১৯ বছর পর পেল রোগীর পেটে কাঁচি!

প্রকাশ : 2022-01-06 10:09:33১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

১৯ বছর পর পেল রোগীর পেটে কাঁচি!

মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে অপারেশন/শল্যচিকিৎসা হওয়া বাচেনা নামক এক রোগীর পেটে ১৯ বছর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক্স-রের মাধ্যমে ধরা পড়া কাঁচি রাখার ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী। বুধবার দুপুরের দিকে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

সিভিল সার্জন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ডাঃ মোঃ আশরাফুজ্জামান লিটন (সভাপতি, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা), ডাঃ মোঃ ফজলুর রহমান (জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জেনারেল হাসপাতাল, মেহেরপুর) ও ডাঃ আ খ ম ফয়সাল হারুন (মেডিকেল অফিসার সিভিল সার্জন অফিস, মেহেরপুর) এর নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির তিন দিনের কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গাংনীর রাজা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এদিকে রোগী বাচেনা খাতুনের পেটে থাকা কাঁচি অপারেশন/শল্যচিকিৎসা করার জন্য চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নেওয়া হলে ডায়াবেটিকসের মাত্রা বেশি থাকায় অপারেশন করা সম্ভব হয়নি বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। বাচেনা খাতুনের প্রতিবেশিরা জানায়, ডাক্তার যে কাজ করেছে তা ন্যাক্কার জনক। এ বিষয়ে গাংনী রাজা ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী ডাক্তার পারভিয়াস হোসেন রাজা তিনি বলেন, রোগীর পেটে অপারেশন করার সময় কাঁচি রাখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী বাচেনা খাতুনের পেটে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশনের দীর্ঘ ১৯ বছর পর কাঁচি পাওয়া গেছে। গত রবিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রেজা নাসিমের কাছে বাচেনা চিকিৎসা নিতে গেলে তিনি এক্স-রে রিপোর্ট করতে বলেন। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে অপারেশনের ইনস্ট্রুমেন্ট একটি কাঁচি দেখতে পায়। তাকে বাঁচাতে হলে আবারও অপারেশন করে কাঁচি বের করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। 

এবিষয়ে বাচেনা খাতুন জানান, ২০০২ সালের ২৫ মার্চ পিত্তথলিতে পাথর হওয়ায় তাকে অপারেশন করা হয় মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে। সেসময় অপারেশন করেন সার্জন ডাঃ মিজানুর রহমান। অপারেশনের ৩ দিন পর তাকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি যাওয়ার কিছুদিন পর শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। কিছুতেই রোগমুক্তি ঘটে না। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য হালের গরু ও ভিটে বিক্রি করেছেন। গেলো ১৯ বছর খেয়ে না খেয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আত্মীয় স্বজনসহ প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় বাচেনাকে বাঁচাতে রাজশাহীর ইউনাইটেড ক্লিনিকে ভর্তি করান। গত ২ জানুয়ারি সেখানে এক্স-রে করানোর পর পেটে কাঁচি দেখতে পায় চিকৎসকরা।

 বাচেনা খাতুনের বড় ছেলে মোমিনুল ইসলাম জানান, তাদের শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন। বর্তমানে দুবেলা দুমুঠো খাবার পর্যন্ত জোটে না। তিনি নতুন অপারেশনসহ সমুদয় ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন রাজার কাছ থেকে। অন্যথায় তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসর নিয়ে নিজ এলাকা সাতক্ষীরায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

অপারেশনের কথা স্বীকার করে রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ডাঃ মিজানুর রহমান অপারেশন করলেও তার দ্বায় চলে আসে ক্লিনিকের ওপর। সেহেতু অপারেশনের যাবতীয় ব্যয় ও ক্ষতিপূরণ তিনি দেবেন। তবে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় দোষ এড়ানো যায় না। যদিও ডাঃ মিজানুর রহমান বাচেনা খাতুনের অপারেশনটি করেছিলেন। তিনি ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন ও তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় এলাকায় চা ল্য’র সৃষ্টি হয়েছে।