ধারিত হবে অভিবাসন ইস্যুটির ভিত্তিতে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে এই ইস্যু।’

 

সা/ই