সেলাই জননী ও দরজি কন্যা--৩  

প্রকাশ : 2021-08-29 10:45:43১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সেলাই জননী ও দরজি কন্যা--৩  

ঝর্না রহমান
 ----------------

 
গৃহিণী পর্ব

 
কৈশোর না পেরুতেই, ১৯৭৩ সনের ১৮ অক্টোবর বিয়ে হয়ে গেল আমার। বিয়ের ঘটক ছিলেন আমার কাকা। তিনি ছিলেন আমার স্বামীর বন্ধু। বিয়ের আগে পাত্রের কাছে ভাতিজীর গুণপনা যতদূর সম্ভব ব্যাখ্যা করেছেন। সেলাইয়ে তখন আমি রীতিমত দিদিমনি! কাজেই সেই সুবাদে আমার বর মহাশয় বিয়ের শাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে হবু বধূকে বললেন, শাড়ির পিস কেটে নিজের ব্লাউজখানা মনের মত করে নিজেই বানিয়ে নাও বাপু! রক্তজবার মত লাল রঙের কটন বেনারশি ছিল আমার বিয়ের শাড়ি। তাতে হলুদ আর নীল সুতোর সুন্দর কারুকাজ। আমি তখন মহাখালী ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত আদর্শ গার্লস হাই স্কুলে (বর্তমানে সেটি টিএন্ডটি স্কুল এন্ড কলেজ) ক্লাস টেনে পড়ি। রীতিমত বুক ওয়র্ম। ক্লাসের বইয়ের বাইরে যা পাই তাই পড়ি। পড়ে ফেলেছি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, নিমাই ভট্টাচার্য এদের বইয়ের প্রায় সমগ্র। রঙীন কল্পনা আর শিরশিরে রোমাঞ্চভরা মন, সামান্য অনুভূতির ছোঁয়াতেই কেঁপে ওঠে। কাজেই স্কুল-পড়ুয়া চৌদ্দ বছরের এক কিশোরীর এই বাল্যবিয়ে ভালো হচ্ছে না মন্দ হচ্ছে এ চিন্তার খ্যাতাপুড়ি করে বরঞ্চ বিয়ে যখন হয়েই যাচ্ছে তা নিয়ে কল্পনার পাখায় উড়ে বেড়ানোই আনন্দের মনে হল। সুতরাং স্কুল থেকে বাসায় ফিরে খানিক লজ্জা খানিক শিহরন আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মত রোমাঞ্চের ধাক্কা খেতে খেতে আমি নিজের বিয়ের ব্লাউজ বানাই।
  
 ঝকঝকে লাল সুতো থেকে রেশমি শিহরন বেরিয়ে এসে আমাকে গুটিপোকার মত বেঁধে ফেলে। আমি সুতো ছাড়াই, আবার জড়াই! নির্দিষ্ট দিনে আমার বিয়ে হয়। তখনকার দিনে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়েতে ‘মেহেদি সন্ধ্যা’ বলে কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। বিয়ের আগের দিন আমার হাতে মেহেদি দিতে বাসায় এলো আমার স্কুল বান্ধবীরা। ওরা এসেই আম্মাকে বলে, খালাম্মা ওকে একটা নতুন শাড়ি পরিয়ে দেন। কিন্তু নতুন শাড়ি তো নেই! আম্মার মন খুঁতখুঁত! মেয়েটা বিয়ের মেন্দি দেবে পুরোনো জামা গায়ে দিয়ে? দিন কয়েক আগেই আমি সদ্য শেখা হাল ফ্যাশানের গলার ডিজাইনে একটা কামিজ বানিয়েছিলাম। জামাটা তখনও পরা হয়নি। সুতরাং আমার মেহেদি সন্ধ্যা হলো নিজের হাতে বানানো সেই কামিজ পরে। কামিজের রঙ হালকা গোলাপি। একটু মনমরা রঙ। তাতে কী? বিয়ের কনের হাতের গোলাপি পাতায় যেই না মেহেদি লাগলো, অমনি সে তো নিজেই নার্গিস-লালা গোলাপ-আঙুরলতার বাগানে ঢুকে গেল! আর বিয়ের দিন সেলাই জননীর দরজি কন্যাটি নিজের হাতে বানানো ব্লাউজ পরে সুড়সুড় করে বরের পাশে গিয়ে বসলো! (বলিহারি যাই নিলাজ মেয়ে!)
শ্বশুর বাড়ি গিয়েও আমার হাতের পাশে আপন আর পাড়াতুতো ননদদের জামার কাপড়ের স্তূপ গড়ে উঠতে লাগলো। শাশুড়ি আম্মা পুত্রবধূর গুণপনা দেখানোর জন্য আশেপাশের শাশুড়ি ননদদেরও ডেকে আনলেন। তাঁরা কেউ এলেন ব্লাউ‌জের ছিট কাপড় নিয়ে, কেউ এলেন সালোয়ার কামিজের পিস নিয়ে। কিন্তু সমস্যা হলো আমার সাথে আমার সেলাই মেশিন শ্বশুর বাড়িতে আসেনি! কাজেই হস্তজোড়াই সম্বল। কিন্তু তাতে তো দ্রুত কাজ হয় না! শাশুড়ি খোঁজ দিলেন, প্রতিবেশি এক ফরেস্ট অফিসারের বাড়িতে সেলাই মেশিন আছে। তবে অন্যের বাড়ি গিয়ে জামাকাপড় সেলাই করার জন্য মেশিন নিয়ে বসতে লজ্জা লাগে। আবার মেশিনটাকে দু একদিনের জন্য ধার চাইতেও লজ্জা লাগে। অগত্যা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে পড়শিবাড়িতে বসেই জামাগুলো বানিয়ে আনি।
 
১৯৭৬ থেকে ১৯৮১-র অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর আমি মানিকগঞ্জে আমার শ্বশুর বাড়িতে (পশ্চিম দাশরা) থাকলাম। মানিকগঞ্জ থেকে মাঝে মাঝে ঢাকায় আমাদের বাসায় যখন যেতাম, তখন একবারে মেশিন দিয়ে সেলাই করে আনতাম অনেক জামাকাপড়। ১৯৭৫-এ আমার বড় ছেলের জন্ম। জন্মের পর থেকে ছয়সাত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলের সব শার্ট প্যান্ট, হাল ফ্যাশানের বেবি শার্ট, র‌্যাম্পার সব আমি বানিয়েছি। মনের মাধুরী মিশিয়ে ছেলের জামায়ও এমব্রয়ডারি করেছি। মানিকগঞ্জে থাকাকালীন প্রথম ঈদে বরের জন্য তৈরি পাঞ্জাবীতে নিখুঁত ডিজাইনে এমব্রয়ডারি করলাম। বর মহাশয় প্রশংসার ক্ষেত্রে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেন। এক স্লাইস মৃদু হাসির সাথে দু গোটা ভালো কথার সুপুরি মুখে ফেলে পাঞ্জাবী পরলেন। আমি উত্তর দক্ষিণ পুব পশ্চিম থেকে নতুন পাঞ্জাবীপরা নটোবরের মত বরকে দেখি! কিসের বর! আমি দেখি নিজের সেলাইয়ের কারিশমা! দেখে দেখে নিজেকেই বাহবা দিই। বেড়ে বানিয়েছে হে! একেবারে দোকান ফেল!
  
আমার ভাইবোনেরা যে আমার হাতে তৈরি কত নামের কত ডিজাইনের জামাকাপড় পরেছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। স্বাধীনতার পর পর ফ্যাশন এলো ছেলেদের বেলবটম প্যান্ট আর চওড়া কলারের শার্ট, তার দুদিকে পকেট। মেয়েদের জন্য ছয়ছাট কামিজ আর বেলবটম পাজামা। বিয়ের আগে এসব ডিজাইন আমার বানানো সারা। পঁচাত্তর ছিয়াত্তরের দিকে এলো মেয়েদের নতুন এক ফ্যাশনের পোশাক। মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় বাপের বাড়ি গেছি, আমার বোনরা বললো এবার ওদের ‘ল্যাঙ্গা’ বানিয়ে দিতে হবে? ল্যাঙ্গা? সে আবার কী বস্তু? পরে জানলাম সে বস্তুর নাম ল্যাঙ্গা নয় লেহেঙ্গা। নামটা অদ্ভুত কিন্তু পোশাকটা সুন্দর। লেহেঙ্গার সাথে থাকবে টপস। আমরা নাইনটেন পর্যন্ত ফ্রকই পরেছি। কোমরে কুচি দেয়া ঘেরওয়ালা ফ্রক আর পায়ের কাছে ইঞ্চিখানেক শক্ত বর্ডারসহ ঢোলা সালোয়ার। কামিজের চল ছিল, তবে খুব একটা পরতাম না। আমাদের স্কুল ড্রেসও ছিল ফ্রক। কলেজে ওঠার পরে দেখেছি মেয়েরা সালোয়ার কামিজ পরে। তবে স্কুলজীবনেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে আমি শাড়ি পরেই কলেজ করতাম। কিন্তু আমাদের অনেক সহপাঠি, তাদের কারুরই বিয়ে হয়নি, ওরা শাড়ি পরে কলেজে আসতো। মনে করা হতো কলেজ মানেই শাড়িতে উত্তরণ! যাই হোক, সেই টপস লেহেঙ্গার নাম শুনে অবাক হলেও বানাতে মোটেই বেগ পেতে হয় না আমাকে। কাজেই বোনদের বানিয়ে দিলাম নানা ঢঙের লেহেঙ্গা। তারপর সেই লেহেঙ্গা পরে আমরাও স্টুডিওতে গিয়ে নানা ঢং করে ছবি তুলি।
 
 আমার ভাইবোনদের মধ্যে আমার বানানো জামা সবচেয়ে বেশি পরেছে আমার কনিষ্ঠ বোন সোমা। সোমা আমার মায়ের সর্বশেষ, নয় নম্বর সন্তান। আমার বিয়ের পরে ওর জন্ম (১৯৭৪) বলে আম্মা লজ্জায় ওকে হাসপাতালে থাকতেই পালক দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সোমাকে মাতৃস্নে‌হে বুকে আগলে নিয়ে আমার আম্মাকে আমি লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম। জন্মের পর সোমাকে দেখতে যেদিন হাসপাতালে গেলাম। তার আগে মেশিনে বসে একবারে আমি ছয়টি জামা বানিয়ে নিয়ে গেছি। সেই যে জন্মের পর থেকে সোমা আমার বানানো জামা গায়ে দেয়া শুরু করেছিল তা চলেছিল ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত।
 
আমার মেয়ে ছিল না। অথচ মেয়েদের জামাতেই নানারকম ডিজাইন আর এমব্রয়ডারি করা যায়। সোমাকে দিয়ে আমি মেয়ের শখ মিটিয়েছি। পাঁচ বছর পর্যন্ত সোমার প্রতি জন্মদিনে আমি এক-একটা চোখ ধাঁধানো ফ্যাশনের জামা তৈরি করে সেটা পরিয়ে ছবি তুলেছি। ১৯৮১ সনে আমার দ্বিতীয় ছেলে সুহৃদের জন্ম হলো। সুহৃদও কয়েকবছর আমার হাতে তৈরি জামা পরেছে। সুহৃদ দেখতে খুব সুন্দর ছিল। শখ করে তাই ওকে বানিয়ে দিতাম বেবি ফ্রক। সাদা একটা বেবি ফ্রক বানিয়ে ছ মাসের শিশু সুহৃদকে পরালে ওর ওপর থেকে চোখ ফেরানো যেত না। মনে হত একটা চাঁদের পুতুল! আর সে জামা পরানো দেখলেই পাশের বাসার কিশোর মোশাররফ ছোঁ মেরে ওকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়ে পালাতো। আম্মা কয়েক দিন এটা দেখে বললেন, তুই বাবুকে আর এ জামা পরাস না। নজর লাগবে।
তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পোস্টমাস্টার্স কোয়ার্টারে আম্মার কাছে থাকি। সেখান থেকে বহুৎ হুজ্জোত করে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া আসা করি। দুই ছেলেকে আম্মার কোলে ফেলে রেখে দিনমানের জন্য চলে যাই। আমার সহপাঠি বাকিউল্লাহ (মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের প্রাক্তন বাংলা শিক্ষক, বর্তমানে নূরুল আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল) খুব সহযোগী বন্ধু। কখনো কখনো ইউনিভার্সিটি থেকে বাকিউল্লাহ আমার সাথে ল²ীনারায়ণে আসে। একদিন বাকিউল্লাহ আব্দার করে বসলো তাকে একখানা শার্ট বানিয়ে দিতে হবে। শুধু আব্দার নয়, কাপড়ও কিনে নিয়ে এসেছে। নিজের ভাইবোন সোয়ামি পুত্তুরের জন্য জামাকাপড় বানাই, সেখানে ভুলভাল বা দু একটু মিসফিট হলেও কিছু যায় আসে না, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্রের জন্য শার্ট বানাতে আমি একটু দোনোমোনো করি। বাকিকে বলি আমার বানানো শার্ট কি তুমি পরবে? ও বলে, পরবো বলেই তো বানাতে দিলাম! কী আর করা! পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে! সুতরাং যথেষ্ট যত্ন করে বানালাম বাকিউল্লাহর জন্য শার্ট। সেই শার্টের নিখুঁত সেলাই দেখে তো আমিই মহা মুগ্ধ। বাকি তো বাকিই!
 
১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করে বেরিয়েই মে মাসে বিডিআর-এ রাইফেলস পাবলিক কলেজে চাকরিতে ঢুকে গেলাম। একদিকে সংসার সন্তান আর একদিকে চাকরি ~ মহা ব্যস্ততার মধ্যে সেঁধিয়ে গেল আমার দিনযাপন। ধীরে ধীরে আমার সেলাই কমে এলো। আশির দশকের পরে দেশেও গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার ঘটলো। নানা ডিজাইনের তৈরি পোশাকে দোকানগুলো ঝলমল করতে লাগলো। আমার সাড়ে নয় বছর বয়সে পাওয়া সেই অপূর্ব উপহার সেলাই মেশিনটিও মাঝে মাঝেই বিকল হতে লাগলো। সহজে সেটি আর মেরামতও করতে দেয়া হয় না। সময় বয়ে যেতে লাগলো আর জং ধরতে লাগলো মেশিনের কলকব্জায়। জং ধরতে লাগলো আমার দেহের কলকব্জায়ও। আর্থরাইটিস স্পন্ডিলাইটিস অস্টিওপোরোসিস সব কলকব্জাধ্বংসাত্মক ব্যাধি এসে আমার দেহখানায় মৌরসীপাট্টা গেড়ে বসেছে আজ প্রায় বিশ বছর।
 
কন্যাজীবন পেরিয়ে বধূ জীবন, তিন পুত্রের জননী, গৃহিণী...এক এক করে জীবনের পর্যায়গুলো পার হতে থাকি। ২০০৬-এ পিতামহীর জীবনও শুরু হল নাতি উষ্ণীষকে দিয়ে। ২০১২ সালে আমাদের সংসারে এলো নাতনী নীরাজনা। বহুদিন পরে আমার পরিবারে এলো মেয়ে। ততদিনে সেলাই মেশিনে জং ধরেছে, আমার দেহের ভেতরে হাড় মুড়মুড়ি ব্যারামের খামার, তাই বলে নাতনী তার দরজি দাদির আশীর্বাদ পাবে না? তার হাত জোড়া তো ঠিক আছে! আবার সেই প্রথম জীবনের মত হাতে সেলাই করে নাতনীর প্রথম জন্মদিনে তৈরি করলাম একখানা জামা। এখন হাল ফ্যাশানের যুগ। অনলাইনে শপিং লিংকে খোঁচা মারলেই লাইন ধরে স্ক্রল করতে থাকে হাজার ডিজাইনের পোশাক! সবার আদরের নীরাজনার কাপড়চোপড়ের অন্ত নেই। এক-একটা ঈদে পঁচিশ ত্রিশ সেট জামা কাপড়! কত তার কাপড়ের বাহার, কত তার নকশা! 
 
২০২০-এ করোনা এসে বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে দিল। সংক্রমণের ভয়ে মাসের পর মাস মানুষ গৃহবন্দী। এর মধ্যে ২৩ মে-‌তে চলে এলো নীরাজনার ৯ম জন্মদিন। জন্মদিনে কী দেব উপহার! কিছু কেনার জন্য বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। অনলাইনে জিনিসপত্র বাসায় ঢুকলেও ভয়, তার গায়ে চেপে ভাইরাস ঢুকে পড়লো কি না। আমার মায়ের দরজি কন্যার আঙুলগুলো ফিসফাস করে। নখের ভেতর রক্তের নড়াচড়া। চামড়ার নিচে অনুভূতি আবার সক্রিয় হয়ে উঠলো। খালি হাতে সেলাই মেশিন ছাড়া নাতনীর জন্য তৈরি করলাম পোশাক। এখন সুচে সুতা ভরতে পারি না। সুতা ঢোকাবার একখানা ফাঁদ নিয়ে বসি। ঘাড়ে ব্যথার জন্য ঝুঁকতে পারি না। পিঠের নিচে কুশন, ঘাড়ে নেক পিলো, কোলের ওপর বোর্ড, তার ওপরে কাপড় রেখে চলে হাত সেলাই। জন্মদিনে নীরাজনা সেই পোশাক পেয়ে খুব খুশি হয়েছে! কিন্তু আমি জানি, রাজকন্যা নীরাজনার অসংখ্য মডার্ন ফ্যাশনেবল পোশাকের ভিড়ে ব্যাকডেটেড দাদির স্নে‌হের সুতোয় সেলাই করা এই হাতুড়ে পোশাক দুএকদিন পরার পর হয় তো কোথায় রাখবে, তা মনেই থাকবে না। কিন্তু আমার মনে থাকবে, একষট্টি বছর বয়সে অণুজীবকণ্টকিত বিপর্যস্ত পৃথিবীতে, ঘরের কোণে বসে, নাতনীর জন্য শুদ্ধতম মমতার সুতোয় বোনা একটি রঙিন পোশাক তৈরি করতে গিয়ে আমি ঢেলে দিয়েছিলাম আমার সমস্ত ভালোবাসার সৌরভ আর নান্দনিক ভাবনার কোমল রঙ। এ পোশাক কোনোদিন পুরোনো হবে না।