হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দীপাবলি উংসব বর্জন সহ আট দফা দাবী
প্রকাশ : 2021-10-23 21:32:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
‘সাম্প্রদায়িক হামলাকারী’ ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ আট দফা দাবি জানিয়ে রাজধানীর শাহবাগে ‘গণঅনশন ও গণঅবস্থান’ কর্মসূচি শেষ করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দফা কর্মসূচিও।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অবস্থান নেয় বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। এক পর্যায়ে একটি অংশ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির পানি পান করিয়ে আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙান। পরে আয়োজকরা বিক্ষোভ মিছিল বের শাহবাগ মোড় ছেড়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে পদযাত্রা করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন অবরোধকারীরাও।
‘গণঅনশন ও গণঅবস্থান’ কর্মসূচি শেষ করার আগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিতে বলা হয়, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে ও এর পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ন্যুনতম ২০ লাখ টাকা প্রদান অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিতে হবে।
ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হামলাকারীদের রোধেও প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ।
দাবি করা হয়, বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসমুক্ষে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি তুলেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এছাড়াও ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়েছে।
মনীন্দ্র কুমার নাথ এসব দাবি পেশ করে তিন দফা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমাদের দাবিসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনায় রেখে প্রয়োজনে পরবর্তীতে এসব দাবি সমর্থনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে- 'চল চল ঢাকায় চল' শ্লোগানে ঢাকায় সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির প্রতিটি সংগঠন পৃথক পৃথকভাবে ও যৌথভাবে জনসংযোগ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি এগিয়ে নেবে। আগামী ৪ নভেম্বর, ২০২১-এ অনুষ্ঠিতব্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নিরবতা পালন এবং মন্দির বা মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার টাঙানোর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিবাদী কর্মসূচির সাথে সুগভীর সংহতি জ্ঞাপন করছি এবং এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সর্বস্তরের পূজার্থীদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি),বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।