স্বাস্থ্য কর্তারা মাঠে ঢুকে পড়ার পর স্থগিত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ!

প্রকাশ : 2021-09-06 07:50:27১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

স্বাস্থ্য কর্তারা মাঠে ঢুকে পড়ার পর স্থগিত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ!

ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে নামার আগেই আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় সন্দেহের তালিকায় ছিল। কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ভাঙার অভিযোগে তাদের নিয়ে আগে থেকেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলো ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

আজ (৬ সেপ্টেম্বর) মাঠে খেলতে নামার পর সন্দেহ সত্যি হলো। আর পাঁচ মিনিটের মাথায় নাটকীয়ভাবে স্থগিত করা হয়েছে ম্যাচটি।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য থেকে আসা লোকদের অবশ্যই ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল হোটেলে গিয়ে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের করোনা সংক্রান্ত ছাড়পত্র আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখবে।  

ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘ইউওএল’জানিয়েছে, যদি আর্জেন্টিনার প্রিমিয়ার লিগে খেলা ৪ খেলোয়াড় যদি কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারেন, তাহলে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের খেলতে দেওয়া হবে না। প্রিমিয়ার লিগে খেলার কারণে খোদ ব্রাজিলের ৯ জন খেলোয়াড় এবার বাছাইয়ের দুই ম্যাচ খেলতে পারছেন না। আরও কয়েকটি দলও একই কারণে মূল তারকা খেলোয়াড়দের ছাড়াই মাঠে নামছে। কারণ ইউরোপের কয়েকটি দেশের ক্লাবের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় খেলতে গেলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারা যদি খেলতে যেতেন, তাহলে ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো। ফলে ক্লাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ম্যাচে তাদের খেলাতে পারত না।

এদিকে খেলতে নেমে কিছু সময় না গড়াতেই মাঠে প্রবেশ করলো ব্রাজিলের স্বাস্থ্যকর্তারা। উদ্দেশ্য যারা কোয়ারেন্টাইন মানেনি তাদের আটক করা। ম্যাচের পাঁচ মিনিটের মাথায় সাইড লাইনের পাশে অচেনা একজনকে দেখে আর্জেন্টিনার দুই খেলোয়াড় নিকোলাস ওতামেন্দি ও মার্কোস আকুনা জিজ্ঞেস করলেন তিনি কে? সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘিরে ধরলেন অনেকেই।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি জানিয়েছে, ম্যাচ অফিসিয়ালদের বাইরের উপস্থিত ব্যক্তিরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ইংল্যান্ড থেকে আসা আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতে এসেছেন তারা। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মাঠ ছেড়ে ড্রেসিং রুমে চলে যান আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা।

সন্দেহের তালিকায় থাকা চার খেলোয়াড়ের তিন জন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস, ডিফেন্ডার ক্রিস্তিয়ান রোমেরো ও মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো ছিলেন সফরকারীদের শুরুর একাদশে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কোয়ারেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করে মাঠে ঢুকে পড়ায় তাদের আটক করতে আসে স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনকি সাদা পোশাকধারী পুলিশও সেখানে ছিল।

একপর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘিরে ধরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। তখন নেইমার ও মেসির সাথে কর্মকর্তাদের কথা হয়। তাতেও সমাধান না হওয়ায় আলেবেসিলেস্তাদের কোচ লিওনেল স্কালোনি ও দলটির অধিনায়ক লিওনেল মেসি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বুঝায়। কিন্তু এতে লাভ না হওয়ায় আর্জেন্টাইনদের ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এক বিবৃতিতে এর আগে ব্রাজিলিয়ান স্বাস্থ্য বিষয়ক এজেন্সি ‘আনভিসা’ জানায়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অ-ব্রাজিলিয়ানদের জন্য ব্রিটেন, উত্তর আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ভারত থেকে ব্রাজিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। যাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাদের অবশ্যই (ব্রাজিলে) আসার সময় কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে এবং ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। যারা কারাকাস ভেনেজুয়েলা থেকে গুয়ারুলোসের একটি ফ্লাইটে ব্রাজিলে এসেছে, সেই খেলোয়াড়রাই প্রশ্নের মুখে রয়েছে। বিধিনিষেধের আওতায় থাকা চারটি দেশ থেকে আসা এই খেলোয়াড়রা কোথাও শেষ ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেনি। ’

ব্রাজিলে করোনাভাইরাস মহামারি ব্যাপকারে ছড়ানোয় দেশটির সরকার এ ব্যাপারে খুবই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে নিয়ম ভাঙে আর্জেন্টাইন চার ফুটবলার। তাই তাদের বিরুদ্ধে পৃথক বিবৃতিতে সাও পাওলো স্টেট হেলথ সেক্রেটারিয়েটের পক্ষ থেকে ‘একটি এপিডেমিওলজিক্যাল এবং স্যানিটারি তদন্ত শুরুর’কথা বলা হয়েছিল।

তাছাড়া অভিযুক্ত চার খেলোয়াড় যদি কোয়ারেন্টিন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার নথিপত্র দেখাতে না পারে, তাহলে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের অংশগ্রহণ আটকে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ স্থগিতই হলো। তবে কখন এ ম্যাচ মাঠে গড়াবে সে সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।